Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, ১০ গ্রাম প্লাবিত

ফেনী জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৮:০৯ পিএম

ফেনীর ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল রাত থেকে একটানা বৃষ্টি হলে নদীতে পানি আরও ফুলে ফুঁসে উঠে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সকাল থেকে মুহুরী নদীতে পানি বিপদসীমার ১৪২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে ফেনী পাউবোর সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়। রাতে নতুন করে ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের জয়পুরে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের আরও ১টি অংশে ভাঙন দেখা দেয়। আজ সকাল ১০টার দিকে পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়া গ্রামে কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধের একটি অংশ ভেঙে যায়। বর্তমানে দুই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩টি ভাঙন স্থান দিয়ে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বিস্তীর্ণ এলাকা।

এ পর্যন্ত বন্যায় ১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে। পরশুরাম-ফুলগাজীর আঞ্চলিক সড়ক ডুবে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে মানুষের ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট,মসজিদ,মক্তব,ফল ফসলি জমি, বাগান,ক্ষেত খামার ও পুকুরে চাষের মাছ। পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন কিসমত ঘনিয়ামোড়া, পূর্ব ঘনিয়ামোড়া,পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া, জয়পুর, উত্তর দৌলতপুর, সাহা পাড়া, দুর্গাপুর, রতনপুর ও সাতকুচিয়া সহ ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বন্যায় কবলিত মানুষজনকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। ঘরবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় অনেক পরিবারের মানুষজনকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। বন্যা দুর্গত এলাকায় এখনও পর্যন্ত কোন খাদ্য সহায়তা পৌঁছেনি বলে জানা গেছে। ওইসব এলাকায় বন্যার পানিতে টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বন্যায় ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় গত দুইদিন যাবত রান্না করে খেতে পারেনি। ফুলগাজী বাজার থেকে কলা মুড়ি চিরা খেয়ে আছেন অনেকে,কেউ এখনও পর্যন্ত খবর রাখেনি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তাদেরকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। অনেক দু:খ কষ্ট সহ্য করতে হয়। তারা শান্তিতে বসবাস করতে চায়। তারা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে মুহুরী,কহুয়া ও সিলোনীয়া সহ এই তিন নদীর পুনরায় টেঁকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।

এদিকে জয়পুরের পশ্চিমে মিঝিবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধটি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোন মুহূর্তে ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর বাঁধের প্রায় ১২০ মিটারেরও বেশি অংশ ভেঙে গেছে। সেখানে মিঝিবাড়ি, বদিবাড়ি, মন্দার বাড়ি, অহিদুর রহমানের বাড়ি ও ফকির বাড়ির প্রায় ৭০০ পরিবারের মানুষ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।

সেখানে বসবাসরত মো: মোস্তফা, এয়াকুব ও মো: রুস্তম বলেন, বিগত ১ বছর যাবত সেখানে নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। তারা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে এ বিষয়ে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ভাঙন রোধে কেউ এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় এলাকাবাসী মিলে গত ৩-৪ দিন আগ থেকে চাঁদা তুলে ভাঙন স্থানে ৪শ মাটি ভর্তি ব্যাগ, গাছের খুঁটি ও রশি দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখনও পর্যন্ত ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙন মেরামতে কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি তারা।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সার্ভে) আরিফুল ইসলাম জানান, গতকাল থেকে মুহুরী ও কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধের ৩টি স্থানে ভেঙে যায় এবং ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি না হলে নদীর পানি কমে যাবে। তবে নদীতে পানি এখনও বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিনি জানান।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম বলেন, মুহুরী নদীর ভাঙনে ৮-৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় দুর্গতের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদেরকে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য,গত পরশু রাত থেকে ভারতের উজানে অতিবৃষ্টি দেখা দিলে পাহাড়ি ঢল বানের পানি মুহুরী নদীতে প্রবেশ করতে থাকে। গতকাল ভোর থেকে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে নদীর পানি ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের জয়পুর এলাকায় পূর্বের বেড়িবাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে ডুকে পড়ে ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেনী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ