Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

২০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

এস আলম সুগার ৩০ দিনের মধ্যে জবাব চেয়েছে শুল্ক বিভাগ অনিয়মের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয় : এ কে এম মাহবুবুর রহমান কাগজপত্র পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে : সুব্রত কুমার ভৌমিক

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডা. লিমিটেডকে ৩০ দিনের মধ্যে সরকারি বকেয়া রাজস্ব ১৯৮ কোটি ৭০ লাখ ৮১ হাজার টাকা পরিশোধের নোটিশ জারি করেছে কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেট, কমিশনার চট্টগ্রাম। গত ২ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে এই নোটিশ জারি করা হয়। এর আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজস্ব ফাঁকির দায়ে গত ৩১ আগস্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-৪৫/২০২১। কাস্টম আইন ১৯৬৯ এর সেকশন ১১১ ধারায় দাবি নামাসহ কারণ দর্শানোর এই নোটিশ জারি করা হয়েছে। পত্র পাওয়ার পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব ও দাবিকৃত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কোম্পানির কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে- ‘শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল ইন টু বন্ড করে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শুষ্ক কর পরিশোধপূর্বক এক্স-বন্ড সম্পন্ন না করে বন্ড গুদাম হতে অবৈধভাবে অপসারণের প্রমাণ পেয়েছে কাস্টম দফতর’।

জানতে চাইলে কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, যত বড় প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, অনিয়মের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। তথ্য প্রমাণাদিসহ অনিয়ম ধরা পড়েছে। আশা করি, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নিবে এস আলম রিফাউন্ড সুগার ইন্ডা. লি.। তবে এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) সুব্রত কুমার ভৌমিক ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত আছে। তাছাড়া অভিযোগের কাগজপত্র এখনো হাতে পাইনি। কাগজপত্র পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, গত ১৬ আগস্ট বিভিন্ন সময়ে বন্ড সুবিধায় ২৭টি বি/ই এর মাধ্যমে আমদানিকৃত সর্বমোট ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭ দশমিক ৭৩০ মেট্রিক টন কাঁচামালের বন্ডিং মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করে আবেদন করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে চিনির বাজারে মন্দাভাব থাকায় র-সুগার এর পর্যাপ্ত ব্যবহার না হওয়ায় উৎপাদিত মালামাল বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় বিভিন্ন সময়ে ২৭টি বি/ই এর মাধ্যমে বন্ডের আওতায় আমদানিকৃত কাঁচামালের বন্ডিং মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সময় কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কাঁচামালের বন্ডিং মেয়াদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

এস আলম রিফাউন্ড সুগার ইন্ডা. লি.-এর দাখিলকৃত আবেদনপত্রটি বিবেচনার লক্ষ্যে ২৭ টি বি/ই এর মাধ্যমে আমদানিকৃত সর্বমোট ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭ দশমিক ৭৩০ মেট্রিক টন কাঁচামালের মজুদ যাচাইয়ে গত ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্ধারিত বিধি মোতাবেক ইন-টু-বন্ড গুদামে সংরক্ষণ করেনি। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ইন-টু-বন্ড গুদামের মজুদ যাচাই করা হয়। যাচাইকালে এস আলম রিফাউন্ড সুগার ইন্ডা. লি.-এর প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার জালাল উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী ও ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া মো. রিয়াদ সার্বিক সহযোগিতা করে এবং সরেজমিনে প্রাপ্ত কাঁচামালের প্রতিবেদনে উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি যৌথ স্বাক্ষর করেন।
পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শুষ্ক কর পরিশোধপূর্বক এক্স বন্ড সম্পন্ন না করে বন্ড গুদাম থেকে উল্লিখিত কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করেছে। ২৭টি বি/ই এর মাধ্যমে আমদানিকৃত সর্বমোট ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭ দশমিক ৭৩০ মেট্রিক টন কাঁচামালের মধ্যে বন্ড গুদাম ৩২ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন কাঁচামাল বন্ড গুদামে দেখা যায়। অবশিষ্ট কাঁচামাল অবৈধভাবে বন্ড গুদাম হতে অপসারণ করেকরা হয়। যার শুল্কায়ণযোগ্য মূল্য ৩২৩ কোটি ৯৯ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৩ দশমকি ৭৪ টাকা এবং শুল্ক করাদির পরিমাণ ১৯৮ কোটি ৭০ লাখ ৮১ হাজার ৩৫ দশমিক ৬৫১ টাকা।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে- প্রতিষ্ঠান থেকে কাস্টমস্ আইন ১৯৬৯-এর সেকশন ১৩, ৩২, ৯৭ এবং ১১১ এবং একই আইনের সেকশন ১৩ এর সঙ্গে পঠিতব্য বন্ডেড ওয়্যার হাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধিগুলো এবং লাইসেন্সি থেকে পালনীয় শর্তাবলির শর্তগুলোর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করায় কাস্টমস আইন ১৯৬৯-এর সেকশন ১১১ মোতাবেক দাবিনামা জারিযোগ্য ও একই আইনের ১৫৬ (১) এর টেবিলের দফা ১৪, ১৫ এ, ৬২ এবং ৯০ এবং একই আইনের সেকশন-১৩ এ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে কেন লাইসেন্স বাতিল, অর্থদন্ড আরোপসহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না তার কারণ ব্যাখ্যা সম্বলিত লিখিত জবাব এ চিঠি প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের দফতরে দাখিল করার জন্য বলা হয়। একই সঙ্গে এস আলম রিফাউন্ড সুগার ইন্ডা. লি. ব্যক্তিগত শুনানি প্রদানে আগ্রহী হলে তা লিখিত আকারে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব ও দাবিকৃত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একতরফাভাবে পরবর্তী সময়ে আইনানুগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজস্ব ফাঁকি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ