Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাফটার সুবিধা নিয়ে বিশাল অংকের রাজস্ব ফাঁকি

প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বেশকিছু আমদানি কারক এশিয়া ফ্রি ট্রেড এরিয়া (সাফটা) চুক্তির শুল্ক সুবিধা নিয়ে বিশাল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স¤প্রতি ভারত থেকে আমদানি করা একটি চালানে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় অভিযুক্তের কাছ থেকে জরিমানাসহ ১ কোটি ৮১ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এছাড়া এ চুক্তির সুবিধা নিয়ে অতীতে যেসব চালান আমদানি হয়েছে, তার নথি আবার নিরীক্ষাসহ নতুন চালানের ক্ষেত্রে সতর্ক নজরদারি শুরু করেছে কাস্টমস।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার খাদিজা পারভীন সুমী জানান, সাফটা চুক্তির বাণিজ্যিক সুবিধার কারণে তালিকাভুক্ত নির্দিষ্ট পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। স¤প্রতি এ রকমই একটি চালানে বেন্ডার আমদানি করে ঢাকা বনানী এলাকার ‘আইপিই টেকনোলজিস লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পণ্যটির আলাদা পরিচিতি নম্বর (এইচএস কোড) থাকলেও তা উল্লেখ না করে ভিন্ন এইচএস কোডে সাফটার শুল্ক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে প্রতিষ্ঠানটি। পণ্য খালাসের সময় কায়িক পরীক্ষায় এ অনিয়ম ধরা পড়লে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানাসহ মোট ১ কোটি ৮১ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়। সাফটা চুক্তির সুবিধার অপব্যবহার করে আগে এ ধরনের কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে আমদানি নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আমদানি নথি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে ভারতের ‘ফিলিপস ইন্ডিয়া লিমিটেডে’র কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ২৫৫ বক্স ফিলিপস ব্র্যান্ডের বেন্ডার আমদানি করে ঢাকাভিত্তিক আইপিই টেকনোলজিস। সাফটা চুক্তির সুবিধা নিয়ে ২৫ শতাংশ শুল্কযোগ্য চালানটি ৫ শতাংশ শুল্কায়নে খালাস করতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে আগামপত্র (বি/ই-৫৮১০৩) জমা দেয়া হয় গত ১৪ জানুয়ারি। ঘোষিত পণ্যের এইচএস কোড ৮৫০৯৪০০০। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে চালান খালাসের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ভাÐার শরিফ ট্রেডিং করপোরেশন। এ নিয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকে খোলা এলসি নম্বর ০০০০২৩৬১১৫০১০১৮৬। খালাসের সময় কায়িক পরীক্ষা শেষে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা দেখতে পান, বেন্ডারের আলাদা এইচএস কোড থাকলেও তা আনা হয়েছে সাফটার শুল্ক সুবিধাযুক্ত ‘গৃহসামগ্রী পণ্যে’র এইচএস কোড দিয়ে।
এ অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ভাÐার শরিফ ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চালানটিতে আমদানি করা ফিলিপস ব্র্যান্ডের যে বেন্ডার আনা হয়েছে, তা গৃহসামগ্রী পণ্য হিসেবে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। পণ্যটির যে আলাদা একটি এইচএস কোড রয়েছে, তা না জানার কারণে এমন ভুল হয়েছে। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার পর কাস্টমস কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী রাজস্ব পরিশোধ করা হয়েছে।’
সাফটা চুক্তি অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বেশকিছু পণ্য বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে শূন্য থেকে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া এ চুক্তিতে সদস্য দেশগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকাকে উন্নয়নশীল দেশ এবং বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চুক্তি বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় শুরু থেকেই এ শুল্কায়ননীতি কার্যকরের কথা বলা হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় ধাপে বাংলাদেশসহ চারটি স্বল্পোন্নত দেশকে ২০১৭ সালের মধ্যে এ শুল্কনীতি বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার এহতেশামুল হক জানান, সাফটা চুক্তিঘোষিত শুল্কায়ন সুবিধার অপব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি আমরাতো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। এ সুবিধার অপব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকির বেশকিছু অভিযোগ এরই মধ্যে আমাদের হাতে এসেছে। এর আগে চুক্তিটির সুবিধা নিয়ে যেসব চালান খালাস হয়েছে, তার নথিপত্র সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে জরিমানাসহ ফাঁকি দেয়া রাজস্ব আদায় করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাফটার সুবিধা নিয়ে বিশাল অংকের রাজস্ব ফাঁকি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ