গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
সায়ীদ আবদুল মালিক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন ১১ মার্কেটে ও ভবনে প্রায় তিন হাজার অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে। মার্কেটের গাড়ি পার্কিং স্থান, টয়লেট, সিঁড়ি, ফুটপাথ, সড়কসহ বিভিন্ন স্থান দখল করে এসব দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। মার্কেটগুলোর সমিতির নেতা ও ডিএসসিসির এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বছরের পর বছর ধরে এ দোকানগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি হাইকোর্টের এক রায়ের পর সিটি কর্পোরেশন এসব দোকান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব শিগগিরই অভিযান চালিয়ে এগুলো উচ্ছেদ করা হবে বলে ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
যে ১১টি মাকের্টে অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে তার মধ্যে গুলিস্তানের পুরাতন বাজার হকার্স মার্কেট (পোড়া মার্কেট) অন্যতম। এই মার্কেটের নিচ তলায় যেখানে কার পার্কিং রাখার কথা সেখানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ৩২৭টি দোকান। নকশা পরিবর্তন করে কর্পোরেশনের অসাধু কর্মকর্তারা এ মার্কেটটিতে স্থায়ীভাবে দোকান বরাদ্দ দেয়। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তা আবার বাতিল করা হয়। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় উচ্ছেদেরও। কিন্তু দীর্ঘদিন উচ্ছেদ না হওয়ায় বৈধতা নিয়ে দেয়ার নামে বরাদ্দ গ্রহিতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ নিয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ভবনটি দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হওয়ার পর অবৈধভাবে নিচতলার কার পার্কিংয়ের স্থান বরাদ্দ দেয় সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ থেকে। কিন্তু বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তা বাতিল করা হয়। সম্প্রতি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হলে তা বৈধ করে দেয়ার কথা বলে মেয়রের নাম ভাঙিয়ে প্রতি দোকান থেকে আড়াই লাখ টাকা করে নেয়া হয়। মার্কেটের কথিত নেতা মনোয়ার হোসেন মনু, হাসান ও আবু হান্নান সিদ্দিকীসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব টাকা উত্তোলন করেন।
ওই মার্কেটেই মনোয়ার হোসেন মনুর কার্যালয়। কার্যালয়ে বসেই এসব টাকা আদায় করছেন তিনি। তার কার্যালয়ের এক কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মনোয়ার হোসেন মনু সিটি কর্পোরেশন থেকে ওই দোকানগুলো স্থায়ীভাবে বরাদ্দ নিয়ে দেয়ার জন্য দোকান প্রতি আড়াই লাখ টাকা করে নিচ্ছেন। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি দোকান থেকে টাকা তোলা হয়ে গেছে। বাকিদের থেকেও আদায় করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ মার্কেট থেকে ৮ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা উঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, দোকানগুলো বরাদ্দ নেয়ার সময় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো দিয়েছি। এরপরেও তা বাতিল করে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এখন আবার স্থায়ী করে দেয়ার নাম করে আড়াই লাখ টাকা করে আমাদেরকে দিতে হচ্ছে। মেয়রকে দেয়ার কথা বলে মার্কেটের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনু ও তার সহযোগী হাসান ও আবু হান্নান সিদ্দিকী এসব টাকা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনোয়ার হোসেন মনু বলেন, এটা কর্পোরেশনের বাজার শাখা থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপর তারা আবার বাতিল করেছে। আমরা কিছুই করছি না। আমরা চাই মার্কেটের উন্নয়ন হোক। সিটি কর্পোরেশন কি করবে সেটা তাদের ব্যাপার।
দোকানদারদের থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আপনার কাছে এ কথা কে বলেছে? আমার সামনে নিয়ে আসেন। দাঁত ফেলে দিবো।
তিনি বলেন, আপনিও সামনে আসেন। মোবাইলে এসব কথা বলা ঠিক না।
খবর নিয়ে জানা গেছে, পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান নির্মাণ ও বরাদ্দে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি, সরকার দলীয় স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও রয়েছেন। একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পার্কিংয়ের স্থানে নির্মিত একটি দোকান পেতে নেতাদেরকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এর পর আবার মামলার দোহাই দিয়ে বিভিন্ন অংকে আরও টাকা নিয়েছে তারা। এত দফায় টাকা নিয়েও তারা বরাদ্দ বাতিল ঠেকাতে পারেনি। সিটি কর্পোরেশন থেকে এ বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এখন আবার বৈধতা দেয়ার কথা বলে আড়াই লাখ করে টাকা নেয়া হচ্ছে। আমরা তো পথেই বসে গেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলিস্তান এলাকা তথা মার্কেটের প্রভাবশালী এই নেতা (মনু) এক সময় হাতে করে বোরখার হকারি করতেন। গুলিস্তান থেকে মালামাল কেনার কারণে অনেকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেন। প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার (পোড়া) মার্কেটে। চাঁদাবাজি দালালিসহ নানান কৌশলে অবৈধ পথে ঢাকা কামাতে শুরু করে। আর এভাবেই চাঁদা আদায় করে মলিক হয়েছেন কোটি কোটি টাকার। বর্তমানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় তার ৬ কাঠা জমির ওপর ৫ তলাবিশিষ্ট একটি বাড়ি রয়েছে। মগবাজারেও রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) রয়েছে দুর্নীতির মামলা। যা বর্তমানে দুদকে তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ সম্পর্কে ডিএসসিসির সহকারী সম্পত্তি কর্মকর্তা মুহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, অবৈধ বলেই এ মার্কেটটি সিটি কর্পোরেশন ভেঙে দেয়ার জন্য অনুমোদন করেছে। কারা মার্কেটটি বৈধ করে দেয়ার জন্য টাকা তুলছে তা আমাদের জানা নেই। যদি কেউ টাকা তুলে থাকেন সেটা তাদের ব্যাপার। এখানে ডিএসসিসির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।