Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের হাল

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

চলমান পৃথিবীর প্রতি অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকালে অতিসহজেই অনুধাবন করা যায় যে, মুসলিম জাতি এমন একটি বড় কঠিন সময় অতিক্রম করছে। কারণ, তারা নামসর্বস্ব মুসলমান হিসেবে ইসলামের মহান দায়িত্বের প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করে চলেছে। প্রকৃত ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বাস্তব প্রয়োগ তাদের কর্মকাণ্ডে ও চলার পথে পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, কি জন্য হচ্ছে না, এর উত্তর একটাই হাল জামানায় বেশিরভাগ মুসলমান সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কোরআনকে সেলফে এবং তাকে উঠিয়ে রেখে দিয়েছে। কোরআন বোঝার চেষ্টাও ছেড়ে দিয়েছে।

স্বল্পসংখ্যক মুসলমান যারা আল কোরআনকে হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিয়ে চলেছেন, তাদের সংখ্যা এতই নগণ্য যে, দুরবিন ছাড়া তাদের শনাক্ত করাও মুশকিলের ব্যাপার। মুসলমাদের অধঃপনের এই দৃশ্য অন্তরচক্ষে দর্শন করেই হয়তো বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বেদনাবিধূর কণ্ঠে বলেছিলেন : ‘অতি সত্বর এমন একটি সময় আসবে, যখন ইসলামের নামটুকু অবশিষ্ট থাকবে। (ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও নিয়মনীতি অবলপ্ত হয়ে যাবে)। আল কোরআনে লিখিত রূপটি টিকে থাকবে (কোরআনের আইনকানুন কিছুই বলবৎ থাকবে না)। মসজিদগুলো সুরম্য প্রাসাদের রূপ পরিগ্রহ করবে, কিন্তু সেখান হতে হেদায়াতের নূর বিকশিত হবে না। তখনকার বিদ্যমান হবে নষ্ট চরিত্রের লোক। তাদের থেকে সম্প্রসারিত হবে ফিতনা—ফ্যাসাদ ও অশান্তি। তখন জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের অবস্থাকে সাধুবাদ জানাবে।’

মুসলমানদের অধঃপতনের এই চিত্রটি বর্তমানে এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, এই বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৯ পর্যন্ত প্রলম্বিত প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর শান্তির জন্য যে লীগ অব নেশন্স গঠন করা হয়, তা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই বিশ্ব সংস্থাটি ১৯৩৯ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ডামাঢোলে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। বিশ্বের সামরিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শান্তিধর দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আরেকটি বিশ্ব সংস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চালান। বহু চেষ্টার পর ১৯৪৫ সালে ২৬ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো শহরে ৫০টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি একটা সনদে স্বাক্ষর করে ‘জাতিসংঘ’ গঠন করে। জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর দাতা অধিকাংশ রাষ্ট্র সনদটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়।

জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে তুলে ধরে এ সনদের মুখবন্ধে বলা হয়েছে : ‘আমরা জাতিসংঘভুক্ত জনগণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভবিষ্যৎ বংশধরদের যুদ্ধের অভিশাপ থেকে বাঁচানোর জন্য। যে অভিশাপ আমাদের জীবনে দু’দুবার মানব জাতির নিকট অবর্ণনীয় দুঃখ—দুদর্শা বহন করে এনেছে। মৌলিক মানবিক অধিকার অর্থাৎ মানুুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং ছোট বড় জাতি ও নারী—পুরুষ নির্বিশেষে সমান অধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করার জন্য এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন উৎস প্রসূত বাধ্যবাধকতার প্রতি সম্মান বজায় রাখার মতো অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য এবং ব্যাপকভাবে স্বাধিকারের মাধ্যমে সামাজিক অগ্রগতি সাধন ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি একত্র করতে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তবে, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জাতিসংঘ তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, শক্তিধর রাষ্ট্রের স্বৈরাচারিতার জন্য। বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর যুক্তরাষ্ট্র তার সাম্রাজ্যবাদী চেহারায় প্রকাশ পেয়েছে। এই ফলশ্রম্নতি স্বরূপ ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের বানানো টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার মিথ্যা অজুহাতে আফগানিস্তানে হামলা চালায় এবং নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। ২০০৩ সালে মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করে দক্ষ লক্ষাধিক লোক হত্যা করেছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার করার ক্ষমতা জাতিসংঘ ও বিশ্ববাসীর নেই। তদুপরী মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব, পরস্পর বিরোধ ও সংঘাত ইসলামের শত্রুদের জন্য মুসলিম নিধনের অপরিমেয় সুযোগ করে দিয়েছে। একই সাথে রয়েছে ভোগবিলাসের প্রতিযোগিতা। তাই তারা মূল ইসলাম ও বিশ্ব নবী (সা.) এর কথা, আদর্শ ও মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে গেছে।

তাছাড়া ২০২১ সালের করোনা মহামারি মুসলমান দেশগুলোর অস্থিমজ্জা নিঃশেষ করে দিচ্ছে। ধর্মীয় জীবন বোধ ও চেতনাকে তারা আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। জীবন রক্ষা ও রোগ প্রতিরোধকারী কোনো ওষুধ তারা এখনও আবিষ্কার করতে পারিনি। ফলে, বিদেশি শক্তির কাছে ধর্না দেয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায়ান্তর নেই। এভাবে জীবন হারা, ধর্মহারা, সর্বহারা হয়ে যে কোন সুখের সাগরের দিকে মুসলমানরা ভেসে চলেছে, তার ঠিাকানা নিরুপণ করা বড়ই কঠিন ব্যাপার।

তাইতো বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন : আমি এ আশঙ্কা করি না যে আমার উম্মত পুনরায় শিরকের দিকে ফিরে যাবে। তবে আমি এ আশঙ্কা করি যে তারা ভোগবিলাসের নেশায় পরস্পর বিবাদ বিসম্বাদে জড়িয়ে পড়ে নিজেদের দুর্বল করে ফেলবে।’ বিগত অর্ধশতাব্দী ধরে মুসলমানরা যত রক্ত দিয়েছে এবং দিচ্ছে, যত মার খেয়েছে এবং খাচ্ছে, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতির এমন বেদনাদায়ক অবস্থা কখনোও হয়নি।



 

Show all comments
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:১২ এএম says : 0
    We face this question everyday and can not answer with our very limited knowledge of Islam. Question is what will happen to millions of people who did not hear about Prophet Muhammad (SA) and his prophethood. Even in Bangladesh people did not hear about the prophethood of Muhammad (SA) until 600 years after his death. What would happen to these fore fathers of ours. They lived in the period of Muhammad (SA) ‘s Nobuyat but did not hear his name even. Same is true for the millions of people who lived in American Continents. Next question comes the Bush men in Andaman, Australia, New zealand and Amazon (They stay naked) who were not visited by any body from Tabligee Jamat. Will they go to heaven ? or get burnt in Hell. Also What will happen to Hijras. Will any body with better religious knowledge please write an article on this subject for our education. Islam says education is mandatory for all the Muslims and Muslimas
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Irfan Hossain ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৪৪ এএম says : 0
    কবি নজরুল দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে লিখেছেন- ‘আল্লাহতে যার পূর্ণ ইমান, কোথা সে মুসলমান / কোথা সে আরিফ, অভেদ যাঁহার জীবনে মৃত্যু জ্ঞান।/ যাঁর মুখে শুনি তৌহিদের কালাম / ভয়ে মৃত্যুও করিত সালাম।’
    Total Reply(0) Reply
  • Nishi Islam ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৪৪ এএম says : 0
    মুসলমানদের অযোগ্যতার কারণে অন্য জাতিগুলো প্রযুক্তির সাহায্যে মারণাস্ত্র তৈরি করে অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Naib Al Emran ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৪৪ এএম says : 0
    মুসলমানদের অনেকেই ইসলামী আদর্শ থেকে সরে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Irfan Hossain ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৪৫ এএম says : 0
    নেতৃত্বের ব্যর্থতা আরেক কারণ। অনেক নেতারই নেই যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা। কিছু নেতাকে হত্যা করে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, যাদের অন্যতম সৌদি আরবের শহীদ বাদশাহ ফয়সল
    Total Reply(0) Reply
  • Md Faruque Ahmed ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৪৫ এএম says : 0
    শিয়া-সুন্নি বিরোধকে আরো উসকে দিয়ে প্রতিপক্ষ ফায়দা হাসিল করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Selim ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৪৫ এএম says : 0
    অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থপরতা ও শত্রুতা মুসলিম বিশ্বের জন্য হুমকি। তারা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোয়েন্দা টেকনিক ব্যবহার করছে। মালয়েশিয়াতে পর্যন্ত মেধাবী ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরাইলি গোয়েন্দারা।
    Total Reply(0) Reply
  • Badal Sikdar ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৪৬ এএম says : 0
    . মুসলিম বিশ্বের গণমাধ্যমের দুর্বল অবস্থা। অন্য দিকে বিপক্ষের গণমাধ্যম সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানাতে ওস্তাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Firdaus Juwel ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:১০ এএম says : 0
    মুসলিমদের নবীওয়ালা ঈমান ও সাহাবীওয়ালা ইয়াকীন থাকলে সব সমস্যার সমাধান আল্লাহ তায়ালাই করে দিবেন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:১৬ পিএম says : 0
    Condition of Muslims will be deteriorated day by day till destruction of this universe.
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:২৪ পিএম says : 0
    Forecast of Rasul (sm) is being implemented undoubtedly. Islam is prevailing in this world in skeleton form.
    Total Reply(0) Reply
  • আব্দুল বাসেত ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:১১ এএম says : 0
    মূলত মুসলমানের পাপের কারনে,1 অন্যায় ভাবে আসন লাভ করার প্রবনতা,2 অন্যায় ভাবে আসন লাভ করার প্রবনতা,3 অন্যায় ভাবে নারীকে ভূগ করার প্রবনতা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলমান


আরও
আরও পড়ুন