গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীতে পৃক ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে একজন ক্রিকেটারও রয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে ফার্মগেটে বাসের ধাক্কায় ক্রিকেটার নীরব খান শহীদের (৩২) মৃত্যু হয়। তিনি কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের প্রম বিভাগের ক্রিকেটার ছিলেন। এ দুর্ঘটনায় তার বন্ধু আফজাল হোসেন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তেজগাঁও থানার ওসি সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, বেপরোয়া গতিতে এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু পরিবহন লিমিটেডের একটি বাস ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের কাছে ক্রিকেটার শহীদুল ইসলামের মোটরসাইকেলের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি ছিটকে সড়কে পড়ে আহত হন। পেছনে থাকা তার বন্ধু আফজাল হোসেনও আহত হন। খবর পেয়ে তেজগাঁও থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শহীদুল ও আফজালকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শহীদুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, রাতে এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় মামলা হয়েছে। ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে। ঘাতক বাসটির চালককে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া গতকাল দুপুরে হাতিরঝিলের পশ্চিম রামপুরায় গেট খোলা নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বাড়ির মালিকের ছোট ভাইয়ের ইটের আঘাতে ভাড়াটিয়া কামরুল ইসলামের (৬৭) মৃত্যু হয়েছে। অভিযুক্ত কাজী জিকু (৩৭) পলাতক রয়েছেন। নিহত কামরুল ইসলাম রামপুরার পশ্চিম উলন ৫৭ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি দুই ছেলের বাবা। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার নবীপুরে। নিহতের শ্যালক আশরাফুল হক বলেন, অনেক রাতে বাড়ির মালিকের ভাই কাজী জিকু বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকার জন্য গেটে ধাক্কা দিতে থাকে। আমার দুলাভাই পরিবারসহ ওই ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকেন। গেট কেন খোলা হচ্ছে না এজন্য আমার ভাগেড়বকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে জিকু। গেট খুলে দেওয়ার পর আমার ভাগেড়ব জানতে চায়, আপনি গালাগাল করছেন কেন। পরে বিছানা থেকে আমার দুলাভাইও উঠে আসেন। কথা বলার পরই ইট দিয়ে প্রথমে আমার ভাগ্নে ও পরে দুলাভাইয়ের মাথায় আঘাত করে জিকু।
হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুলাভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, আমার ভাগেড়বর বয়স কম হওয়ার সে নিজেকে সামলে নিয়েছে কিন্তু দুলাভাইয়ের বয়স বেশি হওয়ায় তিনি ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তো মারাই গেলেন। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। পুলিশ এখনও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে, চকবাজারের ইসলামবাগ হাজী নুর ইসলামের গলি এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করার সময়
বাবুল মিয়া নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই দুর্ঘটনা। নিহতের সহকর্মী চান মিয়া বলেন, ভবনে কাজ করার সময় ওইখানে কিছু মাটি পড়েছিল। মাটি সরাতে গেলে বাবুল মিয়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও জানান, নিহতের বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান থানায়। তিনি স্থানীয় আব্দুর রব মিয়ার সন্তান। তিনি চকবাজারের ওই এলাকায় থাকতেন। একই দিন সকালে মিরপুরের পল্লবীর আদর্শনগর এলাকায় মুরগির ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে বাবার সামনে সায়েম নামে দুই বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশুর বাবা হীরা মিয়া বলেন, আমি একজন রিকশাচালক।
সকালে ছেলেকে নিয়ে বাসা থেকে একসঙ্গে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়াই। ছেলেকে কিছু খাবে কি না জিজ্ঞেস করি। পরে আমি একটু দূরে খাবার আনতে যাই। তার পাশে একটি মুরগির ট্রাক দাঁড়ানো ছিল। ট্রাকটি যাওয়ার সময় আমার ছেলেকে চাপা দেয়। সে রাস্তার উপর পড়ে যায়। পরে আমি ট্রাক চালককে দাঁড়াতে বললে আমার ছেলের উপরে চাকা উঠিয়ে দেয়। এ সময় আমি ট্রাকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ড্রাইভার দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। ছেলেকে উদ্ধার করে প্রমে একটি স্থানীয় হাসপাতালে, পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও জানান, আমরা বর্তমানে মিরপুরের পল্লবীর আদর্শনগর এলাকায় ভাড়া থাকি। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। আমাদের বাড়ি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর থানার মুন্সিপাড়া গ্রামে। অপরদিকে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় শেফালী বেগম নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত আটটার দিকে বাসটি ওই নারীকে ধাক্কা দেয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ১১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। তিনি মাতুয়াইল মেডিকেল মুসলিম নগর এলাকায় থাকতেন। তিনি তিন কন্যার জননী ছিলেন। তার স্বামী মৃত লুৎফর রহমান। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মুনিষ ঘোষ বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন এক নারী। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।