Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যয়বহুল সিয়াচেন সীমান্ত এক মৃত্যুকূপ

প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিয়াচেন হিমবাহ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু যুদ্ধক্ষেত্র। পাকিস্তান এবং ভারতের সীমান্তরক্ষীদের মাঝে এই অঞ্চলে সর্বদাই যুদ্ধের ভয়াবহতা বিরাজ করে। এই দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে একটাও গুলিবিনিময় হয়নি এমন দিন পাওয়া মুশকিল। সিয়াচেন হিমবাহের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মিটার উঁচুতে অবস্থিত ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের আউটপোস্ট। সম্প্রতি সিয়াচেনের ভারত অংশে তুষার ধসে চাপা পড়েছিল ১০ ভারতীয় সৈন্যসহ পুরো ক্যাম্প। বরফ চাপা পড়ার দুই দিনের মাথায় ভারতীয় সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ছয় দিনের মাথায় প্রায় পঁচিশ ফুট বরফের তলা থেকে এক ভারতীয় জওয়ানকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে।
এই হিমবাহটি কাশ্মীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে শুধু তাই নয়, পূর্বাঞ্চলীয় কারাকোরাম নিয়েও ঝামেলা আছে এই গ্লেসিয়ারকে কেন্দ্র করে। যে কারণে এই অঞ্চটিকে দুই দেশই তাদের নিজেদের বলে দাবি করছে দীর্ঘকাল থেকেই। ২০০৩ সালের নভেম্বর থেকে দুই দেশের মধ্যে অস্ত্রবিরতি শুরু হওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী হিমবাহের উপরের অংশে এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নি¤œাংশে অবস্থান নেয়।
ভারতীয় বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর, বরফ সরানোর যন্ত্র এবং হেলিকপ্টার দিয়ে তাদের সহযোদ্ধাদের দেহ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোনো কিছুতেই পাওয়া সম্ভব হয়নি, অন্তত প্রথম পাঁচ দিন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের কর্নেল এস ডি গোস্বামীর কাছে বরফ ধসের কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো কারণ জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, এরকম উচ্চতায় বরফ ধসের মতো ঘটনা স্বাভাবিক। কিন্তু ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, এ ধরনের বড় বরফ ধস ১৯৮৪ সালের পর আর হয়নি। ওই বছরই প্রথমবারের মতো সিয়াচেনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশেষ করে শীতকালে এ ধরনের বরফ ধস সচরাচর হওয়ার কথা নয়, কারণ এই সময় তাপমাত্রার কারণে এমনিতেই বরফ জমাট বেঁধে থাকে। তবে ১৯৮৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বরফ ধসে ৮৬৯ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। পাকিস্তান সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যেও শতাধিক মানুষ মারা গেছে এ পর্যন্ত। সর্বশেষ ২০১২ সালে অপর এক বড় বরফ ধসে ১৩০ জন পাকিস্তানি সেনা মারা গিয়েছিল। গবেষক সাজ্জাদ পাদ্দেরের মতে, ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যতগুলো ধস হয়েছিল তাতে নিহতের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধা ও জলবায়ুগত সমস্যার কারণে। গড়ে প্রতি চার দিনে সিয়াচেনে পাকিস্তানের একজন করে সৈন্য ঠা-ায় মারা যায়।
অন্যদিকে প্রতিদিন অন্তত একজন ভারতীয় সৈন্য মারা যায় সিয়াচেনে। বিশেষ করে বিশ হাজার ফুট উঁচুতে অক্সিজেনের অভাবে অনেক সৈন্যই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অপর একদল বিশ্লেষকের মতে, সিয়াচেনের অল্প একটু সীমান্ত রক্ষা করতে ভারতের প্রতি বছর এক হাজার থেকে ১২০০ কোটি রুপি ব্যয় হয়। পাকিস্তান সরকার ভারতের তুলনায় কিছু কম ব্যয় করলেও দেশের অন্যান্য খাতের তুলনায় তা অনেক বেশি। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যয়বহুল সিয়াচেন সীমান্ত এক মৃত্যুকূপ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ