বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে বিজয়নগর উপজেলায় যোগাযোগের জন্য তৈরি হচ্ছে শেখ হাসিনা সড়ক। ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কের দুই পাশের বেশিরভাগ অংশজুড়ে থৈ থৈ পানি। গতকাল শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকালে মর্মান্তিক নৌ-দুর্ঘটনার পর বিলের পানি আর স্বজনহারাদের চোখের পানি যেন একাকার হয়ে যায়!
সড়কের দুই পাশে লইস্কা বিলে নৌকা ডুবে প্রাণ গেছে ২১ জনের। রাত ১২টার দিকে মোট ২১ জনের লাশ নিয়ে একাধিক নৌকা জেলা সদর হাসপাতালে ছুটে আসে। লাশগুলো সদর হাসপাতালে রাখা হয়।
শনিবার (২৮ আগস্ট) রাত সোয়া বারটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃত বেশ কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন‑ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের চিলোকূট গ্রামের আবদুল্লাহর কন্যা তাকুয়া (৮), বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হক ভূঁইয়ার ছেলে আরিফ বিল্লাহ ওরফে মামুন ভূঁইয়া (২০), একই ইউনিয়নের গেরারগাঁও গ্রামের মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), একই গ্রামের জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), তার কন্যা মুন্নী বেগম (৬), একই ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক ওরফে মন মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম, একই ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের পরিমল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনা বিশ্বাস (৩০), তার কন্যা ত্রিদিবা বিশ্বাস (আড়াই বছর), একই ইউনিয়নের গেরারগাঁওয়ের আবদুল হাসেমের স্ত্রী কমলা বেগম ওরফে রওশন আরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার দক্ষিণ পৈরতলার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫), পৌর এলাকার উত্তর পৈরতলার ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজলা বেগম, পৌর এলাকার দাতিয়ারার হাজী মোবাশ্বের মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের মুরাদ মিয়ার ছেলে তানবীর (৮), একই ইউনিয়নের গাছতলা গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের জারু মিয়ার মেয়ে শারমীন (১৮), ময়মনসিংহ জেলার খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৫৫), বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের কামাল মিয়ার মেয়ে মাহিদা আক্তার (৫), পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮)।
ঘটনার রাতে বিলের পাড়ে গিয়ে দেখা যায় নিখোঁজদের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠেছে। বিলের পাড়ে বসে কাঁদতে থাকা বিজয়নগরের জহিরুল ইসলাম জানান, সাত দিন আগে তিনি বিয়ে করেছেন। স্ত্রী শারমিনকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শ্বশুর বাড়িতে আসছিলেন। নৌকা ডুবিতে তিনি বেঁচে গেলেও স্ত্রীকে খোঁজে পাচ্ছেন না।
নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ তাফসিয়া মীম নামে এক শিশুর মা আহাজারি করে বলতে থাকেন, 'আমার মাইয়া কই। আমার মাইয়ারে পাইতাছিনা কেরে।'
নিখোঁজ ভাইয়ের জন্য আহাজারি করছিলেন এনামুল ইসলাম মুন্না। মনিপুর ঘাট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দ বাজার আসার জন্য তার ভাই সিরাজুল ইসলাম নৌকায় উঠেন বলে জানান তিনি। কয়েক ঘণ্টা খোঁজাখুজি করেও ভাইকে পাচ্ছেন না বলে তিনি বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
জেলা সদর হাসপাতালে কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের আঁখি বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামী সন্তানদের নিয়ে বিজয়নগরের চম্পকনগর গ্রাম থেকে নৌকায় করে ফিরছিলেন। দুর্ঘটনার সময় তার বাম হাতে এক বছর বয়সী মেয়ে মোবাশ্বিরা ও ডান হাতে আট-দশ বছর বয়সী ছেলে তানবীর হোসাইন ধরা ছিলো। এক পর্যায়ে বড় ছেলে তার হাত থেকে ছিটকে যায়। এরপর থেকে তাকে পাচ্ছেন না। তার স্বামী মুরাদ মিয়া হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ফারুক মিয়া জানান, তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে খোঁজে পাচ্ছেন না। কে বা কারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছেন।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের মনিপুর গ্রামের মো. কবির মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, খবর পেয়ে তিনিসহ কয়েকজন মিলে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেন। তিনিসহ অন্যান্যরা মিলে অন্তত ২১ জনের লাশ উদ্ধার করেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান। জেলা প্রশাসক জানান, ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। দাফনের জন্য নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিছুর রহমান জানান, দুর্ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে বালুবাহী ট্রলারের চালকসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সকালে আবারও উদ্ধার অভিযান চালানো হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।