দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ যে কোন একটি ধর্ম বা যে কোন নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি, রীতি-নীতি পালন করে আসছে। যিনি বলেন যে, আমার কোন ধর্ম নেই বাস্তবিক তিনিও একটি নিয়ম মেনেই জীবন যাপন করছেন। যে কোন মানুষ যে কোন ধর্ম বা নিয়ম নীতি মেনে চলতে পারবে এটি হলো মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা। ইসলাম এখানে কাউকে বাধ্য করেনা যে, আপনি ইসলামই গ্রহণ করতেই হবে। আপনাকে ইসলাম মানতেই হবে। এমন কথা ইসলাম বলে না বরং জোরপূর্বক ইসলামে প্রবেশ করানো শরীয়তে জায়েজ নেই। জোর করার মাধ্যমে কয়েকটি জিনিস লংঘন হয় এক, মানুষের স্বাধীনতা। দ্বিতীয় ইসলামের বাদান্যতার উপর আঘাত আসে। কারণ ইসলাম দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট উজ্জল। যে কথা সত্য, যে পথ সুন্দর ও মসৃণ, তার দিকে মানুষকে বাধ্য করে নিয়ে আসতে হয় না। মানুষ তার সুন্দর্য্য দেখেই চলে আসবে। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, ধর্মে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। এবং এ ব্যাপারে কোন প্রকার বল প্রয়োগ করা চলবে না, কেননা অসৎ পথ হতে সৎ পথ দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। (সূরা বাকারা আ/২৫৬)
এতে স্পষ্ট হয় যে ইসলাম সদা উদ্ভাসিত তার প্রতি মানুষকে বাধ্য করতে হবে না। এখানে স্পষ্টত বলা হয়েছে ইসলামে জোর করে প্রবেশ করানো যাবে না। এ আয়াত নাজিল হয় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তা হলো মদিনার আনসারগণের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির দু’ সন্তান ইসলাম আসার পূর্বে খৃষ্টান ধর্মগ্রহণ করে পরে তারা মদিনায় আসলে তার পিতা তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করতে জোর করা হয় তখন তারা রাসূলে আরবী সা. এর কাছে তা জানায়। তখন উপরোক্ত আয়াত নাজিল হয়।
এতে বুঝা যায় ইসলাম মানুষের ধর্মগ্রহণের ব্যপারে মুক্ত স্বাধীনতা দিয়েছে এবং মনুষের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন, আল্লাহ তাআলা নবীকে সম্বোধন করে বলেন, হে নবী! আপনি বলুন সৎপথ আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। সুতরাং যার ইচ্ছা সে ঈমান আনয়ন করতে পারে, আবার যার ইচ্ছা সে কুফরী করতে পারে। আমি অত্যাচারিদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত রেখেছি। (সূরা কাহাফ আ/২৯) এসে পরিস্কারভাবে আমরা বুঝতে পারি ঈমান গ্রহণ করা মানুষের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছে ইসলাম। ইসলামে প্রবেশ করাতে কোন কালেও কাউকে বাধ্য করা হয়নি। ইসলাম যেভাবে ধর্ম গ্রহণের ব্যাপরি স্বাধীনতা দিয়েছে ঠিক অনুরূপভাবে অন্যধর্ম এবং তাদের কার্যকালাপ, আকীদা-বিশ্বাস নিয়ে ঠাট্টা করাও নিষেধ রয়েছে। কারণ প্রত্যেক মানুষের কাছে তার আকীদা-বিশ্বাস ও ধর্ম তার প্রাণের চেয়েও বেশি। তাই ইসলাম অন্যান্যদের পুঁজিতকে গালি দিতে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করেছেন। কারণ তাদের উপাস্যকে যদি গালি দেয়া হয় তবে তারাও তোমার উপাস্যকে গালি দেবে। একই কারণে অন্যান্য ধর্মলম্বীদের উচিৎ মুসলিমেদের বিশ্বাস ও ইসলাম ধর্মের যে কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা না করা। কারণ মুসলিমরাও তাদের ধর্মকে নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালবাসে।
ইসলাম যেমন ধর্ম গ্রহণ করার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছে ঠিক তেমনি অমুসলিমদের ধর্মপালনের ক্ষেত্রেও স্বাধীনতা দিয়েছে। তবে তা ইসলামের রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় আইনের গন্ডিতে থেকে হবে। মুসলিমকে খ্রিষ্টান ও ইয়হুদীদের খাদ্য শুকর বদ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তাদের মদের পাত্র ফেলতে বারণ করেছেন। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় প্রত্যেক ক্ষেত্রে স্বাধীনতা সুষ্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে ইসলাম গ্রহণ করার পর বা কেউ মুসলিম হওয়ার পর তাকে সম্পূর্ণ ইসলাম মানতে হবে। তাকে ইসলামী আইন কানুন অবশ্যই পালন করতে হবে না হয় ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী তাকে তার শাস্তি পেতে হবে। একথাটি প্রত্যেক জাতি, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের একই নিয়ম। প্রত্যেক দলের তার নিজস্ব নিয়ম রয়েছে আর কেউ সেই নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে বহিস্কার করা হয় তাকে বিভিন্ন শাস্তির সম্মুখিন হতে হয়। ঠিক তেমনিভাবে ইসলাম গ্রহণ করলে সম্পূর্ণ ইসলাম মানতে হবে। এটি ধর্মে যে জোর-জবরদস্তি নেই এ কথার ভেতর নয়।
মক্কার কাফের রা রাসূল সা. কে বলেছিল আপনি একবছর আমাদের ধর্ম পালন করেন আর পরের বছর আমরাও আপনার মা’বুদের উপাসনা করবো, তখন আল্লাহ তাআলা বলেন , আপনি বলুন, তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম এবং আমাদের জন্য আমাদের ধর্ম। (সূরা কাফিরুন) এতে স্পষ্ট হয় নিজের ধর্মের কিছু মানবো আবার অন্য ধর্মের কিছু তা ইসলামে সমর্থন করে না। সুতারাং মুসলিম হলে আপনাকে ইসলামী সংস্কৃতিই পালন করতে হবে অন্য সংস্কৃতি পালন করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমর পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করো। অতএব আমাদের কাছে পরিস্কার হলো যে, অন্যকোন ধর্ম থেকে ইসলামে প্রবেশ করনোর মধ্যে কোন জোর-জবরদস্তি নেই তবে ইসলাম গ্রহণ করলে অবশ্যই আপনাকে ইসলাম পালন করতে হবে সর্বক্ষেত্রে আর না হয় তার শাস্তি যা ইসলাম নির্ধারণ করেছে তা গ্রহণ করতে হবে। যেমন, জেনার শাস্তি, চুরির শাস্তি, ধর্মান্তরিত হওয়ার শাস্তি ইত্যাদি তবে শাস্তিগুলো প্রয়োগ করবেন ইসলামী রাষ্ট্রীয় সরকার। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে জোর বা বল প্রয়োগ নেই তবে প্রশ্ন হতে পারে যে তবে ইসলাম কিভাবে বিস্তার লাভ করবে? এর উত্তরও সোজা।
ইসলামী মতবাদ বিস্তারের ক্ষেত্রে জোর ও বল প্রয়োগ করাকে গ্রহণ করেনি তবে ইসলাম বিস্তারের ক্ষেত্রে দাওয়াতের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যে, সুন্দর ও উত্তম ভাষায় ইসলামের সৌন্দর্য্যকে অন্যের সামনে তুলো ধরার কথা এবং জান্নাতের অফুরন্ত সুখের স্থান ও জাহান্নামের সীমাহীন কষ্টের স্থান তা তাদের সামনে তুলে ধরে ইসলামের প্রতি আহবান করার প্রতি উৎসাহিত করেছে। ইসলাম কত সুন্দরভাবে এ দাওয়াতি কার্যক্রমও সাজিয়েছে। দাওয়াতের ক্ষেত্রে আপনাকে রূঢ় বাক্য, ধমক দেয়া থেকে নিষেধ করে নরম মোলায়েম ভাষায় হৃদয়গ্রাহী উপাস্থাপনার সাথে দাওয়াত দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবী! আপনি যদি রুঢ় ও কঠোর স্বভাবের হতেন তবে লোকেরা আপনার ধারে-কাছেও আসতো না। (সূরা ইমরান ১৫৯) ইসলামের শক্তি এখানেই। মুসলিমের রাজ্য জয়ের রহস্য এখানেই। এ দাওয়াতী কার্যক্রমের মাধ্যমেই ইসলাম সারা দুনিয়ায়ে বিস্তার লাভ করেছে ও করবে। মানুষ মুসলিম হচ্ছে ও হবে।
লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।