গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা জুবিলী রোডে গতকাল (সোমবার) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ১০বার বিদ্যুৎ চলে গেছে। প্রতিবার বিদ্যুৎ যাওয়ার পর আধা ঘণ্টা থেকে ২০ মিনিট পর ফের বিদ্যুৎ আসছে। একই অবস্থা মহানগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকাতেও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলা চলছে। মহানগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকার চিত্র এখন এমন।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আশ্বিনেও পড়ছে ভাদ্রের ভ্যাপসা গরম। বিদ্যুতের লুকোচুরিতে নগরজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ায় বাসাবাড়িতে বিনষ্ট হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী। বিদ্যুতের উঠানামায় কলকারখানার উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। ছোটখাটো কলকারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিনষ্ট হচ্ছে আইপিএস, জেনারেটরসহ মূল্যবান বৈদ্যুতিক সামগ্রী।
জানা গেছে, আগ্রাবাদস্থ পিডিবি ভবন এলাকায়ও ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আগ্রাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল হালিম জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনে ৮ থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর আবার বিদ্যুৎ চলেও আসছে। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে তার অফিসের কম্পিউটার, আইপিএসসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিকল হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, কখনও কখনও লো-ভোল্টেজের সমস্যা হচ্ছে।
নগরীর পাঠানটুলী এলাকার বাসিন্দা শাকিল আহমেদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে। কখনও কয়েক মিনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসছে আবার কখনও এক ঘণ্টায়ও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে আইপিএস পুরোদমে চার্জ হচ্ছে না। বাসাবাড়ির ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্র বিকল হয়ে যাচ্ছে।
ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে ছোট-বড় কলকারখানাগুলো। বিদ্যুতের কারণে কলকারখানায় উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। যেসব কারখানায় বিকল্প ব্যবস্থা নেই সেসব কারখানায় বিদ্যুৎ চলে গেলে শ্রমিকরা হাত গুটিয়ে বসে থাকছে। মহানগরীর কদমতলী, মাদারবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে লেদ, ওয়েল্ডিং মেশিনসহ শত শত ছোট ছোট কারখানা। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে এসব কারখানার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেছে এসব ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা হাত গুটিয়ে বসে থাকছে। এতে তাদের আয়-রোজগারও কমে গেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, দুর্বল সঞ্চালন ব্যবস্থার কারণে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যাচ্ছে। ওভারলোডের কারণে কোথাও কোন সমস্যা হলে তা সারিয়ে তুলতে সময় লাগছে। আর এ কারণে অনেক এলাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পিডিবির কর্মকর্তারা দাবি করেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংকট খুবই সামান্য। তবে সঞ্চালন ব্যবস্থায় ত্রæটির কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পিডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, রোববার নগরীর ইউএসটিসি এলাকায় ওভারলোডের কারণে সার্কিট লাইনের একটি তার ছিঁড়ে যায়। আর এ কারণে মহানগরীর খুলশী, স্টেডিয়াম ও মাদারবাড়ির বিশাল এলাকায় দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বিদ্যুৎ চলে গেছে। ওই তার জোড়া লাগানোর পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। জুবিলী রোড এলাকায় প্রতিদিনই ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণ হিসেবে প্রকৌশলীরা বলছেন, ওভারলোডের কারণে সঞ্চালন ব্যবস্থা ট্রিপ করছে। মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকায় এখন এ ধরনের সমস্যা চলছে। নিয়মিতই বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বিকল হচ্ছে। কোথাও ট্রান্সফরমার বিকল হলে তা সারিয়ে তুলতে কিংবা বিকল্প ট্রান্সফরমার বসাতে দিনের পর দিন পার হয়ে যাচ্ছে। এতে করে সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, আগের তুলনায় এখন কম সময়ের মধ্যে ট্রান্সফরমার সারানো হচ্ছে।
পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) নিখিল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে দৈনিক প্রায় ৯শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। গ্যাসের অভাবে রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ইউনিট বন্ধ আছে। বন্ধ শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও। নবপ্রতিষ্ঠিত হাটহাজারী জুলধা ও দোহাজারীর একশ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পিকআওয়ারে চালু রাখা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি মিলে পিকআওয়ারে সবকয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৯শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (বিতরণ) আজহারুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৯শ’ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে গড়ে ৫০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সঞ্চালন ব্যবস্থার কারণে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সঞ্চালন ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি হবে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।