Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নদী ভাঙন-জলাবদ্ধতা ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বিপর্যস্ত রামগতি-কমলনগরের লাখো মানুষ

রামগতি/কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২১, ১০:৫৭ এএম

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় মেঘনানদীর ভয়াবহ ভাঙন তাণ্ডব চলছে। প্রতিদিনের অব্যাহত ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে এই দুই উপজেলা।
মেঘনার তান্ডবলীলা-জলাবদ্ধতা ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বিপর্যস্ত রামগতি-কমলনগর উপজেলার লাখো মানুষ। দীর্ঘ চার দশক ধরে এমন অবস্থা চলছে নদী পাড়ে বসবাসকারী মানুষগুলোর। ভাঙনের ভয়াবহতায় এখানকার মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। এমন অসহনীয় পরিস্থিতিতে লক্ষাধিক মানুষ বিপর্যস্ততার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছেন।মেঘনা উপকূলীয় রামগতি-কমলনগর উপজেলা প্রায় চার দশক ধরে নদী ভাঙছে। বছরের পর বছর ভাঙতে থাকায় বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকা। সারা বছর ধরে মেঘনা ভাঙে। বর্ষা মৌসুমে ভাঙন আরও তীব্র হয়।অন্যদিকে মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে আঘাত ক্ষতবিক্ষত এ জনপদ। জলাবদ্ধতা সমস্যা এখানকার আরেক যন্ত্রণার নাম।এসব সমস্যার সাথে লড়াই করে জিবন কাটছে রামগতি-কমলনগরের মানুষের।এবারের বর্ষায় ভাঙন বেড়েছে কয়েক গুণ। সেইসঙ্গে অস্বাভাবিক জোয়ারে ডুবেছে লোকালয়। তীব্র ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, হাট-বাজার,ফসলি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। ভয়াবহ ভাঙন পরিস্থিতিতে বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। পাঁচ-সাতবার ভাঙনের শিকার হয়ে এখন অনেকেই পথের ভিখারি।

মেঘনা উপকূল ঘুরে দেখা গেছে ,রামগতি- কমলনগরে পর্যাপ্ত বেড়িবাঁধ না থাকায় এখন অরক্ষিত। বর্ষা এলেই এখানে আতঙ্ক দেখা দেয়। নদীর জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম। জোয়ারের সময় ফসলি জমি-মাঠ পেরিয়ে পানি ঢুকে পড়ে বসত ঘরে। এতে মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা থেকে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় অব্যাহত ভাঙনের মুখে রয়েছে কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ,সাহেবেরহাট, চরফলকন, চরলরেন্স ও পাটারিরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। ভাঙছে রামগতি উপজেলার বালুরচর, বাংলাবাজার, চরগাজী, চরআলগী, সেবাগ্রাম, বড়খেরী, চররমিজ,চর আবদুল্লাহ ও চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা।

ভাঙনের মুখে থাকা বাঘারহাট ও নাছিরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, জোয়ার এলেই পানি উঠে বাজার ডুবে যায়। ভাঙন ঠেকানো না গেলে তাদের পথে বসতে হবে।

সাহেবেরহাট এলাকার মাওলানা মাসুম বিল্লাহ ও কালকিনি এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় সংবাদকর্মী শাহরিয়ার কামাল বলেন,তাদের বাড়ী নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বসবাস করেন।নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় তাদের বাড়ি এখন আবারো হুমকির মুখে। নদীর তীর রক্ষা বাঁধ না হলে আবারো বাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মেহদী হাসান লিটন বলেন,বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে জোয়ারের সময় মেঘনা উপকূল অরক্ষিত হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয় জমির ফসল। ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা জানান, নদী ভাঙনের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। তারা কাঙ্ক্ষিত ফসল না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি ) চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফুল্লাহ ও সাহেবেরহাট ইউপির চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, নদী ভাঙনে তাদের ইউনিয়নের অর্ধেকেরও বেশি বিলীন হয়ে গেছে। এখন জোয়ার এলেই ডুবে যায় পুরো এলাকা।

চলতি বছরের পহেলা জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহি কমিটির (একনেক) সভায় রামগতি-কমলনগর উপজেলার মেঘনার ভাংগন রোদে প্রায় একত্রিশ কিলোমিটার তীর সংরক্ষন বাঁধ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। দুটি উপজেলার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় তিন হাজার একশ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ৫ বছরে (২০২১ইং-২০২৫ইং) প্রায় ৩১ কিলোমিটার তীর সংরক্ষন বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
সুত্র জানায়, ২০১৪ সালে অন্য একটি প্রকল্পের মাধমে দুটি উপজেলার বেড়ী বাঁধের কাজ হয়েছে সাড়ে ৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার, রামগতি বাজারে ১ কিলোমিটার এবং কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাটে ১ কিলোমিটার বেড়ী বাঁধ নির্মান করা হয়। রামগতি উপজেলার সাড়ে ৪ কিলোমিটার কাজ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং টিম। একই প্রকল্পে কমলনগরের মাতাব্বরহাটে কাজটি করে নৌবাহিনীর তত্তাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী।
মাতাব্বরহাটের ১ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধে অনিয়ম এবং নিম্নমানের কাজ হওয়ায় এক বছরেই ভাংগন দেখা দিয়েছ দশ বারের মতো।
বর্তমানে বাঁধের বেশিরভাগ অংশই নদী গর্ভে বিলীন। মূলত কমলনগর উপজেলার মাতাব্বর হাট এলাকায় নির্মিত বাঁধের করুন পরিনতি দেখেই ভুক্তভোগীরা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বর্তমান প্রকল্পটির কাজ করার দাবি জানিয়ে আসছে।

নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প নিয়ে গত দু বছর ধরে কাজ করা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আবদুজ্জাহের সাজু দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, রামগতি-কমলনগরের জনসাধারনের স্বপ্নের প্রকল্পটি চূড়ান্ত করতে সাথে ছিলাম। কাজটি যেন সুন্দর ও সঠিক ভাবে সমাপ্ত হয় সে ব্যাপারে আমার চেষ্টার কোন কমতি ছিলনা।পাশাপাশি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজটি করানোর জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর হলোনা।বাকী কাজটুকু সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করানোর জন্য আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।


লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রাথমিক সাড়ে তিন কিলোমিটারের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙ্গন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ