গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে হুমকি এবং তার কক্ষে তালা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্য বৃহস্পতিবার তার কক্ষের তালা খুলে দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে, অধ্যাপক নজরুল ফেসবুকে এমন পোস্ট দেয়ার পর সরকার সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। –ভয়েস অব আমেরিকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করে আসিফ নজরুলের সমালোচনা করেন ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা। তারা এই অধ্যাপকের বিভাগীয় কক্ষ মোতাহার হোসেন ভবনের ১২৩ নম্বর রুমে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ ঘটনায় আসিফ নজরুল বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা আসিফ নজরুলের মতপ্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপের নিন্দা জানান। তারা বলেন, মতপ্রকাশের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। এরই মধ্যে আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক ছাত্রলীগ নেতা। এদিকে, আসিফ নজরুলের আবেদনে বৃহস্পতিবার তালাগুলো ভাঙা হয়। পাশাপাশি কক্ষের দরজায় সাঁটানো ফেস্টুনগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, বিকাল ৫টায় আমি নিজে উপস্থিত থেকে তালাগুলো ভেঙে বিভাগের হাতে কক্ষটি বুঝিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সহনশীল হলে এগুলো হয় না।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক জায়গা। এটি মিছিল-স্লোগানের জায়গা। আসিফ নজরুল আমাদের ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান। ওনাকে এবং প্রক্টরকে সমন্বয় করে কী কী ঘটেছিল তথ্যগুলো নিতে বলেছি। আসিফ নজরুল পরদিন ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে চেষ্টা করেন এবং তার পূর্ববর্তী স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। পরদিনের স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন "আমি মনে করি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার সাথে উগ্রবাদ বা মৌলবাদকে উৎসাহিত করার কোন সম্পর্ক নেই। উগ্রবাদী ও মৌলবাদীরা বরং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হয়। আশা করি আমার বক্তব্য নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটবে।"
এ ঘটনা সম্পর্কে আসিফ নজরুলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিনিধিকে বলেন, আমি জাস্ট একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমান বন্দরের মতো দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে। আমি কল্পনা করতে পারিনি, এটার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এমনসব কর্মকাণ্ড করা হবে। আমার রুমে তালা দেওয়া, হুমকি দেওয়া, থানায় অভিযোগ দায়ের করা, পোস্টার সাঁটিয়ে দেওয়া। যাইহোক, আমি মনে করি যে, এটা আমার বাকস্বাধীনতার প্রয়োগ ছিল। নূন্যতম মানবাধিকারের প্রয়োগ, সংবিধান প্রদত্ত। এতটুকু কথা যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বলতে না পারে, যদি এরকম প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়, এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। আমার মনে হয়েছে, এটা শুধু আমার অফিসে তালা দেওয়া না, এটা আামাদের বাকস্বাধীনতার অবশিষ্ট যে সুযোগটুকু আছে সেটার মুখে তালা মারার প্রচেষ্টা।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেভাবে এসে তালা খুলে দিয়েছে, পোস্টার সরিয়েছে, আমি এটাকে ইতিবাচক ভাবেই দেখতে চাই। আমি মনে করি, আমাদের এখানে বক্তব্যের জবাব বক্তব্য দিয়ে দিতে হবে। বক্তব্যের জবাব যদি পেশি শক্তি দিয়ে, রাষ্ট্রীয়ভাবে শক্তি দিয়ে করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে প্রধান অর্জন ছিল আমরা গণতন্ত্র চর্চা করবো, বাকস্বাধীনতা চর্চা করবো, সহনশীল হবো, বঙ্গবন্ধুর যে শিক্ষা ছিল সেগুলোর তো পরিপন্থী কাজ হয়ে যায়। আমি মনে করি, আমাদের বাকস্বাধীনতার চর্চা যদি এভাবে ভুলণ্ঠিত করা হয় অবশিষ্ট যেটা আছে সেটাও আর থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।