বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্তরে ইউএনও’র বাসায় হামলা প্রতিরোধে পুলিশ ও আনসারের গুলিবর্ষন এবং সিটি মেয়র সহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পরে জনমনে নানা জিজ্ঞাসা থাকলেও বরিশাল মহানগরীর পরিস্থিতি শান্ত। তবে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও তার অনুসারী ৪শ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যা প্রচেষ্টার আরেকটি মামলা হয়েছে কোতয়ালী থানায়। আরে আগে সদর ইউএনও মেয়র সহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। পুলিশও ভিন্ন একটি মামলা করেছিল। সেখানে অবশ্য মেয়রের নাম ছিলনা।
তবে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার কোন ঘনিষ্ঠ মহলও বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলেননি। কারো মতে তিনি নগরীর কালীবাড়ী রোডের বাসাতেই আছেন। অসমর্থিত একটি সূত্রের মতে, মেয়র বৃহস্পতিবারই ‘বাইরে গেছেন’। মেয়রের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হওয়ায় তিনি ‘আইনগত ভাবেই এগুবেন’ বলেও ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। ‘উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে তিনি বরিশালে ফিরবেন’ বলেও অপর একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে মেয়রের অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ‘উদাশীন নয়’ বলে একাধীক সূত্রে বলা হলেও এব্যাপারে কতৃপক্ষীয় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে বরিশালের চলমান ঘটনার পরিনতি সম্পর্কে ‘সব কিছুই সময় বলতে পাড়বে’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এদিকে শণিবার রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকার মোহম্মদপুরের একটি বাসা থেকে মেয়রের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ হোসেন মান্নাকে গ্রেফতার করেছে বরিশাল মহানগর পুলিশ। এছাড়া বরিশাল মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মোমিন উদ্দিন কালুকে শণিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে মেয়রের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে সিটি করপেরেশনের কর্মচারীরা মানববন্ধন করেছে নগরীতে। এছাড়া দক্ষিনাঞ্চলের সব পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানগনও বিকেল পৃথক সংবাদ সম্মেলন আহবান করেছেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ শুক্রবার বিকেলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করে পুলিশ ও প্রশাসনকে কিছুটা হুশিয়ারীও দিয়েছে। সভাশেষে নগরীতে মহিলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিলও করে।
শুক্রবার নগরীতে ৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট-এর নেতৃত্বে পুলিশের একাধীক টিম টহলে ছিল। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় শণিবার ম্যাজিষ্ট্রেটদের ফেরত পাঠান হয়েছে।
অপরদিকে ‘প্রয়োজন না হওয়ায়’ আপতত বিজিবি’ও বরিশালে আসছেনা বলে জেলা প্রশাসনের দয়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসন বরিশালে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের আবেদনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে তা বরাদ্ব করে তাদেরকে ‘স্ট্যান্ডবাই’ রাখা হয়। পরিস্থিতি বিবেচবনায় আড়াই ঘন্টার মধ্যে বিজিবি বরিশাল মহানগরীতে হাজির হবার প্রস্তুতি ছিল বলে জানিয়ে শণিবার প্রশাসন সূত্রে ‘মহানগরীর পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক’ বলে জানান হয়েছে।
এদিকে কোতয়ালী থানার ওসি ইনেসপেক্টর নুরুল ইসলামকে সিলেট রেঞ্জে বদলী করে ২৫ আগষ্টের মধ্যে সেখানে যোগদিতে বলা হয়েছে। হবিগঞ্জের মানুষ নুরুল ইসলাম গত ৩ বছর বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
শুক্রবার ও শণিবার ছুটির দিন হওয়ায় নগরীতে জনসমাগম কম থাকলেও আইনÑশৃংখলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে কোতয়ালী থানা পুলিশ সহ ইউএনও দুটি মামলা দায়েরের পরে শুক্রবারে পুলিশ হত্যাচেষ্টা মামলায়ও মেয়র সহ ৪শ জনকে আসামী করায় নগরী অনেকটাই যুবলীগ ও ছাত্রী নেতা-কর্মী শূণ্য। বেশীরভাগ নেতারাও আত্মগোপনে রয়েছেন। প্রথম দুটি মামলাতেই বিপুল সংখ্যক ‘অজ্ঞাতনামা’কে আসামী করা হয়েছে। ফলে পুলিশ কাকে ধরবে বা কাকে ছাড় দেবে, তা এখনো স্পষ্ট না হওয়ায় বেশীরভাগ নেতা-কর্মী ¯œায়ুচাপে রয়েছেন। এমনকি যারা এতদিন এ নগরীতে ক্ষমতার দাপটে তাদের মুখের কথাকেই শেষ কথা মনে করছিলেন, তারাও ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে। গত দুদিনই নগরীর বেশকিছু নেতা-কর্মীর বাসবাড়ীতে খোজ খবর করেছে পুলিশ।
তবে বরিশাল মহানগরীতে বুধবার রাতের ঘটনার পরে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠতেও শুরু করেছে। যে পুলিশ ও প্রশাসন এতদিন যাদের সীমাহীন তোয়াজ করার পাশাপাশি তাদের সীমাহীন অনৈতিক কর্মকান্ডে আইনগত বাধা দেয়া দুরের কথা অনেক ক্ষেত্রে সমর্থনও যুগিয়েছে, তারা বুধবার রাতের ঘটনার পরে কতদিন এবং কতটা শক্ত অবস্থানে থাকবে। সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে সাধারন মানুষের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ে অনেক উৎসুক মানুষই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত দুদিন বিভিন্ন গনমাধ্যমে ফোন করে জানতে চেয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।