পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলে গেলেন দেশের প্রবীণ মুহাদ্দিস, ইসলামী চিন্তাবিদ, ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতা আল্লামা হাফেজ মুহাম্মাদ জুনায়েদ বাবুনগরী। বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা ও নানারোগে গতকাল দুপুর ১২টার কিছু পরে ৬৮ বছর বয়সে তার ইন্তেকাল হয়। কয়েকদিন আগে তার চোখে অস্ত্রোপাচার হয়েছিল। দীর্ঘদিন থেকে তিনি উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনী সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ৫ কন্যা ও ১ পুত্র রেখে যান। ১৯৫৩ সালে চট্টগ্রাম ফটিকছড়ির বাবুনগরে জন্মগ্রহণকারী আল্লামা বাবুনগরী ছিলেন একজন প্রতিভাবান মুহাদ্দিস। হাদীস শাস্ত্রের ওপর তার বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল। সর্বশেষ তিনি দেশের বৃহৎ ও প্রাচীনতম কওমী মাদরাসা দারুল উলুম হাটহাজারির শায়খুল হাদীস এবং অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির ছিলেন।
তার পিতা শায়খ আবুল হাসানও হাটহাজারি মাদরাসার মুহাদ্দিস ও হাদীস বিষয়ক গ্রন্থের লেখক ছিলেন। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী একটি ঐতিহ্যবাহী আলেম ও বুজুর্গ ঘরানার উত্তরসূরি। তাঁর নানার পিতা সুফী আজিজুর রহমান হাটহাজারি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। নানা মাওলানা শাহ মুহাম্মাদ হারুন ছিলেন বাবুনগর আজিজুল উলুম মাদরাসার প্রধান পরিচালক। বর্তমানে তাঁর মামা মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এ দায়িত্বে রয়েছেন। এ মাদরাসা থেকেই জুনায়েদ বাবুনগরী কোরআন হিফজ করে হাটহাজারি থেকে দাওরা পাস করেন, এরপর হাদীসের ওপর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বিদেশে যান। ১৯৭৮ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়ে একসময় হাটহাজারির মুহাদ্দিস নিযুক্ত হন। তিনি আল্লামা আহমদ শফী (রহ.) এর ছাত্র ও খলিফা ছিলেন। প্রথমে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব ও পরে আমির হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে কারাবরণ করেন এবং বহু মামলার শিকার হন।
সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আপসহীন আলেম হিসাবে তার সুখ্যাতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তিগত জীবনে পড়াশোনা ও অধ্যবসায়ে মগ্ন থাকতেন। আরবী ফার্সি ও উর্দু ভাষার কবি ছিলেন। তার কাব্য নাম ছিল জুনায়েদ শওক। তিনি নানা বিষয়ে ৩০টির মতো বই পুস্তক রচনা করেছেন। হাদীসহ অন্যান্য শাস্ত্রে সারাদেশে তার অসংখ্য ছাত্র রয়েছে। তিনি সদালাপী ও বন্ধুবৎসল মানুষ ছিলেন। বড় বড় সংকটে ধৈর্য ও দৃঢ়তা ধরে রাখতেন। শেষ সময়ে রোগভোগের ফলে তিনি মানসিক চাপ সহ্য করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। ইনকিলাবে বিভিন্ন তাত্তি¡ক বিষয়ে লেখা দিতেন। আমাদের প্রতিনিধিদের সাথে সুসম্পর্ক রেখেছেন। সাক্ষাতে তার কারান্তরীন সময়ে ইনকিলাবের সত্যনিষ্ঠ প্রতিবেদনে তার উপকারের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। দায়িত্বশীল কারো সাক্ষাৎ পেলে ইনকিলাবের সম্পাদক মহোদয়কে সালাম ও দোয়া জানাতে ভুলতেন না।
ইলমি ও আধ্যাত্মিক ধারা পরম্পরার উত্তরসূরি এই আলেম সত্যউচ্চারী আলেমদের জন্য আদর্শ। তার মৃত্যুতে এদেশের দীনি আকাশের আরো একটি নক্ষত্রের পতন হলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।