Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাস্তবায়ন শুরু ২০২৩ সালে নকশা দরপত্র দলিল ডিপিপি প্রস্তুত

ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রেল প্রকল্প

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

দক্ষিণাঞ্চলকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ বাস্তবায়নে অবশেষে বিস্তারিত নকশা, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, টেন্ডার ডকুমেন্টসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র রেলওয়েতে জমা দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে ট্রেন চালানোর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃসাহসিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন একধাপ অগ্রগতি লাভ করল। চলতি মাসের মধ্যে প্রকল্প পরিচালকের দফতর থেকে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র রেলওয়ের পরিকল্পনা বিভাগে যাচ্ছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। ৪১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ২১১ কিলোমিটার দীর্র্ঘ এ প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে ডিপিএমে ১টি প্যাকেজে বা ওটিএম পদ্ধতিতে ৪টি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হতে পারে। তবে সব কিছুই নির্ধারিত হবে একনেক সভায়। প্রকল্পটির জন্য এখনো দাতা পাওয়া যায়নি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও পিপিপি পদ্ধতিতে বিনিয়োগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ ব্যক্ত করলেও কিছুই চ‚ড়ান্ত হয়নি।
রেলপথ অধিদফতরের অনুমোদন শেষে ডিপিপিটি মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে আগামী মাসেই যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। রেলওয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আগামী ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্তি ও ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রেলপথ চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। পায়রা বন্দরের পরিপূর্ণ ব্যবহার ও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশেও এ রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ও টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরির লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের মার্চে প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তাবিত এ রেলপথ, স্টেশন ও জংশন স্থাপনের সমীক্ষাসহ বিস্তারিত নকশা জমা দেয়ার কথা থাকলেও কাজটি সম্পন্ন হয়েছে চলতি বছরের জুলাইতে। করোনা সঙ্কটের পাশাপাশি এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের কারণেও বিলম্বের কথা জানিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তাবিত রেলপথের কয়েকটি স্থানে পুনরায় জরিপ পরিচালনা করে নতুন এলাইনমেন্ট অনুযায়ী নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ রেলপথ নির্মাণের ফলে পায়রা বন্দর, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা, বরিশাল বিভাগীয় সদরসহ দক্ষিণাঞ্চল রেলপথে ভাঙ্গা জংশন হয়ে রাজধানী ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের সাথে সংযুক্ত হবে। তবে মূল প্রকল্প প্রস্তাবনায় ২০২৩ সালের মধ্যে এ রেলপথ চালুর লক্ষ্য থাকলেও সে সময়ের মধ্যে কাজ শুরু নিয়েই সংশয় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার প্রধান যথেষ্ট আগ্রহী হলেও মাঠ পর্যায়ে নানামুখী জটিলতা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সময়মত ডকুমেন্ট ও নকশা দিতে বিলম্ব করায় তা পিছিয়ে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে বরিশালের বাকেরগঞ্জের কাছে মূল এলাইনমেন্ট কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এতে জমির প্রয়োজনীয়তাও কিছুটা কমবে। পাশাপাশি লাইনটি পায়রা বন্দর ছুয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি ও পায়রা বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায় সম্পন্ন হলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনের পথ সুগম হবে। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের উদ্যোগে ফরিদপুর প্রান্ত থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করে তালমা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ চালু করা হয়। ১৯৮২ সালে পুকুরিয়া পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার রেল যোগাযোগ চালু হয়। লাইন নির্মাণের লক্ষ্যে ভাঙ্গা পর্যন্ত মাটির কাজ সম্পন্ন হয় এর আগেই। কিন্তু এরশাদ সরকার ক্ষমতা দখলের পরে ১৯৮৩ সালে ফরিদপুর-বরিশাল রেললাইন প্রকল্পটি বাতিল করে অধিগ্রহণকৃত ভ‚মি অবমুক্ত করার নির্দেশ দেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিভাগীয় সদর ও পায়রা বন্দরকে রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আনার গুরুত্ব অনুধাবন করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। ফরিদপুর থেকে পুকুরিয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত লাইন স্থাপন করে গতবছর ২৬ জানুয়ারি তা উদ্বোধনও করা হয়েছে। এখন ভাঙ্গা থেকে পুকুরিয়া-ফরিদপুর হয়ে রাজশাহী এবং রাজবাড়ী পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে।
রেলওয়ে সূত্র মতে, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি একনেকে চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করতে পারে। তবে এ রেললাইন নির্র্মাণে যে ৫ হাজার ৬৩৮ একর ভ‚মি অধিগ্রহণ করতে হবে, সে কাজেও অন্তত দু’বছর লেগে যেতে পারে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতিমালা নির্ধারণ, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, পরামর্শক নিয়োগসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতেও অন্তত ১ বছর লাগবে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা একনেকের অনুমোদনের পরে দ্রæততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ভ‚মি অধিগ্রহণ ও একই সাথে টেন্ডার আহবান করে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের বিষয়টি চুড়ান্ত করতে চাচ্ছেন। যাতে ২০২৩ সালের জুলাই নাগাদ অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়। ২০২৮ সালের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথে ট্রেন চালুর আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে ইচ্ছে করলে ভাঙ্গা-বরিশাল সেকশনের ৯৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্র্মাণ ৩ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করে রেল যোগাযোগ চালু সম্ভব বলে মনে করছেন একাধিক কারিগরি বিশেষজ্ঞ।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রস্তাবিত সিঙ্গেল লেন ব্রডগেজ রেলপথে মোট ১১টি স্টেশনের প্রস্তাব করেছে। এ রেলপথের জংশন থাকছে ফরিদপুরের ভাঙ্গাতেই। ভাঙ্গা থেকে একটি লাইন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় এবং অপর একটি লাইন ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল-যশোর হয়ে খুলনা ও বেনাপোলে যুক্ত হচ্ছে। প্রস্তাবিত রেলপথে ভাঙ্গার পরে টেকেরহাট, মাদারীপুর, গৌরনদী, বরিশাল বিমান বন্দর, বরিশাল মহানগর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, আমতলী, পায়রা বিমান বন্দর, পায়রা বন্দর হয়ে সর্বশেষ কুয়াকাটাতে স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্টেশনগুলোর ভবন দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ইলিশের আদলে নির্মাণের নকশা করা হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বরিশাল স্টেশনে কারশেড, জ্বালানির জন্য পিওএল ডিপোসহ আরো বেশ কিছু সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ