Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মাদারীপুরে শিক্ষার্থীকে অপহরণের পর জোরপূর্বক বিয়ে

আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করার পরে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক বিয়ে করেন এক তরুণ। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তালাক দেয় ওই শিক্ষার্থী। এরপর অপহরণের পরে উদ্ধার হয়ে থানায় মামলা করায় শিক্ষার্থীর পরিবারকে দিনের পর দিন হুমকি দিচ্ছে ওই যুবক। এমন অভিযোগ রয়েছে কলেজপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ মামলার প্রধান পলাতক আসামি বাবু হাওলাদারের বিরুদ্ধে। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলা কালিকাপুর ইউনিয়নের হোসনাবাদ এলাকার ফারুক হাওলাদারের ছেলে। বাবু হাওলাদার পলাতক হলেও শিক্ষার্থীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়েই যাচ্ছেন।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কলেজপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করে আসছিল বাবু হাওলাদার নামে এক যুবক। একাধিকবার পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাবও দেন তিনি। এলাকায় মাদকসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকায় বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি মেয়ের পরিবার। এতে ক্ষিপ্ত হয় বাবু। এর কিছুদিন পরে ২০২০ সালের ২ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে ওই তরুণী বাড়ির পাশেই তার বান্ধবীর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিল। সে সময় বাবু দু’জন সহযোগী নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে জোরপূর্বক ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার দুই মাস পরে ওই শিক্ষার্থী তার পরিবারের কাছে ফিরে এসে পুরো বিষয়টি খুলে বলেন। বাবু হাওলাদার তাকে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক শিবচরের পাঁচ্চর এলাকায় একটি বাসায় আটকে রাখে এবং পরে সুযোগ পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে।
শিক্ষার্থীর পরিবার জানায়, গত বছরের ৯ এপ্রিল শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান নামে এক কাজির মাধ্যমে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেও জোরপূর্বক বিবাহ করাতে বাধ্য করে বাবু। ওই শিক্ষার্থী তার পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে আর কোন উপায় না পেয়ে তালাক দেয় বাবুকে।
এরপর থেকে আবারো তাকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিল বাবু। এসবের ভয়ে ওই শিক্ষার্থীকে রাজধানীর ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে আসে তার পরিবার। দীর্ঘদিন পর গত ৬ আগস্ট বাড়িতে আসেন ওই শিক্ষার্থী। তার বিয়ের জন্য বাড়িতে মেহমান আসবে এমন খবরে বাবু দলবল নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে হামলা চালায়। তাদের বাধা দিলে নারীসহ ৩ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার কালিকাপুর থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং বাবুর সহযোগী বেলায়েত খানকে আটক করে। পরে রাতেই নির্যাতিতার মা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় বাবুকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নামে মামলা করেন। এরপর গত শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিপন হাওলাদার নামে মামলার ৮নং আসামিকে আটক করে মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। মামলার প্রধান আসামি বাবু হাওলাদারসহ অন্য আসামিরা এখনো পলাতক রয়েছে।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞাঁ বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই মামলার দু’জন আসামিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি আসামিদের ধরতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি পলাতক আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের কাছে বিবাহ রেজিস্টারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিবাহ রেজিস্টারের ব্যাপারে তার কোন গাফিলতি থাকলে সেটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এদিকে মামলার ঘটনার পর থেকে এলাকা থেকে পালিয়েছে বাবু হাওলাদারের পরিবার। যে কারণে বার বার তাদের বাড়ি গিয়েও কোন বক্তব্য নেয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জোরপূর্বক বিয়ে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ