নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
লিওনেল মেসিকে আর্থিক কারণে ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা। আগের চুক্তিতে যাঁর জন্য ৫ বছরে ৫০ কোটি ইউরো খরচ করেছে বার্সেলোনা, সেই মেসিকে এবার অর্ধেক বেতন দিয়েও ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা। কিছু খেলোয়াড়কে মাত্রাধিক বেতন দিয়ে আর অপ্রয়োজনীয় কিছু দলবদলের কারণে নিজেদের আর্থিকভাবে পঙ্গু করে তুলেছে তারা। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে নতুন কোনো খেলোয়াড়কে চুক্তিবদ্ধ করার জন্য দলের একাধিক খেলোয়াড় বিক্রি না করলে চলছে না বার্সেলোনার।
এ অবস্থাতেই আরেকটি দুঃসংবাদ পাচ্ছে বার্সেলোনা। মেসি যেমন ক্লাবটির সর্বাধিক বেতন পাওয়া খেলোয়াড় ছিলেন, তেমনি ক্লাবটির আয়ের সবচেয়ে বড় উৎসও ছিলেন। তার বিদায় যে ক্লাবটির স্পনসরদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ভবিষ্যতেও নতুন স্পনসরদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে বেশ ভালো দর-কষাকষিতে পড়তে হতে পারে কাতালানদের। এসবই ভবিষ্যতের কথা। বর্তমান হিসাব বলছে, মেসির বিদায়ে ক্লাবের ব্র্যান্ড মূল্য এক ধাক্কায় ১৩ কোটি ৭০ লাখ ইউরো বা ১৩৭০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা কমে গেছে বার্সেলোনার।
বিশ্ব অর্থনীতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড মূল্য নির্ধারণের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স। তার বলছে দলটির বাণিজ্যিক আয়, মাঠের খেলা ও ম্যাচের দিনের আয় আর জার্সিসহ অন্যান্য ক্লাব পণ্য ব্রিকি থেকেও রাজস্ব হারাতে বসেছে কাতালুনিয়ার ক্লাব বার্সেলোনা!
গত মৌসুমেই খবর এসেছে দেনার দায়ে ডুবতে বসেছে বার্সেলোনা। এমনকি গত জানুয়ারিতে দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কাতেও ছিল বার্সেলোনা। ১০০ কোটি ইউরোর বেশি দেনা ক্লাবটির। তবু ফুটবল বিশ্বে বার্সেলোনা তো বার্সেলোনাই। এখনো বিশ্বের নানা প্রান্তে সমর্থক সংখ্যা ও অনুসারীর দিক দিয়ে অনেক ক্লাবের কাছেই ঈর্ষণীয় তারা। ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স হিসাব করে দেখেছিল ২০২১ সালে ব্র্যান্ড মূল্যের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্লাব বার্সেলোনা।
বিশ্ববাজারে বার্সেলোনার ব্র্যান্ড মূল্য ১২৬ কোটি ৬০ লাখ ইউরো বলে জানিয়েছিল ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স। এ ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে এগিয়ে আছে শুধু রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্র্যান্ড মূল্য ১২৭ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। এই ১ কোটি ইউরোর ব্যবধানটা এবার বেড়ে যাবেই বলে ধারণা ব্র্যান্ড ফাইন্যান্সের। এই প্রতিষ্ঠানের ধারণা, শুধু মেসির বিদায়েই বার্সেলোনার ব্র্যান্ড মূল্য ১৩ কোটি ৭০ লাখ বা ১৩৭০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা কমে যাবে।
ব্র্যান্ড মূল্য নির্ভর করে একটি প্রতিষ্ঠানের আয়ের কত শতাংশ তার পরিচয়ের কারণে উপার্জিত হয়। ব্যান্ড ফাইন্যান্সের দাবি, মেসির বিদায়ের কারণে বার্সেলোনার ভবিষ্যৎ স্পনসর চুক্তি, ক্লাবের পণ্য বিক্রি এবং স্টেডিয়ামে টিকিট বিক্রিতে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী বার্সেলোনার সমর্থক সংখ্যাতেও টান পড়তে বাধ্য। এ সবকিছুরই প্রভাব পড়ে ব্র্যান্ড মূল্যের ওপর।
বার্সেলোনার আয়ের বিভিন্ন উৎসে মেসির প্রভাবের কথা বিবেচনা করে ব্র্যান্ড ফাইন্যান্সের ধারণা, বার্সার বর্তমান ব্র্যান্ড মূল্য ১১ শতাংশ কমে যাবে। অর্থাৎ ২০২১ সালে যে মূল্য ছিল, সেখান থেকে ১৩৭ মিলিয়ন ইউরো গায়েব হয়ে যাবে তাদের। এতে শুধু রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গেই ব্যবধান বাড়বে না, ব্র্যান্ড মূল্যে এ বছর তিনে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরও (১১৩ কোটি ইউরো) নিচে চলে যাবে বার্সা।
ব্র্যান্ড ফাইন্যান্সের ক্রীড়া বিভাগের প্রধান হুগো হেন্সলির ভাষায়, ‘মেসি বার্সেলোনা ব্র্যান্ডের সমার্থক এবং ১৫ বছর আগে যখন ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তখন থেকেই ক্লাবের মূল তারকা। তার উপস্থিতিই এই ক্লাবে বাড়তি সমর্থক, ভালো খেলোয়াড়, কোচ, বাণিজ্যিক চুক্তি এবং ট্রফি এনে দিয়েছে। তার বিদায় ক্লাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং এ কারণে ক্লাবের ব্র্যান্ড মূল্যও নিচে নামবে।’
বার্সেলোনার ব্র্যান্ড মূল্যে মেসি কীভাবে প্রভাব রাখতেন, তার একটি পরিষ্কার ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ব্র্যান্ড ফাইন্যান্সের ক্রীড়া বিভাগের পরামর্শক বেন বেইগ্রি। তার মতে, প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে মেসির উপস্থিতি বেশি প্রভাব ফেলত।
বাণিজ্যিক আয়
বিশ্বজুড়ে মেসির যে বিপুল পরিমাণ ভক্ত, সমর্থক ও অনুসারী, সেটা স্পনসরদের কাছে অনেক বড় ও লোভনীয় একটা বাজার। তার উপস্থিতিও বার্সেলোনার বড় স্পনসর চুক্তি পাওয়ার পথ করে দিত। ইনস্টাগ্রামে মেসির ২৪ কোটি অনুসারী আছেন। বার্সেলোনার ম‚ল অ্যাকাউন্টের অনুসারী সংখ্যা যেখানে ১০ কোটির নিচে (৯ কোটি ৯৫ লাখ)। মেসি ও বার্সেলোনার অনুসারী সংখ্যার এই পার্থক্য বলে দিচ্ছে যেকোনো দলের জন্যই মেসির উপস্থিতি কতটা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। তাই শুধু বাণিজ্যিক চুক্তির দিক থেকেই মেসির বিদায় বার্সেলোনার ব্র্যান্ড মূল্য ৭ কোটি ৭০ লাখ ইউরো কমিয়ে দেবে বলে ধারণা ব্র্যান্ড ফাইন্যান্সের।
মাঠের খেলা ও ম্যাচের দিনের আয়
মেসির বিদায়ে বার্সেলোনা কেমন খেলবে, সে আলোচনায় যাওয়া কঠিন। এটার উত্তর তিনটি হতে পারে। বার্সেলোনা মেসির অভাব বোধ করায় খুব বাজে খেলতে পারে, আবার তার অনুপস্থিতিতে গ্রিজমান-ডিপাইরা জ্বলেও উঠতে পারেন। ওদিকে দেখা গেল পারফরম্যান্সে কোনো উন্নতি বা অবনতি হবে না। কিন্তু বছরের পর বছর মেসি যেভাবে প্রভাব রেখেছেন বার্সেলোনার খেলায়, তাতে প্রথমটি সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এক যুগ ধরে প্রতি মৌসুমে অন্তত ৩০ গোল করেন মেসি।
এ ছাড়া মেসির বিদায়ের ফলে বার্সেলোনার খেলার প্রতি আগ্রহ একটু হলেও কমবে অনেক অনুসারীর। করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ শেষে মাঠে দর্শক ফিরলেও এখন আর গ্যালারি উপচানো দর্শক থাকবে কি না, সে সন্দেহ থাকছে। ফলে মেসির অনুপস্থিতি ম্যাচের দিনের আয় কমিয়ে দেবে বার্সেলোনার। শুধু ব্র্যান্ড মূল্যেই যে ঘাটতি ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরোর।
জার্সি ও অন্যান্য ক্লাব পণ্য বিক্রি
এত দিন বার্সেলোনার আউটলেট থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হতো ১০ নম্বর জার্সিটি। এ মৌসুমেও এখন পর্যন্ত যত জার্সি বিক্রি হয়েছে, তার অধিকাংশই মেসির জার্সি। এটা শুধু বার্সেলোনা নয়, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বার্সেলোনার জার্সি দেখা মানে সেটা মেসির জার্সি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২০ কোটি ইউরো জার্সি বিক্রি হয় মেসির নামে। যার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ (৩ কোটি) বার্সেলোনা পেত। বাকিটা বার্সেলোনার জার্সি নির্মাতা নাইকির পকেটে যেত।
মেসি যদি দল বদলে পিএসজিতে চলে যান, তাহলে নাইকির খুব একটা ক্ষতি হবে না। নেইমারদের ক্লাবের জার্সিও এই প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এখনো বার্সেলোনার মতো সমর্থকগোষ্ঠী গড়ে ওঠেনি পিএসজির। ফলে মেসির বার্সেলোনা জার্সি ও মেসির পিএসজির জার্সির বিক্রিতে একটু হলেও পার্থক্য থাকবে। ওদিকে বার্সেলোনা হারাবে পুরোটাই। মেসির জার্সি সরে যাওয়ার কারণে জার্সি, স্কার্ফসহ সব পণ্য মিলিয়ে ৪ কোটি ৩০ লাখ ইউরোর মতো ব্র্যান্ড মূল্য হারাবে বার্সেলোনা।
এ ছাড়া ব্র্যান্ড মূল্যের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ আয়ের কথাও মাথায় রাখতে হয়। বার্সেলোনায় যদি ক্যারিয়ারের বাকি সময়টাও থাকতেন, তাহলে কতটা মূল্য যোগ করতে পারতেন মেসি? ৩৬ বছর বয়সে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও ৩৯ বছর বয়সে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ এখনো খেলে যাচ্ছেন দুর্দান্ত গতিতে। ৩৪-এ পা রাখা মেসি তাই আরও পাঁচ বছর শীর্ষ পর্যায়ে খেলতেই পারেন। ফলে সে সুবাদেও বার্সেলোনার ভবিষ্যৎ ব্র্যান্ড মূল্য কিছুটা হলেও কমে যাচ্ছে।
২০১৮ সালে রোনালদোর চলে যাওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদের ব্যান্ড মূল্য ১৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল। মাঠে এখনো রোনালদোর ঘাটতি পূরণ করতে পারেনি রিয়াল। মাঠের বাইরেও এর প্রভাব পড়েছে। বার্সেলোনাও সে পথে হাঁটতে পারে। তবে মাঠের পারফরম্যান্সে রিয়াল যেভাবে পিছিয়ে পড়েছিল, বার্সেলোনার ক্ষেত্রে সেটা যদি না হয় এবং বড় কোনো তারকা যদি মেসির ঘাটতি পূরণ করতে পারেন খেলার দিক থেকে, সে ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড মূল্যেও কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে বার্সেলোনার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।