পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতির অভিযোগ কমছেই না তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। দুর্নীতির অভিযোগে ৮৮৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিভিন্ন জোনে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে কর্মকর্তা ৪৩৩ জন এবং কর্মচারী ৪৫০ জন। এছাড়া জ্বালানি বিভাগ ও দুদকে জমা আরো অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৯ সালে তিতাসের ২২ ধরনের অনিয়মের ফিরিস্তি মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও তা বাস্তবায়ন আজও পর্যন্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দাবি, অনিয়ম করলে এবার কেউ ছাড় পাবে না।
তিতাসের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর শুধু গণমাধ্যম নয়, দুদক আর মন্ত্রণালয়েও আলোচিত-সমালোচিত প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে তিতাসের ২২ ধরনের অনিয়মের ফিরিস্তি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সংযোগ, মিটার কারসাজি, কম গ্যাস সরবরাহ করেও সিস্টেম লস দেখানো, বাণিজ্যিক গ্রাহককে শিল্প শ্রেণির সংযোগ দিয়ে টাকা লোপাটসহ বিস্তর অভিযাতে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি রোধে প্রি-পেইড মিটার চালু, অবৈধ সংযোগ বন্ধ, নিয়মিত বদলি, দক্ষ জনবল নিয়োগ, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে দুদক। তবে সুপারিশ বাস্তবায়নে ২ বছরেও তেমন অগ্রগতি নেই।
গত বছর প্রতিষ্ঠানের বিলিং শাখার সিনিয়র ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হাছানুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি টাকার অবৈধ অর্থ উপার্জনের প্রমাণ পায় দুদক। এছাড়াও জালিয়াতির অভিযোগে তিতাসের ৫ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। অথচ কারো বিরুদ্ধেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ইনকিলাবকে বলেন, অপরাধ প্রমাণ হলে এবার বড় শাস্তি পেতে হবে। তিনি বলেন, আমরা নাম প্রকাশ করতে চাই না। ৩০-৩৫ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুদক সবার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে। আমরা আগামী একটা স্বচ্ছ তিতাস অফিস দেখতে চাই। তিতাসের এমডি আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, জানেনই তো, যেকোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে নিয়মনীতির মধ্যে থাকতে হয়। কয়েকজন বহিষ্কার করা হয়েছে। আবার কয়েকজনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে এবং কয়েকজন সতর্কতা করা হয়েছে। এরকম চলমান আছে, এগুলো চলছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, একটি মিটার নিতে এক কোটি টাকা দিতে হচ্ছে, শিল্প-কারখানার উদ্যোক্তারা প্রকাশ্যে এ অভিযোগ করেছেন। তিতাসের কর্মচারীরা ঘুষ নেয়। দুর্নীতি আর গ্রাহক হয়রানি বন্ধে তিতাসকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, দুর্নীতির অভিযোগের কারণে ৮৮৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিভিন্ন জোনে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে কর্মকর্তা ৪৩৩ জন এবং কর্মচারী ৪৫০ জন। জ্বালানি বিভাগ ও দুদকে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, গ্যাস একটি জাতীয় সম্পদ। রাজধানী ঢাকায় গ্যাস সরবরাহের জন্য ১৯৬৪ সালে গঠিত হয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। বর্তমানে তিতাসের ক্রেতাদের সংখ্যা মোট ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৮ জন। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সংযোগ ৫ হাজার ৩১৩টি, সিএনজি ৩৯৬টি, ক্যাপটিভ পাওয়ার ১৭০১টি, এছাড়া বাণিজ্যিক সংযোগ ১২ হাজার ৭৫টি, আবাসিক সংযোগ লাইন ২৮ লাখ ৫৫ হাজার ৩০২টি। লাকড়ির চুলা বা কেরোসিনচালিত স্টোভের পরিবর্তে গ্যাসের চুলায় রান্নার সুযোগ পেয়ে খুব স্বস্তিবোধ করেছিলেন ঢাকাবাসী। পরে এই সুযোগ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিস্তৃত হলেও তিতাস গ্রাহকদের সেই স্বস্তি আর থাকেনি। দিনে দিনে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি। বছর বছর গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলেও গ্রাহকসেবার মান যাচ্ছে তাই। আমলে নেয়া হয় না গ্রাহকদের গুরুতর সব অভিযোগও। তিতাসের এনফোর্সমেন্ট টিম গ্যাস লাইনের সমস্যা অনুসন্ধান ও সমাধানের দিকে নজর না দিয়ে বরং প্রকৃত বিল গোপন করা, অবৈধ সংযোগ, মিটার টেম্পারিং ও নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের পেছনেই বেশি সময় ব্যয় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই জ্বালানি নিয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তা উদ্বেগজনক।
গত ২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির ২২টি উৎস চিহ্নিত করে। তখন দুদকের প্রতিবেদনে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়। কিন্তু একটি সুপারিশও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। বলা হয়, তিতাসের অসাধু কর্মকর্তারা প্রতি মাসে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে মিটার টেম্পারিং করে থাকে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা রাজধানীর পার্শ্ববর্তী ৫টি এলাকায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৫৫টি অবৈধ গ্যাস সংযোগেরও সন্ধান পায়। গ্রাহকদের প্রকৃত বিল গোপন করা, সংযোগ নীতিমালা অনুসরণ না করা, সিস্টেম লস দেখিয়ে গ্যাস চুরিসহ নানা অপরাধের প্রমাণ মেলে তদন্তে। অবৈধ সংযোগ বাণিজ্য তিতাসের অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এখানেই বেশি দুর্নীতি হয়।
রাজধানীর ভেতরে এবং নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, নরসিংদীতে হাজার হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান অবৈধ গ্যাস সংযোগের মাধ্যমেই চলছে। ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাতারাতি ধনী হয়ে যাচ্ছেন। ঘুষ পেয়ে তিতাসের অসাধু লোকজন আবাসিকে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ না করে শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতি বেশি যতœবান হয়। টাকার অংকে শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো ও কমানো হয়। কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় একেবারেই গ্যাস সরবরাহ করা হয় না। আর এভাবেই সিস্টেম লস তিতাসের নিয়মে পরিণত হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) একবার তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণেই তিতাসে ৬ শতাংশের বেশি সিস্টেম লস হয়। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ গ্যাস সংযোগে তিতাসের লোকজনের আগ্রহের কারণে বৈধভাবে সংযোগ পাওয়া গ্রাহকদের জন্য এখন কষ্টসাধ্য। চোরাই লাইনেও গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে। সাধারণত রাতের আঁধারে অবৈধ ও চোরাই সংযোগগুলো দেয়া হয় যা তিতাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জানেন না। ঠিকাদার এবং নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো ঘুষ দেয়া হলেই সংযোগ মেলে বলে অভিযোগ করেছেন গাজীপুরের এক শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। বৈধ সংযোগ নিতে গেলে তিতাসের কর্মকর্তারাই অবৈধ সংযোগের প্রস্তাব দেয় বলেও জানিয়েছে তারা।
মিটার টেম্পারিং তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরেকটি বড় বাণিজ্য। ভ্রাম্যমাণ আদালত যখন গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, তখন অসাধু তিতাস কর্মীরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘুষ নিয়ে রাতের আঁধারে আবার পুনঃসংযোগ দিয়ে দেয়। এই দুর্নীতি দেখতে তিতাসের এনফোর্সমেন্ট টিমেরও কোনো মনিটরিং নেই। গ্যাসের মিটার টেম্পারিং করার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিতাসের লোকজন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য করছে। তারা মিটার টেম্পারিং করে গ্রাহকের গ্যাসের প্রকৃত বিল গোপন করে এবং কম বিল রিডিং নেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।