Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আক্ষেপের নাম ওপেনিং জুটি

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ দলের বর্তমান পারফরমেন্সে খুশির জোয়ার বইছে সারাদেশে। একটা সময় বাংলাদেশ একটা ম্যাচ জিতলেই আসিফ আকবরের ‘বেশ বেশ বেশ, সাবাস বাংলাদেশ..যাও এগিয়ে আমার বাংলাদেশ..’ গানটা শোনা যেত। এখন আর সেই ট্রেন্ড নেই। এখন আর বাংলাদেশ হঠাৎ করে জেতে না। এখন জয়টা হয়ে দাঁড়িয়েছে হরহামেশা ঘটনা। তাই আগের সেই সঙ্গীত আর লাউডস্পিকারে বাজে না। বেজে ওঠে হৃদয়ে। কারণ আমরা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনেকদূর এগিয়েছি।

এইতো বাংলাদেশ নামটা শুনলেই যে দলটি সবার আগে নাক ছিটকাতো, তাদের এখন, ‘ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি’ অবস্থা। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচেই শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে মাহমুদউল্লাহ ব্রিগেড। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত ছন্দে আছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তবুও মনের কোণে একটা আক্ষেপ যেন থেকেই যায়। তা হল ওপেনিংয়ের ভঙ্গুর অবস্থা। বাংলাদেশে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই তামিম ইকবাল নিজেকে এ পজিশনে থিতু করে নিয়েছেন। তার সঙ্গে জুটি বাঁধার জন্য পালাক্রমে সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মোহাম্মদ নাঈম, সাইফ হাসান, শেখ মেহেদী হাসানরা খেলেছেন ঠিকই। কিন্তু পারফেক্ট হতে পারলেন না একজনও!
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান সিরিজেও এ সমস্যাটা প্রকট আকার ধারন করেছে। তবে টানা জয়ের ভীড়ে প্রসঙ্গটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। এ সিরিজের পরিসংখ্যানটা এখনও কাঁচা। মনে আছে সবারই। তবুও বলার খাতিরে আরেকবার একটু বলে নিচ্ছি। প্রথম ম্যাচে ১৫, দ্বিতীয় ম্যাচে ৯, তৃতীয় ম্যাচে ৩! আর গতকাল চতুর্থ ম্যাচে ২৪। এ সিরিজের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের ওপেনিং সমস্যা যেন কাটছেই না!
টানা ব্যর্থতার পরেও সৌম্য-নাঈমেই আস্থা নির্বাচকদের। পজিশনটা একটু অদল-বদল করেও খেলানো যেত। তাতে সফলতা আসলেও আসতে পারতো। এরকম নজির ক্রিকেটবিশ্বে অসংখ্য না হলেও একেবারে কমও নেই। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেই পারতো। আর যদি ফর্মুলা কাজে না আসলেও তা দোষের কিছু হতো না। বরং যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে যেকোন পজিশনে খেলতে হতে পারে-এমন একটা ধারনা তৈরি হতো ক্রিকেটারদের। তাতে বাড়তো দায়িত্ববোধ। আত্মবিশ্বাসী হতে পারতো তরুণেরা।
গতকালের চিত্রটায় একটু চোখ বুলালে দেখা যাবে। ম্যাচের প্রথম তিন ওভারেই বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডের দৃশ্য ২২/০। মিরপুরের এ মন্থর উইকেটে এরচেয়ে ভালো আর কি আশা করা যায়! কিন্তু ক্রিজে যেন থাকতেই মন চাইলো না সৌম্যর। ম্যাচের চতুর্থ ওভারে জস হ্যাজেইলউডের রাউন্ড দ্য উইকেটে করা লেংথ বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। সৌম্য সেখান থেকেই পুল করতে যান, কোনো পজিশনেই ছিলেন না তিনি। ব্যাটে লেগে বল উঠে যায় ওপরে। মিড অফে সহজ ক্যাচ নেন অ্যালেক্স ক্যারি। সিরিজ জুড়েই নিজের ছায়া হয়ে থাকা সৌম্য গতকাল করলেন ১০ বলে ৮!
তবে স্রোতের বিপরীতে খেলে যাচ্ছিলেন আরেক ওপেনার নাঈম। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে রান করা নয়, তখন দলকে ‘যতদূর এগিয়ে নিতে পারি’ মনোভাবে খেলতে হয়েছে এ বাঁহাতিকে। ইনিংসের ১৫তম ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ মাত্র ৬৮। রান করার তাড়ায় মিচেল সোয়েপসনের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শেষ হয় তার ইনিংস। বিদায়ের আগে ৩৬ বল থেকে তিনি করেছিলেন ২৮ রান।
অথচ সৌম্য যদি তার ইনিংস লম্বা করতে পারতেন! তাহলে নাঈমেরও রানের তাড়ায় উইকেট বিলিয়ে দিতে হতো না। টপ-অর্ডারের বাকি ব্যাটসম্যানরাও শুরু করতে পারতেন ভালো একটি ভিত থেকে। বাংলাদেশ দলের এই ওপেনিং সমস্যার সমাধানসূত্র এখনও খুঁজে পায়নি বিসিবি। চলতি সিরিজের আগে শোনা গিয়েছিল প্রয়োজনে সাকিব কিংবা মোহাম্মদ মিঠুনকেও নামানো হতে পারে ইনিংস শুরু করতে।
এরআগে বায়োবাবলের ধাক্কায় সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। নতুবা তিনিও হতে পারতেন আরেক বিকল্প। পারিবারিক কারণে মাঠের বাইরে লিটন দাস। ইনজুরিতে ভুগছেন দেশসেরা ওপেনার তামিম। এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ ওপেনিং সমস্যা। এই আক্ষেপকে কবে আমরা আশায় রূপান্তরিত করতে পারবো? সেই উত্তরের অপেক্ষায় এখন গোটা দেশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আক্ষেপের নাম ওপেনিং জুটি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ