নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জাহেদ খোকন : তিন সেকেন্ডের আফসোস কি ভুলতে পারবেন রোমান-আশরাফুলরা? অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকির ফাইনাল শেষ হতে বাকী মাত্র ৩ সেকেন্ড। ঠিক তখনই স্বাগতিক বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারতের শিরোপা জয়ের জন্য ত্রাতা হয়ে উদয় হন শিভম আনন্দ। দুর্দান্ত এক শটে গোল করে তিনি দলকে আনন্দে ভাসান। এ গোলেই যেন বাজ পড়ে বাংলাদেশ শিবিরে। আর অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নেয় ভারত। গতকাল বিকালে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনালটি যেন গ্রæপ পর্বের কার্বন কপি হয়েই দেখা দেয়। গ্রæপ পর্বে স্বাগতিকরা ৫-৪ গোলে হারিয়ে ছিলো ভারতকে। সেই হারেরই মধুর প্রতিশোধ নিলো এবার ভারতীয়রা। ফাইনালে তারা লাল-সবুজদের হারালো একই ব্যবধানে। এ হারে বাংলাদেশ হতাশার সাগরে ডুবলেও ভারতীয়রা হয়ে ওঠে আনন্দে আত্মহারা। এমন হারের বেদনা যে ভুলার মতো নয়। পুরো টুর্নামেন্টে যারা প্রতিপক্ষ দলকে গোল বন্যায় ভাসিয়েছে, তারাই ফাইনাল শেষে কান্নায় ভাসলো। কি নিষ্ঠুর নিয়তি!
অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকির গ্রæপ পর্বে এই ভারতকেই ৫-৪ গোলে এবং ওমানকে ১০-০ গোলে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। শেষ চারের লাড়াইয়ে তারা চাইনিজ তাইপেকে ৬-১ গোলে হারায়। আর সেই বাংলাদেশ কিনা ফাইনালে এমনভাবে হারলো! তবে এই হার বীরের মতো। ম্যাচে দু’দু’বার এগিয়েছিল কিন্তু রোমান সরকার বাহিনীই। তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতার গড়ে বার বার আশাও জাগিয়েছিল তারা। তবে শেষ রক্ষা রআর হয়নি। জিততে পারেননি আশরাফুল, মহসিনরা।
কাল ফাইনালে দু’দলের লড়াইটা ছিল বাড়তি সতর্কতার। বলের পজিশন হারানো যাবে না এবং প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে গিয়েই শেষ করতে হবে আক্রমণ। এমন মন্ত্র নিয়ে দু’দলই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ উপভোগ্য করে তুলে। ম্যাচের শুরু থেকেই ভারত তাদের একাদশে পাঁচজন অ্যাটাকার অন্তর্ভুক্ত করে। তবে ম্যাচের ১৭ মিনিটে প্রথম ‘কুলিং ব্রেক’ নেয়ার পুর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ভারত মাত্র একবারই গোলের কাছাকাছি আসতে পেরেছিলো। ১৪ মিনিটে ধরমিন্দর সিংয়ের কোনাকুনি হিটটি পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে টার্ফের বাইরে চলে যায়। তবে ২০ মিনিটে প্রথম পেনাল্টি কর্ণার (পিসি) থেকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এসময় ফজলে রাব্বির পুশ, নাঈমের স্টপে ফ্লিক করেন বাংলাদেশের ড্র্যাগ অ্যান্ড ফ্লিক স্পেশালিস্ট আশরাফুল। বল এক ডিফেন্ডারের স্টিকে লেগে ফেরত এলেও ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা রোমান সরকার ঠাÐা মাথায় তা পাঠান বোর্ডে (১-০)। তবে এগিয়ে যাওয়ার উলাস দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের। দু’মিনিট পরই ম্যাচে সমতা আনে ভারত। ২২ মিনিটে দিলপ্রীত সিংয়ের থ্রু পাসে গোললাইন ধরে এগিয়ে যান মিডফিল্ডার শিভম আনন্দ। আড়াআড়ি এগিয়ে গিয়ে তিনি রিভার্স স্টিকে আলতো পুশে ফাঁকি দেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক ইয়াসিন আরাফাতকে (১-১)।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে আবারো এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্রæতগতির এক পাল্টা আক্রমণে সবুজ রহমানের জোরালো হিটে নিখুঁত ফ্লিক ভারতীয় গোলরক্ষক পংকজ রজককে ফাকি দিয়ে বল বোর্ডে আছড়ে পড়ে (২-১)। এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় রোমান সরকাররা। তবে ভাগ্যদেবী যেন দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের প্রতিই সুপ্রসন্ন হবেন। ৩৪ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে আবারো সমতাসূচক গোল করে ভারতীয়রা। এবার গোলদাতা হারদিক সিং। সানি মালিকের পুশে কুনওয়ারদিলরাজ সিংয়ের টার্ফ কামড়ানো হিটে গোলটি করেন তিনি (২-২)। সমতায় ফিলে যেন জ্বলে ওঠে ভারত। এবার বাংলাদেশ নয়, তারাই এগিয়ে যায়। ম্যাচের ৫১ মিনিটে ডিফেন্স ও গোলরক্ষকের ভুলে তৃতীয় গোল হজম করে স্বাগতিক দল। এসময় দিলপ্রীত সিংয়ের স্কয়ার পাসে রিভার্স পুস করেন কজেংবাম সিং। বলে তেমন গতি না থাকলেও বাংলাদেশ গোলরক্ষক ইয়াসিন আরাফাত তা ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি। ফলে বল গড়িয়ে গড়িয়ে গোললাইন অতিক্রম করে (৩-২)। পিছিয়ে পরে হাল না ছেড়ে নব-উদ্যোমে আক্রমণ চালায় লাল-সবুজরা। ৫৮ মিনিটে একটি পিসি আদায় করে নেয় তারা। এবার হতাশ করেননি পিসি স্পেশালিষ্ট আশরাফুল। রাব্বি ও নাইমের সহায়তায় গোল করে ফের সমতা আনেন আশরাফুল (৩-৩)। ম্যাচের ৬২ মিনিটে ফের কজেংবাম সিং একটি ফিল্ড গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেন (৪-৩)। ৬৪ মিনিটে আশরাফুলের দুর্দান্ত এক হিট পংকজ রজকের প্যাডে লেগে ফিরে এলেও তাতে রিভার্স হিট নেন স্বাগতিক ফরোয়ার্ড মাহবুব হোসেন। আর এতেই আসে সমতা সূচক গোল (৪-৪)। সমতায় ফেরার উলাসে মেতে উঠে বাংলাদেশ শিবির। তবে ম্যাচ যখন গড়িয়ে যাচ্ছিল শুটআউটের (টাইব্রেকার) দিকে। ঠিক তখনি বাজ পড়ার মতো ঘটনা ঘটে। ম্যাচ শেষ হতে তখন বাকী মাত্র ৩ সেকেন্ড। এসময় দুর্দান্ত এক শটে গোল করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করান শিভম আনন্দ (৫-৪)। আর এ গোলেই রচিত হয় বাংলাদেশ হকির স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস। ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন ভারত ও রানার্সআপ বাংলাদেশ দলকে ট্রফি তুলে দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। এসময় হকি ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার মার্শাল আবু এসরার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেক সহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।