গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
বিশেষ সংবাদদাতা : গত বছর বর্ষা মৌসুমে মত এবারের বর্ষাতেও মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর ভঙ্গুর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গোটা নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগে ফেললেও রাজনৈতিক কারণে দুর্বল নগর প্রশাসনের সেচ্ছা অন্ধত্ব ঘুচছে না।
ঘন্টায় ৫ থেকে দশ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই এনগরীর নবগ্রাম রোডটি সর্বাগ্রে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের রাস্তাটি প্লাবিত হয়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্রমে আরো ছোট-বড় রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে নগরীর কেন্দ্রস্থল সদর রোডটিও পানির তলায় চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই যে, ‘ধান-নদী-খাল এ তিনে বরিশাল’ এর বাস্তব চিত্র এখন বর্ষার এনগরীর রাস্তা ঘাটে চোখ মেললেই নির্মমভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। এমনকি অতীতে যেখানে কাকলীর মোড়টি প্লাবিত হতো না, সেখানে এখন পানি থৈ থৈ করছে। চরম দুর্ভোগ আর দুর্গতি ইতোমধ্যে বরিশাল মহানগরবাসীর নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠছে। বিপর্যস্ত নগর সভ্যতা।
চলতি মৌসুমে গত ২১ আগস্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বর্ষণের পরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর আরেক প্রবল বর্ষণে নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবার ফলে বেশীরভাগ রাস্তাঘাটের কংকাল গুড়ো হতে শুরু করেছে। ফলে এনগরীর নাগরিক পরিসেবা ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ। বরিশাল সিটি করপোরেশেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি শূন্য পড়ে আছে গত তিন মাসাধিককাল। ফলে এখানের প্রশাসনিক কর্মকাÐসহ সার্বিক কাজকর্মেও স্থবিরতা অব্যাহত রয়েছে।
গত ২১ আগস্ট সকাল সাড়ে ৪টা থেকে দুপুর পর্যন্ত স্মরণকালের ভয়াবহতম বর্ষণে বরিশালে ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বরও বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা মেঘমালা সকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝড়িয়েছে এ নগরীতে। ফলে বিপর্যস্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার এ নগরী আরো একবার ডুবেছে। তবে নগরীর রাস্তাঘাট ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার এ দুর্গতি আর নগরবাসীর দুর্ভোগ বর্তমান নগর প্রশাসনকেও যে ক্রমে ডোবাচ্ছে তা বুঝতে তাদের আর কতদিন সময় প্রয়োজন, সে বিষয়টি পরিষ্কার নয় এখনো। বিশাল মাথাভারী প্রশাসনের বরিশাল নগর প্রশাসন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত প্রদান করতে না পারলেও তাদের কাছ থেকে কাজ আদায়ের ব্যাপারেও সচেষ্ট নন।
এ নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্বিঘœ রাখতে প্রায় দেড় হাজার দৈনিক মজুরীভিত্তিক শ্রমিক থাকলেও তার অর্ধেকেরও বেশীর বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই। তাদের কাজই বা কি, সে বিষয়টি সম্পর্কেও বরিশাল সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল মহল তেমন কিছু বলতে পারছেন না। এমনকি বছরের পর বছর ধরে নগরীর যে কয়টি রাস্তা সামান্য বৃষ্টিতেই প্লাবিত হয়ে জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে, তার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাটি সচল রাখতেও সচেষ্ট নন নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। নগরীর কতিপয় নির্মাণাধীন বাড়ীর মালিক গত কয়েক বছর ধরে রাস্তা ও ড্রেনের কিনারা ঘেসে বহুতল অট্টালিকা তৈরি করছেন। কিন্তু তার সব নির্মাণসামগ্রী রাস্তা ও ড্রেনকে দখল করছে। ফলে অনেক ড্রেন ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। নগরীর নবগ্রাম রোডের অক্সফোর্ড মিশন রোডে মুখ ও মনসুর কোয়াটারের সামনের অংশে বালু ফেলে ড্রেন ভর্তি করা হয়েছে গত দু’বছর ধরে। বিষয়টি এলাকাবাসী বহুবার সিটি করপোরেশেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পরিচ্ছন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল মহলের নজরে আনলেও অদৃশ্য খুঁটির যোড়ে সমাজবিরোধী এ কর্মকাÐ বন্ধ হয়নি। ঐ এলাকার কাউন্সিলরও সেচ্ছা অন্ধত্বে ভুগছেন। ফলে গত দুটি বর্ষা মৌসুমেই সামান্য বৃষ্টিতে নবগ্রাম রোডের বিশাল অংশ পানিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। অথচ তিন দফায় অন্তত ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঐ রাস্তাটি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়েছে।
নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের রাস্তাটির অবস্থাও করুণ। সেখানেও সামান্য বৃষ্টিতে ব্যাংকের প্রধান ফটক পর্যন্ত পানিতে থৈ থৈ করছে। এখানে নির্মিত ও নির্মাণাধীন কয়েকটি বাড়ীর নির্মাণ সামগ্রীর কারণে দ্বীনবন্ধু সেন সড়কের পাশের পাকা ড্রেনের প্রায় পুরোটাই ভরাট হয়ে গেছে। অনুরূপ অবস্থা নগরীর প্রায় সবগুলো ছোট-বড় সড়কেরই।
গত ২১ আগস্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর প্রায় সাড়ে ৬শ’ কিলোমিটার রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করে সিটি মেয়র আহসান হাবীব কামাল ঐ নজিরবিহীন বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর ৪৬৬ কিলোমিটার বিটুমিনাস রাস্তার আড়াইশ’ কিলোমিটারেরও বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। এছাড়াও নদী তীরবর্তী প্রায় ৪১ কিলোমিটার বাঁধ ও মাটির রাস্তারও ব্যাপক ক্ষতি হয় ঐ বর্ষণে। তিনি এসব সড়ক অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্বাসনে ৬শ’ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে দাবি করে মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪১৩ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দাবি করেছিলেন। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। ২১ আগস্টের মাস পেরোতেই প্রায় অনুরূপ আরেক প্রবল বর্ষণে নগরী আরো একবার প্লাবিত হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর। ফলে ভাঙাচোড়া রাস্তার বের হয়ে আসা হাড়গোর এখন গুড়ো হতে শুরু করেছে। এ নগরীর বিধ্বস্ত রাস্তায় এখন প্রতিদিন প্রসব বেদনা শুরু হচ্ছে একাধিক গর্ভবতীর।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৫ লাখ জনসংখ্যার এ নগরীতে রাস্তার পরিমাণ সাড়ে ৬শ’ কিলোমিটারের মত। যার মধ্যে এখনো কাঁচা রাস্তাই প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার। ইট বিছানোÑ এইচবিবি রাস্তা রয়েছে ১২ কিলোমিটার এবং খোয়ার রাস্তা রয়েছে আরো ৩২ কিলোমিটার। নগরীতে এখনো ৩৬টি বাঁশের সাঁকো ছাড়াও কাঠের পুল রয়েছে ২২টি। আর নগরীজুড়ে পৌনে ৪শ’ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে কাঁচা ড্রেনের দৈর্ঘ এখনো প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার। আর পাকা ড্রেন ২১২ কিলোমিটারের মত। নগরীর অভ্যন্তরের প্রায় অর্ধেক ড্রেনই বুজিয়ে পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হলেও এখনো জেল খাল, নবগ্রাম রোড খাল, সাগরদী খালসহ নথুল্লাবাদ খালের অস্তিত্ব কোন ক্রমে টিকে আছে। এসব খালের দু’পাশের বাসিন্দারা ক্রমশ খালগুলোকেও গ্রাস করছে। এসব বিবেকহীন বসতদারগণ প্রকৃতির এ অপার দানকে গলা টিপে হত্যা করলেও তা দেখার কেউ নেই। পাশাপাশি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হবার কারণেও খালগুলো ক্রমশ অস্তিত্ব হারাচ্ছে।
তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সম্পতি বরিশাল জেলখানা খালের বেশ কিছু অংশ সংস্কার ও পরিষ্কার করা হলেও এখনো এর দু’পাশের জমি পুনরুদ্ধার সম্পন্ন হয়নি। জেলা প্রশাসন ও নগর ভবন যৌথভাবে জেল খাল নিয়ে অনেক পদক্ষেপ নিলেও নগরীর অন্য খালগুলোর ব্যাপারে তাদের খুব একটা ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমনকি গত ২১ আগস্টের প্রবল বর্ষণে নগরীর পশ্চিমাংশ পানিবদ্ধতায় আটকে গেলেও নবগ্রাম রোড খালটির পানির প্রবাহ অবরুদ্ধকারী নানা অবৈধ অবকাঠামো সরিয়ে ফেলতে নগর ভবন সচেষ্ট হয়নি। অথচ বিষয়টি নিয়ে এলাকার অনেক মানুষ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দায়িত্বশীল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের অনেক কাউন্সিলর এলাকায় থাকেন না। ফলে তারা এলাকাবাসীর ভালমন্দের তেমন কোন খোঁজ-খবরও রাখেন না। বেশীরভাগ কাউন্সিলর নগর ভবনে ঠিকাদারী করেন। ফলে জনসেবার চেয়ে নগর ভবনকে তারা ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক কর্মক্ষেত্র হিসেবেই বিবেচনা করেন বেশী।
তবে এসব বিষয়ে নগর ভবনের দায়িত্বশীল মহল যথারীতি তাদের সজাগ কর্মকাÐের কথা জানিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজরদারীসহ তৃণমূল পর্যায়ে জনসেবা অব্যাহত রয়েছে বলেও দাবী নগর প্রশাসনের দায়িত্বশীল মহলের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।