গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌর আড্ডায় আগতদের তালিকায় রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি। রিমান্ডে দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে দুই মডেল এ সব তথ্য জানিয়েছে গোয়েন্দাদের। অন্যদিকে পিয়াসার সহযোগী মিশু হাসানকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসময় তার বাসা থেকে অস্ত্র-মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার অন্যতম সহযোগী মিশু হাসান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় তারা দু’জনেই রিমান্ডে রয়েছেন। একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সাথে সম্পৃক্ত গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মডেল মৌ ও পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসছে। বিত্তশালী পরিবারের যুবক, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এদের আড্ডায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি যাতায়তের তথ্য রয়েছে আমাদের হাতে। এ ছাড়া আন্ডাগ্রাইন্ডের শীর্ষ অপরাধীসহ অন্য যারা যাতায়াত করতেন তাদের সম্পর্কে ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা পেয়েছি। এ সব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি জানান, এই চক্রের মাধ্যমে যেসব তরুণদের ব্ল্যাকমেইল করা হতো, সেগুলোর রফা করতেন পিয়াসা ও মৌ। পিয়াসার নেতৃত্বে এই চক্রের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মৌ। এই চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকে পথে নেমেছেন। সম্মানও হারিয়েছেন অনেকে। আবার অনেকের সংসারে দুর্যোগ নেমে এসেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হলেও সম্মানের কথা চিন্তা করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
পিয়াসার সহযোগী মিশুসহ দু’জন অস্ত্র-মাদকসহ গ্রেফতারঃ র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি ইমরান খান বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ মিশু হাসান ও তার এক সহযোগী জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানী গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে জানা যায়। আর এসব অভিযোগের বিষয়ে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। তারাই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর ও র্যাব-১ এর অভিযানে শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার দখল থেকে ১টি অস্ত্র, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদ, ইয়াবা ১৩ হাজার ৩০০ পিছ, ১টি ফেরারী গাড়ি, শিশার সরঞ্জামাদি, ২টি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই.এটিএম কার্ড, পাসপোর্ট, ভারতীয় জালমুদ্রা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য প্রায় ১০/১২ জন।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন আভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। উক্ত পার্টিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ পেয়ে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্ছবিত্ত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্তের প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরণের পার্টি আয়োজন করত। তারা ক্লাইন্টদের গোপন ছবি ধারণ করে অপব্যবহার করত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে ক্লাইন্টের চাহিদা, পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টি সমূহ আয়োজন করত। গ্রেফতারকৃতরা তাদের এই অবৈধ আয় হতে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগকরেছে। এই ব্যবসায় তাদের গ্রুপের সদস্যদের অবৈধ আয়েরও বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যবসায় অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে। গ্রেফতারকৃতদের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্চতা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান বাংলাদেশে নামী,দামী ব্রান্ডের বিলাশবহুল গাড়ীর ব্যবসা করে থাকে। সে বিলাসবহুল গাড়ী আমদানীরক্ষেত্রে অনিয়ম ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, রাজধানীর উপকণ্ঠে সান ডেইরি নামের একটি গরুর ফার্মের আড়ালে মিশু দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও অস্ত্রের কারবারে জড়িত। মিশু একসময় রাজধানীতে পেশাদার ছিনতাইকারী হিসেবে পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিলেন। পিয়াসা ও মিশুর অপরাধ কর্মকান্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।