বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) চলমান রয়েছে ফেনীতে। লকডাউন প্রতিপালনে সমগ্র ফেনী জেলায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ বিজিবি ও সেনাবাহিনী। লকডাউনের আজ ১১ তম দিন চলছে। সরেজমিনে সকাল থেকেই মহাসড়কের মহিপাল এলাকায় অসংখ্য মানুষ আর মানুষ, সড়কে হাইস, মাইক্রো, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক ও ছোটবড় পিকআপ ফ্লাইওভারের দুই পাশে অবস্থান করছে। সেখানে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ এসব গাড়িতে করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেখানে সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছুই নেই। বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। সেখানে দেখা যায় ঢাকার যাত্রীদের কাছ থেকে ড্রাইভাররা জনপ্রতি প্রাইভেট গাড়ির ভাড়া নিচ্ছেন ১৫০০ টাকা, হাইচ গাড়ির ভাড়া নিচ্ছেন জনপ্রতি ৮০০ টাকা আর কুমিল্লার যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছেন জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে। চট্টগ্রাম মুখী যাত্রীদের কাছ থেকে ড্রাইভাররা জনপ্রতি ভাড়া নিচ্ছেন হাইচ ৫০০ টাকা প্রাইভেট কার ৭০০ টাকা ও পিকআপ ও ট্রাকে করে জনপ্রতি ভাড়া নিচ্ছে ৪০০ টাকা করে।
ছকিনা বেগম কোলের দুই সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন তাকে জিজ্ঞেস করলে কোথায় যান তিনি বলেন, ভাই ঈদে বাড়িত আইছিলাম,এতো কষ্ট জাইনলে আইতাম না। বৃদ্ধ ইদ্রিস মিয়া বলেন, আমরা দুজন প্রাইভেট কারে ১৫০০ টাকা করে ৩ হাজার টাকা বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঢাকা যাচ্ছি ডাক্তার দেখাইতে। কিন্তু গাড়ি নাকি সাইনবোর্ড পর্যন্ত যাবে। ইলিয়াছ ও শফিক তারা দুই বন্ধু ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরী করেন। তারা আজকের মধ্যে না যেতে পারলে ক্ষতি হয়ে যাবে। এভাবে আরও কয়েকজন যাত্রী ও কারখানার শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,সরকার দেশে করোনার মহামারী রোধ করার জন্য লকডাউন দিয়েছেন। যানবাহন, অফিস আদালত কল কারখানা বন্ধ রেখেছেন কিন্তু এই মহুর্তে আবার গার্মেন্টস খুলে দিয়ে আমাদেরকে বিপাকে ফেলেছেন। তারা বলেন, শ্রমিকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে মাত্র একদিনের জন্য যানবাহন খুলে দিলেও বরং উপকার হয়েছে তাদের জন্য যারা ঈদের ছুটিতে বাড়িত এসেছিলেন। তারা বাসের টিকেট কেটে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। আর আমরা শ্রমিকরা কাউন্টারে এসে টিকেটও পায়নি। বাস বন্ধ হওয়ায় এখন এসব ছোট যানবাহনে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে আমাদেরকে যেতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, লকডাউনে মহিপাল কেন্দ্রিক কিছু অসাধু পরিবহন সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট নেতার ছত্রছায়ায় লালিত কিছু দালাল চক্র সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই গণপরিবহনের বিকল্প ছোট যানবাহন গুলো মহাসড়কে অবৈধভাবে চলছে ।
এ বিষয়ে ফেনীর টিআই (প্রশাসন) আহম্মদ নূর ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়। সড়কে গাড়ি চলছে তবে আইন অমান্য কারিদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলা দিচ্ছি। আমরা দায়িত্ব পালনে মাঠে তৎপর রয়েছি। এদিকে শহরের শহিদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক,ট্রাংক রোড,মডেল হাই স্কুল থেকে সেন্ট্রাল হাই স্কুলের সামনের সড়ক, কলেজ রোড,মিজান রোড,কোর্ট বিল্ডিং সড়ক,একাডেমী সড়ক ও হাসপাতাল মোড়ে প্রচুর রিকসা,ব্যাটারি চালিত রিকসা,সিএনজি চালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার,মটর বাইক, ভ্যান গাড়ি অবাধে চলাচল করছে। বিধিনিষেধ অমান্য করে সড়কে এসব যান চলাচল করছে। শহরের রাস্তাঘাট ভ্রাম্যমান সবজী,ফলমূল,কাপড় ও জুতা বিক্রেতার দখলে। কোন কোন জায়গায় যানজট সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। শহরে কারণে অকারণে মানুষের ভীড় বেড়ে গেছে। অনেকের মুখে মাস্ক নেই,অনেকে আবার স্টাইল করে মাস্ক মুখের থুথুনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু লকডাউনের শুরু থেকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। তবুও রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের ভীড় বেড়ে গেছে। এছাড়াও শহরের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান পাট,বাজার গুলোতে কোন ধরণের স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। সেখানেও সরকারী বিধিনিষেধ মানছেন না ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে শহরের দাউদপুল সংলগ্ন খাঁজা আহম্মদ পৌর পাইকারী তরকারীর আড়ত, বড় বাজার, ষ্টেশন রোডের সোলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেট, মহিপাল তরকারী বাজার গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু সংখ্যক ক্রেতাদের মুখে মাস্ক থাকলেও বিক্রেতাদের মুখে কোন মাস্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। এছাড়াও শহরের অভিজাত শপিংমল গুলো বন্ধ থাকলেও ফেনী বড় বাজারের নিউ মার্কেট,সওদাগর পট্রি,দর্জি পট্রি,খদ্দর পট্রি,জামান রোড,জেবি রোডের ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দোকানের চার্টার অর্ধেক খুলে রাখে। দোকানের বাহিরে লোক রেখে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করানো হয়। ক্রেতারাও উৎসাহ পেয়ে কেনা কাটায় অভ্যস্ত থাকেন। ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আসলে তারা চাটার নামিয়ে ভিতরে বসে থাকে। এসব কারণে তাদেরকে মাঝে মাঝে জরিমানা গুণতে হয়। করোনার মহামারীতে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছেন কিন্তু এ ব্যাপারে ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা এদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে আড়ালে রয়েছেন। এসব পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই যে ফেনীতে লকডাউন চলছে।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, লকডাউনের শুরু থেকে পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে। বিনা প্রয়োজনে মানুষকে ঘর থেকে বের না হতে এবং জরুরী প্রয়োজন ছাড়া শহরে ডুকতে নিষেধ করা হচ্ছে। শহরের মুল পয়েন্ট গুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
এদিকে ফেনীতে দিন দিন করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দৈনিক শনাক্ত ও উপসর্গ নিয়ে রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা যায়, গত ১০ দিনে ১ হাজার ২শ ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন। ফেনী জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১২ দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া ৬০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।