পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিআরবি একটাই। এটি এখন চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে বড় উম্মুক্ত স্থান। পাহাড় সবুজে ঘেরা ছায়া-সুশীতল সিআরবি নগরীর ফুসফুস। আর এই ফুসফুস কেটে চলছে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের আয়োজন। হেরিটেজ হিসাবে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যে ভরা এমন একটি এলাকা ধ্বংসের আয়োজনে হতবাক সর্বস্তরের মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং নার্সিং ইনস্টিটিউটের মতো বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ হলে বিরাণ হবে প্রাকৃতি শোভামন্ডিত সিআরবি। প্রতিবাদী কর্মসূচিতে তাই উচ্চারিত হচ্ছে- ‘হাসপাতাল চাই, তবে ফুসফুসের বদলে নয়’। হাসপাতাল অনেক হবে, কিন্তু একটাই সিআরবি। এটা ধ্বংস হলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
পূর্ব রেলের সদর দপ্তর সিআরবি এলাকায় রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনির ছয় একর জমি সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেডকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেখানে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হতেই তীব্র আন্দোলন শুরু হয় চট্টগ্রামজুড়ে। প্রতিবাদী জনতার আন্দোলন রূপ নিয়েছে সামাজিক আন্দোলনে।
নাগরিক সমাজের নেতারা বলছেন, চট্টগ্রামে ভালমানের হাসপাতালের প্রয়োজন আছে। তবে হাসপাতালের নামে সিআরবিকে টার্গেট করা কেন। অন্য যেকোন উপযুক্ত স্থানে হাসপাতাল হলে চাটগাঁবাসী স্বাগত জানাবে। কিন্তু সিআরবির পরিবেশ ধ্বংস করে কোন স্থাপনাই হতে দেওয়া হবে না। তথ্য গোপন করে সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প গ্রহণের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে। মাত্র কয়েক কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে সিআরবির শত শত কোটি টাকার জমি অন্যের হাতে তুলে দেয়ার আয়োজন চলছে বলেও অভিযোগ করেন নাগরিক সমাজের নেতারা।
তারা বলছেন, কতিপয় আমলা এবং কিছু চিকিৎসক এই চক্রের সাথে জড়িত। তারা নিজেদের স্বার্থে পরিবেশ ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে হাসপাতাল হলে অবকাঠামো খাতে তেমন বেশি ব্যয় করতে হবে না। কম দামে মিলবে সরকারি জমি। আবার চিকিৎসক যারা সেখানে কাজ করবেন তারাও সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। ঘুরে ফিরে নগরীর সবকটি হাসপাতালে তারা রোগী দেখবেন।
এই দুই পক্ষের অভিন্ন স্বার্থে সিআরবিতে হাসপাতাল করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, যারা নগরীর প্রাণকেন্দ্রে হাসপাতাল নির্মাণ করার পক্ষে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়ায় জড়িতদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে অভিযোগ দায়ের করারও হুমকি দিয়েছে আন্দোলনরত কয়েকটি সংগঠন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতাল কোথায় হলো সেটা রোগীরা বিবেচনা করে না। ভাল হাসপাতাল অনেক দূরে হলেও রোগী সেখানে ছুটে যাবেন। মানুষ উন্নত এবং ভাল চিকিৎসার জন্য বিদেশেও ছুটছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরের জেলা থেকেও রোগী আসছেন। আবার চট্টগ্রাম থেকেও অনেকে উন্নত চিকিৎসা, জরুরি অপারেশনের জন্য ঢাকা এমন কি ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, ভারত যাচ্ছেন।
পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চট্টগ্রাম বিভাগের নানা প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা সকালে সিরিয়াল পেতে গভীর রাত থেকে হাসপাতালের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ যদি মানসম্মত হাসপাতাল এবং সেবার মান নিশ্চিত করতে পারে তা হলে চট্টগ্রামের যে প্রান্তেই হোক হাসপাতালে রোগীর অভাব হবে না এমন অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক নাগরিক উদ্যোগ চট্টগ্রামের উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রামে ভালমানের হাসপাতালের অভাব রয়েছে। আমাদের আন্দোলন হাসপাতালের বিরুদ্ধে নয়। তবে সিআরবির প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নয়। ফুসফুস কেটে হাসপাতাল করতে দেওয়া হবে না। রেলওয়ের অনেক সমতল ভূমি পড়ে থাকার পরও তারা কেন সিআরবিতে হাসপাতাল করতে চাইছে, তার উদ্দেশ্য হলে প্রকৃতি ধ্বংস করে জমি গ্রাস করা।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজি হাসান বিন শামস বলেন, আউটার রিং রোড, কর্ণফুলী টানেল, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ব্যাপক উন্নয়নের ফলে মহানগরী চট্টগ্রাম বদলে গেছে। নগরী দ্রæত সম্প্রসারিত হচ্ছে। টানেল চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামেও ব্যাপক নগরায়ন হবে। সুতরাং হাসপাতালের মতো স্থাপনা তৈরীর এখন উপযুক্ত জমির অভাব নেই। বিশে^র অনেক দেশে সাগর তীরে হাসপাতাল আছে। হেরিটেজ ঘোষিত এবং সংরক্ষিত সিআরবি বাদ দিয়ে অন্য কোন এলাকায় হাসপাতাল হলে আমরাও অনুমতি দেব সহযোগিতা করবো।
চমেক হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাল হাসপাতালের দরকার আছে। তবে তা দক্ষিণ চট্টগ্রামে হলে ভাল হয়। তবে চট্টগ্রামে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আদৌ প্রয়োজন আছে কী না তা ভেবে দেখা দরকার। কারণ গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হয়েছে, অনেক কলেজে শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। সিআরবিতে একদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ অন্যদিকে পাশে গণবসতিপূর্ণ এলাকায় হাসপাতাল হলে পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, সিআরবি বাদ দিয়ে অন্য যেকোন উপযুক্ত জমিতে হাসপাতাল হলে আমরা স্বাগত জানাবো। যেদিন তারা ইট, বালু নিয়ে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু করবে ওই দিন তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করবো। তবে পরিবেশ ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে প্রতিহত করবো।
নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দেয়া স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। তাতে হাসপাতালের জন্য বিকল্প স্থান হিসাবে পাহাড়তলী অথবা রেলওয়ের যে কোন সমতল ভূমির প্রস্তাব দেয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।