মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : বিংশ শতাব্দীর অন্যতম নৃশংসতম গণহত্যা চালিয়েছিল জার্মানির হিটলারের নাৎসি বাহিনী এ কথা সবারই জানা। ইহুদি, সংখ্যালঘু, রোমানি যাযাবর, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং যুদ্ধবন্দিদের ওপর চালানো ওই ভয়াবহ নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞকে হলোকস্ট নামে অভিহিত করা হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিশেষজ্ঞের দীর্ঘ গবেষণার প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুদ্ধ-পরবর্তী অনেক হিসাব-নিকাষই পাল্টে গেছে। জানা গেছে, যতখানি জানা আছে সবার, নাৎসি হলোকস্টের ছিল আরও ভয়াবহ রূপ। তিন দশক আগে যযুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের গবেষকরা জার্মানির নাৎসি বাহিনীর ইউরোপব্যাপী গড়ে তোলা হলোকস্ট নির্যাতনের ওপর তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। তাদের পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৩-১৯৪৫ সালে হিটলারের শাসনামলে ইউরোপজুড়ে জার্মানি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রায় ৪২ হাজার ৫০০ নাৎসি বাহিনী নির্মিত ক্যাম্প ও গ্যাটো খুঁজে পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, আগে ধারণা ছিল, ক্যাম্প ও গ্যাটোর সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি এই গ্যাটোগুলোতে ইহুদি ও সংখ্যালঘুদের ছোট জায়গায় প্রচুর মানুষকে মানবেতর ও জনাকীর্ণভাবে রাখা হতো। নতুন এই তথ্য পাওয়ার পর ওয়াশিংটনের জার্মান হিস্টরিকাল ইন্সটিটিউট পরিচালক হারমুট বারঘফ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা আসলে যা ভেবেছিলাম, এই সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। নথিভুক্ত এই ক্যাম্পগুলো যে শুধুমাত্র মানুষ হত্যায় ব্যবহার হতো, তা নয়। ক্যাম্পগুলোতে জোর করে বন্দিদের দিয়ে কাজও করানো হতো। কেয়ার সেন্টার নামে কিছু ক্যাম্প ছিল, যেখানে গর্ভবতী নারীদের জোর করে গর্ভপাত করানো হতো অথবা জন্মের পরই নবজাতকটিকে হত্যা করা হতো। আর সেখানে ছিল হাজারো পতিতালয়। এই ক্যাম্পগুলোতে বন্দি নারীদের ওপর নির্যাতন চালাতেন জার্মানির সামরিক কর্মকর্তারা। অসউইটজ বা অন্য নির্যাতন ক্যাম্পগুলো নাৎসি বাহিনীর কিলিং মেশিনে পরিণত হয়েছিল। তেমনিভাবে নাৎসি বাহিনীর ইহুদি পরিবার বন্দিপ্রক্রিয়ার জন্য কুখ্যাত ছিল। গবেষকরা ক্যাম্প ও গ্যাটোগুলো চিহ্নিত করতে যে ম্যাপ তৈরি করেছেন, সেটা যুদ্ধকালীন ইউরোপকে মৃত্যু, নির্যাতন এবং দাসত্বের কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত করেছিল। প্রকল্পের প্রধান সম্পাদক জিওফ্রে ম্যাগারগি ও মারটিন ডিনের হিসাব অনুযায়ী, সে সময় ১৫-২০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা বা বন্দি হয়েছিল। আগে ক্যাম্প বা গ্যাটোগুলো সম্পর্কে স্থানভেদে ব্যক্তিগতভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু এবার প্রায় ৪০০ সহযোগীর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হলোকস্ট থেকে বেঁচে আসা হেনরি গ্রিনবম নাৎসিদের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি অসউইটজে মাসের পর মাস বন্দি ছিলেন। সে সময় তাকে অন্য ক্যাম্পেও নেয়া হয়েছিল। সেখানকার স্মৃতি তার হাতে খোদাই করা ‘ক্যাম্প নাম্বার এ১৮৮৯৯১’র মতোই এখনো উজ্জ্বল। তিনি জানান, তার বাসভূমি পোল্যান্ডের স্টারাচয়িস থেকে ১৯৪০ সালে তিনিসহ অন্যান্য স্থানীয় ইহুদিদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের ছয় ফুট লম্বা দেয়াল ঘেরা এক দাসশ্রম ক্যাম্পে নেয়া হয়, সেখানে তিনি ও তার এক বোনকে রাখা হয়েছিল। আর তার পরিবারের অন্যদের ট্রিবিস্লঙ্কায় হত্যা করা হয়। সে সময় তাকে দিয়ে দিনে কারখানায় ও অন্য সময় নির্যাতনের শিকার মৃতদের লাশ মাটিচাপা দিতে পরিখা খনন করানো হতো। তাকে পাঁচ বছরে পাঁচটি ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ১৯৪৫ সালে মার্কিন সেনারা তাকে উদ্ধার করে। ড. ম্যাগারগি বলেন, এই প্রকল্প মানুষের হলোকস্ট সম্পর্কে ধারণায় পরিবর্তন আনবে। বিশেষ করে, হলোকস্ট বিশেষজ্ঞরা ক্যাম্প ও গ্যাটোগুলোর বিস্তৃতির বিষয়টি বুঝতে পারবেন। ১৯৩৩ সালে হিটলারের শাসনামলের শুরুতে ১০ হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ১১০টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এরপর জার্মানি যখন ইউরোপের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো দখল করছিল, এই ক্যাম্প ও গ্যাটোগুলোর বিস্তৃতি ও গণহত্যা বাড়ছিল। নিউইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।