বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
উপকূলীয় জেলা বরগুনার রক্ষাকবচ বেড়িবাঁধ নিয়ে প্রতিনিয়তই চরম দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে জেলাবাসীর। শুধুমাত্র যে দুর্যোগ এলে উপকূলবাসীর মনে আতঙ্ক থাকে এরকম নয়, সব সময়ই বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন আতঙ্ক নিয়ে থাকছে প্রান্তিক উপকূলের মানুষজন।
প্রতিবছর এপ্রিল-আগষ্ট মাসে উপকূলে জোয়ারের উচ্চতা অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়। ভরা পূর্ণিমায় জোয়ারের এ উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় ৭-১০ফুট বেড়ে যায়। ভরা অমাবশ্যা বা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে। এসকল ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীসহ সাগর হয়ে পড়ে চরম উত্তাল। তখন ঝড়ের প্রভাবে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকে প্রবল। উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রায় ৫শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নাজুক থাকায় প্রতিবছরই কমবেশী প্লাবিত হয়ে থাকে। নাজুক এসকল বেড়িবাঁধ ঘিরে বসবাসরত জনগোষ্ঠির প্রতিনিয়তই শঙ্কিত থাকতে হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ৮০৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরও নানা কারণে জেলার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাঁধের উচ্চতা বাড়েনি। জেলার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বাঁধের উচ্চতা ১৩ ফুটের একটু বেশি। অন্যদিকে পূর্ণিমার জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস মিলিয়ে ১৫ থেকে ১৮ ফুট উচ্চতায় নদ-নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা করার পাশাপাশি প্লাবিতও হয়ে থাকে।
পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ইনকিলাবকে বলেন, ‘ঝড়-বন্যার সময় কর্তৃপক্ষের বাঁধ নির্মাণে টনক নড়ে। এসব থেমে গেলে তাদের আর খবর থাকে না। বর্ষা মৌসুম আসলেই বাঁধ নির্মাণ করার জন্য আসেন তারা। যার কারণে বাঁধের স্থায়িত্ব থাকে না।’ তিনি টেকসই বাঁধের জন্য শুকনো মৌসুমে নির্মাণ করার দাবি জানান।
মোতালেব হাওলাদার আরও বলেন, ‘সিডরের সময় ভেঙে যাওয়া বাঁধ এখনও মেরামত করা হয়নি। এই এলাকার জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে হলে যুগোপযোগী বাঁধ নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরী। গত বছর বরগুনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক সরেজমিনে পদ্মার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত মেরামতের জন্য জনগণকে আশ্বস্ত করেন, কিন্তু কোনো কাজের কাজ অদ্যোবধি হয়নি। এই বাঁধের কারণে আমরা সর্বোচ্চ হারিয়ে আজ নিঃস্ব।’
এ বিষয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তÍতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার মোঃ জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, ‘জেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ৪-৫ ফুট উচ্চতারও বেড়িবাঁধ রয়েছে। এছাড়াও সিডর, আইলা, মহাসেন ও ইয়াসে যেসব বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাও পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি। একারণেই বরগুনার মানুষ জলোচ্ছ্াসে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
নাজুক বেড়িবাঁধের কারণে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বরগুনায় যুগোপযোগী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা অত্যাবশ্যক। এটা এখন এ জেলার মানুষের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, বরগুনায় যে বাঁধ আছে তা পাকিস্তান আমলের। এরপর আর উল্লেখযোগ্যভাবে বরগুনায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে বরগুনার সিংহভাগ বাঁধ পানির প্রবাহ প্রতিহত করার জন্য মোটেই উপযোগী নয়। কারণ পানি প্রবাহের তুলনায় অনেক বাঁধই নিচু। তাই যুগোপযোগী বাঁধ নির্মাণ করা এ জেলায় অত্যন্ত আবশ্যক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘জেলায় ১৩ ফুট বা তার একটু বেশি উচ্চতার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার নবিড়িবাঁধ আছে। নানা কারনে এসব বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। তাই আমাদের শঙ্কা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যদি ১৩ ফুটের অধিক উচ্চতায় নদ-নদীর পানি প্রবাহিত হয়, তাহলে এই সকল বাঁধ প্লাবিত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কোনো এলাকার বা কোনো স্থানের বাঁধ প্লাবিত বা ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করলে ওই এলাকা পুরোপরি নিমজ্জিত হবে না। কারণ বরগুনা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর নির্মাণের ফলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই যে এলাকায় পানি প্রবেশ করবে, ওই এলাকায়ই পানি আবদ্ধ থাকবে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা বরগুনার প্রায় ১০০ মিলোমিটার বেড়িবাঁধ যুগোপযোগীভাবে নির্মাণ করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এ প্রস্তাব অনুমোদন পেলে অন্তত এই শঙ্কা কিছুটা কমে আসবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।