Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাগেরহাটে অর্ধলক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি

ভেসে গেছে ৫ হাজার মাছের ঘের, কোটি কোটি টাকার ক্ষতি

বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২১, ৭:৪৩ পিএম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার অর্ধলক্ষাধিক পরিবার। ভেসে গেছে পুকুর, ৫ হাজার চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের। দমকা হাওয়ার সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের কারণে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘরের বাইরে বের হননি,তাই প্রতিটি সড়ক ফাঁকা দেখা গেছে।

বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাট পৌরসভা, জেলাসদরসহ বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি কাঁচা-পাকা সড়কও ডুবে যায়। সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘরের ভিতর পানি উঠে যাওয়ায় রান্না বন্ধ রয়েছে বহু পরিবারের।

উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলার অসংখ্য এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা না পারছেন বাইরে যেতে, না পারছেন রান্না করে খেতে। ভেসে যাওয়া ঘেরের মাছ বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন মাছ চাষিরা।

রামপাল উপজেলার খোকন বলেন, বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি জমে গেছে। ঘেরের মাছ বের হয়ে গেছে। সবজিরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপকভাবে।

একই উপজেলার শরিফুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমাদের এলাকার অনেক ঘর বাড়ি ডুবে গেছে। গাছপালা পড়েছে অনেকের। ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। খুবই সমস্যায় পড়েছি আমরা।

রামপাল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আসাদুজ্জামান জানান, অতি বৃষ্টির কারণে রামপালে মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ পানিতে ডুবে ৩৫৪২ টি পুকুরে মোট ৭০ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা, ৩২৩৭ টি ঘেরে মোট ৩ কোটি ৮৪ হাজার টাকা এবং মোট অবকাঠামো ক্ষতি ৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ৷ এ পর্যন্ত প্রাথমিক তথ্যে রামপালে মােট মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ৷ ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তা ৷

এদিকে শরণখোলা উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত।

তিনি বলেন, শরণখোলা উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। লোকালয়ের পানি নামানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

দুপুরে বাগেরহাট পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগে অর্থ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল বাকী তালুকদার পানিবন্দিদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন। বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নির্দেশনায় এই খাবার বিতরণ করা হয়।

আলহাজ্ব আব্দুল বাকী তালুকদার বলেন, পানিবন্দিরা রান্না করতে না পেরে না খেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে এমনটা জেনে সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নির্দেশনায় তিনি এই খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।

খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, বাগেরহাটের সাদা মাছের পোনা, চিংড়ি মাছের পোনা, কাঁকড়া খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৫ হাজার চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। প্রাথমিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর ও কচুয়ার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধলক্ষ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাগেরহাট

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ