Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফগান ধাক্কায় বেসামাল বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:২২ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বাংলাদেশ : ২০৮/১০(৪৯.২ ওভারে)

আফগানিস্তান : ২১২/৮(৪৯.৪ ওভারে)
ফল : বাংলাদেশ ২ উইকেটে পরাজিত।
শামীম চৌধুরী : ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে। স্লগের বোলিংয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ৭ রানের সেই জয়েও যে শিক্ষা দিয়েছে আফগানিস্তান, তা থেকে শিক্ষাটাই যে নিতে পারেনি মাশরাফিরা। যে ম্যাচে ওয়ানডের শততম জয়ের মঞ্চ প্রস্তুত করার কথা ছিল, ২২ তম ওয়ানডে ট্রফি নিশ্চিত করার সেই পরীক্ষায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ দল। প্রথম ম্যাচে ৭ রানে হেরে প্রতিজ্ঞ আফগানরা দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে দারুনভাবে ফিরেছে সিরিজে।
পঞ্চম জুটিতে মোহাম্মদ নবী-আসগর স্ট্যানিকজাইয়ের ১০৭ রানের পার্টনারশিপে ইনিংসের মাঝামাঝি সময়েই ম্যাচটা হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম। সেখান থেকে মাশরাফির ব্রেক থ্রু, ডেব্যুটেন্ট মোসাদ্দেক সৈকতের কৌশলী বোলিংয়ে উইকেট এবং শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সাকিবের উইকেট শিকারের সেঞ্চুরিতে ম্যাচে ফেরা বাংলাদেশ দেখেছে সেঞ্চুরি জয়ের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে মুশফিকুরের অমার্জনীয় একটি অপরাধে! শেষ ২৪ বলে যখন ১৫ রানের লক্ষ্য আফগানদের, নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তখনো কিন্তু ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ। ৪৭তম ওভারে মোসাদ্দেকের বলে হাফ পীচে এসে খেলতে যেয়ে নজিবুল্লাহ জাদরান নিজেও যেখানে স্ট্যাম্পিংয়ে তার মৃত্যু ধরে নিয়েছে, সেখানে মুশফিকুরের গ্লাভস থেকে বল গেছে ফসকে! সেই সঙ্গে ফসকে গেছে ম্যাচও। অবধারিত উইকেট হাতছাড়া হওয়ার বঞ্চনায় অভিষিক্ত মোসাদ্দেক মনোবল হারিয়ে ৪৯তম ওভারে আর ভয়ংকর হতে পারেননি। শেষ ১২ বলে ১১ রানের লক্ষ্য অতিক্রমে ডাগ আউটে বসে-দাঁড়িয়ে থাকা আফগান কোচিং স্টাফ যেখানে সন্দিহান, সে সন্দেহ দূর করতে মিরওয়াইজের হাতে খেয়েছেন ছক্কা মোসাদ্দেক। শেষ ওভারে ২ রানের টার্গেট পাড়ি দিতে তাসকিনের প্রথম ২টি বল ডট করে,পরের ডেলিভারীতে পয়েন্টে দৌলত জাদরান ক্যাচে ফিরেও জয় থেকে বঞ্চিত হয়নি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে বাউন্ডারি শটের সঙ্গে সঙ্গেই ২বল হাতে রেখে ২ উইকেটে জিতে গেছে আফগানিস্তান! আড়াই বছর আগে ফতুল্লায় বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারিয়ে উৎসবে ফেটে পড়েছে আফগানিস্তান। সেই আফগানিস্তান কিন্তু গতকাল জিতে করেনি উৎসব! উৎসবটা নাকি রেখে দিয়েছে আফগানরা পরবর্তী ম্যাচের জন্য।
স্লো উইকেটের ফাঁদ পেতে আফগানদের শিকার করতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। উল্টো নিজেদের সেই পাতা ফাঁদেই পা দিয়েছে বাংলাদেশ। হোমে প্রায় ২ বছর স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে অভ্যস্ত বাংলাদেশ দলের সাফল্যে রেখেছে অবদান পেস বোলাররা, সেই পেস বোলারদের নির্বিষ করেছে হঠাৎ উপহার পাওয়া স্লো উইকেট! বরং এই স্লো উইকেটটাই যেনো কাম্য ছিল আফগানিস্তানের। স্লো উইকেট উপহার পেয়ে ভয়ংকর রূপ ছড়িয়েছেন তিন আফগান স্পিনার (নবী ২/১৬), রশিদ খান (৩/৩৫)ও রহমত শাহ (১/৩০)। ব্যাটসম্যানদের শটস সিলেকশনের ভুলে স্কোরটা ২০৮ পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ মোসাদ্দেকের নেতৃত্ব দেয়া শেষ জুটির ৪৩ রানে। ওয়ানডে অভিষেকে ব্যাটিংয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন মোসাদ্দেক (৪৮ নট আউট)।
শ্লো উইকেটে আসলেই বড় নির্বিষ ছিল দুই পেস বোলার তাসকিন,রুবেলের বোলিং। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ১৩টি ওয়ানডে জয়ে অবদান রাখা এই পার্টনার আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলমান সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্লগের বোলিংয়ে বাংলাদেশকে হাসালেও গতকাল বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলেছে এই দুই পেসারই। উইকেটহীন রুবেলের খরচা ওভারপ্রতি ৮ রান (৩ ওভারে ২৪), সেখানে ১ উইকেটের বিপরীতে তাসকিন ২৭ বলে আফগানিস্তানকে উপহার দিয়েছেন ৩২ রান! সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন মাশরাফি (১০-০-৩১-১)। অভিষেক ইনিংসে মোসাদ্দেকের বোলিং (১০-১-৩০-২), বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল (১০-০-৩৮-০)ও প্রানান্ত চেষ্টা করেছেন। এক ভেন্যুতে ওয়ানডে ক্রিকেটে উইকেটের সেঞ্চুরি এতোদিন ছিল শুধুই পাকিস্তান লিজেন্ডারী ওয়াসিম আকরাম (৭৭ ম্যাচে ১২২ উইকেট) এবং ওয়াকার ইউনুসের (৬১ ম্যাচে ১১৪ উইকেট। সারজায় ওই দুই কৃতিমানের কৃতি’র পাশে গতকাল জায়গা করে নিয়েছেন সাকিব। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সাকিব উইকেট শিকারের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন (৭০ ম্যাচে ১০০ উইকেট)। তবে এমন মাইলস্টোনের দিনে তার বোলিং (৪/৪৭) হতে পারেনি প্রশংসিত! কারন, শাহাজাদ, নবীর কাছে ছক্কা খেয়ে দলকে যে বিপদে ফেলে দিয়েছেন এই বাঁ হাতি।
স্লো উইকেটে বাংলাদেশ স্পিনারদের উইকেটের সমস্টি যেখানে ৬ উইকেট, খরচা ১১৩ রানÑ সেখানে ৩ আফগান স্পিনার ৮১ রানে শিকার করেছেন ৬ উইকেট! দু’দলের বোলিং চিত্রের ব্যবধান তো দেখল সবাই। ব্যবধানটা নির্ণিত হয়েছে দু’দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও। অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাই’র ৫৭, মোহাম্মদ নবীর ৪৯’র সঙ্গে তুলনায় ছিলেন কেবলই বাংলাদেশের ডেব্যুটেন্ট মোসাদ্দেক (৪৮ নট আউট)। আফগানিস্তানের বলার মতো ২টি পার্টনারশিপের (৩য় জুটিতে ৪৫, ৫ম জুটিতে ১০৭) বিপরীতে বাংলাদেশের বলার মতো ২টি পার্টনারশিপ (৩য় জুটিতে ৬১, ১০ম জুটিতে ৪৩)। এখানেও যে ব্যবধান রচিত হয়েছে। র‌্যাঙ্কিংয়ে নীচের সারি দলকে আতিথ্য দিয়ে যে বড়ই ভুল করে ফেলেছে বিসিবি, ৭ম স্থানে স্থির থাকাটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে, আইসিসি’র সহযোগী দল আফগান ধাক্কায় এখন সেই মাশুলই যে দেয়ার শঙ্কা করেছে ভর।



 

Show all comments
  • মিজান ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:৫৭ এএম says : 1
    আগামী ম্যাচে অবশ্যই বাংলাদেশকে জিততে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগান ধাক্কায় বেসামাল বাংলাদেশ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ