মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান এনএসও’র স্পাইওয়্যার কেলেঙ্কারি নিয়ে এবার খোলামেলা কথা বলেছেন জনপ্রিয় বার্তা আদানপ্রদানের অ্যাপ হোয়্যাটসঅ্যাপের প্রধান নির্বাহী। ২০১৯ সালে এনএসও-র স্পাইওয়্যার পেগাসাস দিয়ে হোয়্যাটসঅ্যাপের হাজার হাজার ব্যবহারকারীকে হ্যাক করা হয়েছিল। এনএসও দাবি করে, শুধুমাত্র অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেই এ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে তাদের গ্রাহকরা। কিন্তু স¤প্রতি বিশ্বের খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যমগুলোর তদন্তে উঠে এসেছে যে, বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধানদের বিরুদ্ধে আড়ি পাততে পেগাসাস ব্যবহার করার হয়েছে বা চেষ্টা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়নের মধ্যেই সরব হয়েছেন হোয়্যাটসঅ্যাপের প্রধান নির্বাহী উইল ক্যাথকার্ট। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ানকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন দেশের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের ওপরও পেগাসাস দিয়ে গোয়েন্দাগিরি করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তার অনেকেই নিজ নিজ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
তিনি আরো জানান, ২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপের ১৪ হাজার ব্যবহারকারী পেগাসাসের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে ১৭টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের যৌথ এক অনুসন্ধানে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে পেগাসাস ব্যবহার করে আড়িপাতার খবর প্রকাশিত হয়। এ অনুসন্ধান দ্য পেগাসাস প্রজেক্ট হিসেবে পরিচিত। প্রতিবেদনগুলো নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলার সময়ই ২০১৯ সালের ওই ম্যালওয়ার হামলার টার্গেটদের সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করলেন ক্যাথকার্ট। প্রসঙ্গত, ওই হামলার পর এনএসও’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল হোয়াটসঅ্যাপ।
হোয়াটসঅ্যাপের প্রধান নির্বাহী জানান, ২০১৯ সালে হোয়্যাটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের উপর আক্রমণ এবং সা¤প্রতিক এই পেগাসাস প্রজেক্টের মধ্যে মিল দেখতে পেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, পেগাসাস প্রজেক্টে ফাঁস হওয়া তথ্যগুলোর মধ্যে ছিল, এনএসও’র বিভিন্ন গ্রাহকদের হাজার হাজার সম্ভাব্য টার্গেটের ফোন নম্বর। সম্ভাব্য এমন টার্গেটের মধ্যে ছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ, বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী, ক‚টনীতিক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিরাপত্তা ল্যাবে সম্ভাব্য ওইসব টার্গেটের কয়েকজনের ফোন নীরিক্ষা করে তাতে পেগাসাস স্পাইওয়ার দিয়ে আড়িপাতার চিহ্ন পাওয়া গেছে।
সাক্ষাৎকারে ক্যাথকার্ট বলেন, ‘আমরা দুই বছর আগে যে হামলা নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছিলাম, সা¤প্রতিক প্রতিবেদনগুলোয় প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে তার অনেক মিল রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের হামলায় জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদেরও টার্গেট করা হয়েছিল। ওই হামলার অনেক টার্গেটেই আড়িপাতার শিকার হওয়ার মতো কাজে জড়িত ছিলেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ হামলা ইন্টারনেটের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের চোখ খুলে দেওয়া উচিৎ। হয় মোবাইল ফোন সবার জন্যই নিরাপদ হবে, কারও জন্যই হবে না’।
পেগাসাস যখন কোনো ফোনে অনুপ্রবেশ করে তখন এর ব্যবহারকারীরা ওই ফোন দিয়ে বিনিময় করা ব্যক্তিগত বার্তা, কথোপকথন, ছবি ও এর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে। এমনকি ফোনটির রেকর্ডারের দখল নিয়ে এটিকে কথা শোনার আড়িপাতা যন্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
পেগাসাস প্রজেক্ট যে ফাঁস হওয়া তথ্য অনুসন্ধান করেছে, তার মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বরের তালিকা রয়েছে। এসব ফোন নম্বর ব্যবহারকারীদের এনএসও’র গ্রাহকরা ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন সময় সম্ভাব্য টার্গেট হিসেবে বিবেচনা করেছে। তবে তালিকায় থাকা ফোন নম্বরগুলোয় যে সফলভাবে হামলা চালানো হয়েছে বা চালানোর চেষ্টা হয়েছে তা নয়। এনএসও জানিয়েছে, ম্যাখোর ফোন নম্বর তালিকায় থাকলেও তাদের কোনো ক্রেতা ফরাসি প্রেসিডেন্টের ফোনে হামলা চালায়নি। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটি ফাঁস হওয়া তথ্যগুলোকেও ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে বর্ণনা করেছে। পেগাসাস প্রজেক্টের প্রতিবেদনগুলোকে ‘ধারণাপ্রসূত ও প্রমাণহীন তত্ত¡’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি ফাঁস হওয়া ফোন নম্বরের তালিকাটি আদতে পেগাসাস সফটওয়ারের টার্গেটগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে না বলে দাবি করেছে। তারা বলেছে, ৫০ হাজার ফোন নম্বরের তালিকাটা বাড়িয়ে করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করা হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করার জন্য এ নাম্বার অনেক বড়।
কিন্তু এনএসও’র দাবিগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্যাথকার্ট। তিনি বলেন, হোয়াটসআপ ২০১৯ সালে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের ১ হাজার ৪০০ ব্যবহারকারীর ফোনে হামলা চালানোর প্রমাণ পেয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে, কয়েক বছরের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক মানুষকে টার্গেট করা হয়েছে।
এনএসও তাদের গ্রাহক তালিকা ও তারা কাদের টার্গেট করে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে অস্বীকৃত জানিয়েছে। তবে এক সূত্র অনুসারে, তাদের প্রতি গ্রাহক প্রতি বছরে গড়ে ১১২ জনকে টার্গেট করে থাকে।
ক্যাথহার্ট জানান, ২০১৯ এর হামলার পর বিশ্বজুড়ে সরকারদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছে হোয়াটসআপ। স¤প্রতি ম্যালওয়ারের বিরুদ্ধে মাইক্রোসফট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থানের প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা এসব হামলার শিকার হওয়া মানে, আমরা সবাই এর ভুক্তভোগী হওয়া। যদি সকলের ফোন নিরাপদ না থাকে, তার মানে সকলের ফোনই অনিরাপদ।
তিনি বলেন, এনএসও গ্রæপ দাবি করে বহু সরকার তাদের সফটওয়ার কিনেছে। এর মানে ওই সরকারগুলো এর অর্থায়ন করছে। হোক তাদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত। তাদের কী থামা উচিৎ? কোন কোন সরকার এ সফটওয়্যারের জন্য অর্থ খরচ করছে সেই বিষয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ? সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।