Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জটে বেহাল বন্দর-ডিপো

লকডাউনে কলকারখানা বন্ধ থাকায় কমছে আমদানি কাঁচামাল ডেলিভারি পরিবহন জমছে পণ্য-কন্টেইনারের পাহাড়

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

চলতি সপ্তাহের শেষে চট্টগ্রাম বন্দর তীব্র জটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে বন্দরের ইয়ার্ডসমূহ এবং বেসরকারি সবক’টি ডিপোতে (আইসিডি) কন্টেইনার জটে বেহাল অবস্থা। গতকাল সোমবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৩ হাজার ৫৭৪ টিইইউএস কন্টেইনার জমে গেছে। যা সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার (৪৯ হাজার ১০০ টিইইউএস) কাছাকাছি। প্রাইভেট ১৯টি ডিপোতে (অফডক) স্তুপিকৃত রয়েছে ৫৩ হাজার ৮৬৪ টিইইউএস কন্টেইনার। তার মধ্যে রফতানিমুখী পণ্য বোঝাই কন্টেইনারের সংখ্যা ১৩ হাজারের বেশি। জট পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসরকারি ডিপো মালিক সমিতি (বিকডা) এবং কাস্টম হাউস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমন্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আমদানিকারক, কনসাইনিদের অবিলম্বে পণ্যসামগ্রী ডেলিভারি গ্রহণের জন্য তাগাদা সহকারে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে স্ক্যানিং সম্পন্ন করার শর্তপূরণ করে সবধরনের পণ্যবাহী কন্টেইনার বেসরকারি আইসিডিগুলোতে (অফডক) স্থানান্তরের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এরফলে বন্দরকে জটমুক্ত রাখা যাবে এমনটি আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটির সঙ্গে করোনা সংক্রমণরোধে দুই সপ্তাহের চলমান কঠোরতর লকডাউন তথা কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় গার্মেন্টসহ বেশিরভাগ শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। অন্যদিকে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর সার্বক্ষণিক (২৪/৭) সচল রয়েছে। একের পর এক আগত জাহাজ থেকে শিল্পের কাঁচামালসহ অধিকাংশ আমদানি চালানের পণ্যভর্তি কন্টেইনার বন্দরে শুধুই খালাস হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় ছাড়করণ, ডেলিভারি পরিবহন খুবই কম। গার্মেন্টস শিল্প মালিকরাও তাদের নিজস্ব ওয়্যারহাউজে (গুদামে) কাঁচামাল ডেলিভারি নিচ্ছেন না। তারা বন্দর থেকেই আমদানি মালামাল ছাড় করার পক্ষে।
কঠোরতর লকডাউনের আগেই চট্টগ্রামের বেসরকারি ডিপোগুলোতে রফতানি পণ্যজট চলে আসছে। যার কারণ- সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্ল্যাং-সহ বিভিন্ন মাদার পোর্টে মারাত্মক জট, বৈশি^ক করোনা পরিস্থিতির ধাক্কা এবং পর্যাপ্ত ফিডার (ছোট) জাহাজ ও খালি কন্টেইনারের ঘাটতি। জাহাজ ও কন্টেইনার ভাড়াও (ফ্রেইট চার্জ) বেড়ে গেছে। সময়মতো জাহাজের সøট পাওয়া যাচ্ছে না।
আবার, রফতানি জাহাজীকরণের জন্য জাহাজের নমিনেশন মিলছে না। অনেক জাহাজ আংশিক খালি অবস্থায় বন্দর ত্যাগ করছে। সবমিলিয়ে বেড়েছে আমদানি-রফতানিতে শিপিং ব্যয়। কন্টেইনার ছাড়াও বন্দরে খোলা সাধারণ পণ্যেরও (ব্রেক বাল্ক কার্গো) জট তৈরি হয়েছে। ক্রমাগত আমদানি চালান খালাসের বিপরীতে ডেলিভারি পরিবহন কমে গেছে। এরমধ্যে অধিকাংশই শিল্প-কাঁচামাল। কল-কারখানা বন্ধ থাকায় বন্দরে কাঁচামাল আটকে গেছে। এতে জট বেড়েই চলেছে।
জানা গেছে ঈদের পরপরই কঠোর লকডাউনে গার্মেন্টসসহ সব কলকারখানা বন্ধ রাখার আগাম ঘোষণার ফলে আমদানিকৃত কাঁচামালের ডেলিভারি পরিবহন কমে আসে। কারখানা বন্ধ এমন অজুহাতে কারখানা মালিকরা পণ্য ছাড়, ডেলিভারি পরিবহন কমিয়ে দেয়। ঈদের দিন থেকে প্রায় ৪৮ ঘণ্টায় কোন কন্টেইনার ডেলিভারি হয়নি, যা নজিরবিহীন। প্রতিবছর ঈদে ডেলিভারি ও পরিবহনের গতি কিছুটা ধীর হয়। তবে কন্টেইনার খালাস কখনো বন্ধ হয় না।
ঈদের পর গত শুক্র, শনি ও রোববার ৯৩৩ টিইইউএস কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। স্বাভাবিক সময়ে একদিনেই ডেলিভারি হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। ঈদের আগের দিন ২০ জুলাই কন্টেইনার ছিলো ৩৭ হাজার ৮১৯ টিইইউএস। গতকাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ৪৩ হাজার ৫৭৪ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ৪০ হাজার ৭৪১ টিইইউএস।
আগেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ঈদের পর দ্রæত আমদানি পণ্য খালাস করে নিতে বিজিএমইএসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের চিঠি দেয়। তবে তাতেও কোন সাড়া মিলেনি। ঈদের ছুটির পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। কন্টেইনারের পাহাড় বন্দরের ধারণক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বেসরকারি ডিপোতে কন্টেইনার সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ প্রহণে এনবিআরের হস্তক্ষেপ চেয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। বন্দরের ওই চিঠির পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে রোববার বন্দরে সৃষ্ট জট কমাতে সব ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে এনবিআর। বন্দর থেকে ডিপোতে নেওয়ার সময় স্ক্যানিং এবং বাণিজ্যিক পণ্য ডিপো থেকে খালাসের সময় শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করার শর্ত দেওয়া হয়েছে তাতে। এর আগে ৩৮টি আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেইনার বেসরকারি ডিপোতে খালাস হতো।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে বেসরকারি ডিপোতে কন্টেইনার সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। বন্দরে ৪৩ হাজারের বেশি কন্টেইনার থাকলেও আপাতত জট হবে না। বিধিনিষেধেও যেসব কারখানা খোলা আছে, তারা পণ্য ডেলিভারি নিচ্ছেন। ওষুধসহ জরুরি পণ্য এবং ভোগ্যপণ্য ডেলিভারি পরিবহন হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি কলম্বো বন্দরে ছয়টি ফিডার জাহাজ বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন এর ফলে রফতানি পণ্যজটও কমে এসেছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেসরকারি ডিপোগুলোতে আমদানি রফতানি এবং খালি কন্টেইনারসহ মোট ৫৩ হাজার ৮৬৪ টিইইউএস কন্টেইনার মজুদ ছিল। তাদের সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ৭৫ হাজার ৫০০ টিইইউএস। বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিকদার বলেন, অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথে চট্টগ্রাম থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ডিপোতে সরিয়ে আনা শুরু হয়েছে। ডিপোগুলোতে রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের জট ধীরে কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও ১৩ হাজারের বেশি কন্টেইনার পণ্য নিয়ে ডিপোগুলোতে অপেক্ষায় আছে। ঈদের পর রফতানিতে গতি ফিরছে বলেও জানান তিনি।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, কারখানা বন্ধ থাকায় আমদানিকৃত কাঁচামাল ডেলিভারি নেওয়া হচ্ছে না। বন্দর, কাস্টমস খোলা থাকলেও লকডাউনের কারণে ব্যাংকসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে চালু থাকায় সমস্যা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কিছু উদ্যোগের ফলে রফতানি পণ্যের জট কমে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, রফতানি পুরোদমে চালু রাখতে সীমিত আকারে হলেও কিছু কারখানা চালু রাখার অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম বন্দর

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১৪ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ