পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউটের মতো বহুতল বাণিজ্যিক স্থাপনা হলে চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত সিআরবি বিরাণ ভূমিতে পরিণত হবে। ধ্বংস হয়ে যাবে সেখানকার হরেক প্রজাতির উদ্ভিদ-প্রাণিসহ প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য। ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত চির সবুজ পরিবেশ, বন, পাহাড় ধ্বংস করে শুধু হাসপাতালই নয়, যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ হবে আত্মঘাতী, সেই সাথে অপরিণামদর্শী।
এমন অভিমত জানিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন পৌনে এক কোটি মানুষের এই নগরীতে বুকভরে নিঃশ্বাস নেবার স্থানটিকে ঐতিহ্য হিসাবে সংরক্ষণের কোন বিকল্প নেই। কারণ সিআরবি এখন চাটগাঁবাসীর জীবনের অংশ। অন্যদিকে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে কালচারাল অ্যান্ড হেরিটেজ জোন (সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য) হিসেবে সিআরবিতে এই ধরনের কোন স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। এই এলাকায় কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ বা তার আকৃতি পরিবর্তন করাও হবে বেআইনি।
চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রে সবুজ পাহাড় ঘেরা ছায়া-সুশীতল সিআরবিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হতেই প্রতিবাদমুখর চট্টগ্রাম। পরিবেশ বিনাশী এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চলছে সামাজিক আন্দোলন। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ের মাঝে প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করতে গেলে শতবর্ষী অনেক গাছ কাটা পড়ার পাশাপাশি এখানকার সবুজ নিঃসর্গ ধ্বংস হয়ে যাবে। কার্বন ও অক্সিজেনের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে।
এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে গোটা নগরীতে। একশ’ থেকে দেড়শ’ বছর বয়সী এক একটি গাছে শতাধিক উদ্ভিদ ও প্রাণির বসবাস। এসব গাছ কাটা হলে প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশ হয়ে যাবে। সিআরবিতে বিরল প্রজাতির অনেক গাছ পালা, পাখ-পাখালি এবং প্রাণি রয়েছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলে এসব বৃক্ষ ও প্রাণি বিলুপ্ত হবে। নগরীর উম্মুক্ত স্থান বলে আর কিছুই থাকবে না।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তার নেতিবাচক প্রভাব শুধু প্রকল্পের নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত থাকবে না। সময়ের প্রয়োজনে প্রকল্প এলাকা ঘিরে নতুন নতুন দালান, অবকাঠামো, দোকানপাট, পার্কিং, ফার্মেসি, হোটেল রেস্টুরেন্ট, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের জন্য আবাসিক ভবনে পুরো এলাকা ভরে যাবে। যার ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটবে এবং পুরো সিআরবি এলাকাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে। পুরো এলাকাটিকে যানজট, কোলাহলপূর্ণ ও জঞ্জালময় পরিবেশে রূপ দেবে যা সিআরবির অনুপম ও প্রশান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে।
বিশিষ্ট নগর পরিকল্পাবিদ ও পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেত্রী প্রফেসর জেরিনা হোসেন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, পাহাড় সবুজে ঘেরা ছায়া-সুনিবিড় সিআরবির উম্মুক্ত প্রাঙ্গণ এই নগরীর অপরিহার্য অংশ। এটিকে ধ্বংস করার অর্থ হলো নগরীকে বাস অযোগ্য করে তোলা। পৃথিবীর উন্নত অনেক শহরে এই ধরনের উম্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ করা হয়েছে। সিআরবিতে কোন ধরনের স্থাপনা হবে আত্মবিধ্বংসী। পরিকল্পিত এবং বাসযোগ্য নগরী গড়তে ১৯৫৬ সালের পর থেকে যত আইন হয়েছে তার সবকটিতেই এই ধরনে উম্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের কথাই বলা হয়েছে।
সিআরবিসহ নগরীর পাহাড়ী এলাকায় জীববৈচিত্র নিয়ে জরিপ ও গবেষণা চলছে। এ গবেষণার নেতৃত্বে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ ওমর ফারুক রাসেল ইনকিলাবকে বলেন, বাণিজ্যিক স্থাপনা হলে সিআরবি ধ্বংস হয়ে যাবে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে এলাকাটি বিরাণ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সিআরবিতে ১৯৭ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে যার মধ্যে ১৫৪টি ঔষধি। এখনও শনাক্ত হয়নি এমন প্রজাতির সংখ্যা বিশের বেশি। হাসপাতাল হলে এসব অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সিআরবির শতবর্ষী রেইনট্রিগুলোতে বহু ধরনের পরগাছা, যেমন- ছত্রাক, শৈবাল, অর্কিড ও পরজীবীর বসবাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, গাছ কাটা হলে এসব আশ্রয়ী প্রজাতিও ধ্বংস হয়ে যাবে। গাছে অনেক কীটপতঙ্গ বসবাস করে। তারা ফুলের মধু আহরণের সময় পরাগায়ন ঘটায় যাতে উদ্ভিদের বংশবিস্তার হয়। এটা পুরো একটা ইকো সিস্টেম। বাণিজ্যিক স্থাপনা হলে এ সিস্টেম ভেঙে পড়বে। কার্বন ও অক্সিজেনের ভারসাম্যের কারণে সিআরবি, টাইগারপাস এবং আশপাশের এলাকার বাতাস শীতল। স্থাপনা হলে সেই এলাকার উষ্ণতা বাড়বে, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নগরীতে।
সিআরবিতে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই জানিয়ে প্রবীণ আইনজীবী বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ইনকিলাবকে বলেন, আইনে সিআরবিকে সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। সে এলাকায় কোন প্রকার স্থাপনা বা তার আকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না, কারণ এটি বাংলাদেশের সংবিধানে আর্টিকেল ২৪ দ্বারা সংরক্ষিত। এতে বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমন্ডিত স্মৃতি নিদর্শন বস্তু বা স্থান সমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হতে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- সিডিএ আগেই জানিয়েছে হেরিটেজ জোন ঘোষিত সিআরবি সিডিএর মাস্টারপ্ল্যানে সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন দেবে না তারা। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এসব তথ্য গোপন করেই হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।