বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত নিয়ে হাজির হয় কভিড-১৯ মহামারী। যদিও মহামারীর বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে অর্থনীতিগুলো। তবে অর্থনৈতিক আঘাতের পাশাপাশি মহামারীর মনস্তাত্তি¡ক প্রভাবও ব্যাপক ছিল। নতুন একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ১৭টি উন্নত অর্থনীতির সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রাপ্তবয়স্করা বিশ্বাস করেন, প্রাপ্তবয়সে শিশুদের আর্থিক অবস্থা তাদের চেয়ে খারাপ হবে। দ্য প্রিন্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে অর্থনীতিগুলোর সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হওয়ার পরও এ বিষয়কে কভিডের মনস্তাত্তি¡ক প্রভাবের ইংগিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো অর্থনীতির ৬৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক তাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ। শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশার হার সবচেয়ে বেশি ফ্রান্স ও জাপানে। দুই দেশেরই ৭৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া এ হার ইতালিতে ৭২ শতাংশ, স্পেনে ৭১ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ৬৮ শতাংশ। তবে সিঙ্গাপুরের ৬১ শতাংশ ও সুইডেনের ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ জানিয়েছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মে পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, ইতালি, স্পেন, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও তাইওয়ানে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, সরকার ভুলভাবে কভিড সঙ্কট পরিচালনা করেছে। তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াও ব্যর্থ হয়েছে। আর বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় শিশুদের অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ হবে। মহামারী-পরবর্তী সময়ে কয়েকটি দেশে বিশেষত ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও গ্রিসে হতাশাবাদ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মার্কিন নাগরিক ও কোরিয়ানরা ২০১৩ সালের তুলনায় বর্তমানে আরো বেশি হতাশ। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসে ভিন্ন প্রবণতা দেখা গেছে। সমীক্ষায় অংশ নেয়া এ দেশগুলোর উত্তরদাতারা ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরো বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছে। জরিপটিতে মহামারীর মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে লোকজন কী ভাবছে—সে বিষয়ও উঠে এসেছে। ১৭টি দেশের ৫২ শতাংশ মানুষ পরিস্থিতি খারাপ ও ৪৮ শতাংশ মানুষ পরিস্থিতি ভালো বলে বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে সুইডেন। দেশটির ৮৬ শতাংশ মানুষ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী। এ হার অস্ট্রেলিয়ার ৭৪ শতাংশ ও নিউজিল্যান্ডে ৭৩ শতাংশ। এদিকে স্পেন, ইতালি ও জাপানের মানুষরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে সবচেয়ে কম আশাবাদী। বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য ও কানাডার উত্তরদাতারা বিষয়টি নিয়ে বিভক্ত। বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ। পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশগুলোর মানুষদের মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গত বছরের তুলনায় এ বছর আরো ইতিবাচক। অর্থনীতির ইতিবাচক মূল্যায়ন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটির ৭৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক বর্তমানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ভালো বলেছেন। যেখানে ২০২০ সালে এ হার ছিল মাত্র ৩৬ শতাংশ। সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বেড়েছে। কভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে জারি করা লকডাউন সত্ত্বেও সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়ায় অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এর আগে কখনো এ পর্যায়ে ওঠেনি। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেন বাদ দিয়ে সব দেশেই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আরো বেশি মানুষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। দ্য প্রিন্ট, এপি।