Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ড্র’য়ে মান বাঁচালো বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন, গৌহাটি (ভারত) থেকে : বাংলাদেশ ফুটবলের যে কি করুণ দশা, তা বলে বুঝানো যাবে না। এক সময় যাদের বিপক্ষে হেসে-খেলেই জয় পেতো, এখন তাদের মোকাবেলা করার আগেই যেন হেরে বসে থাকে লাল-সবুজরা। গত এক বছর ধরে জাতীয় এবং অলিম্পিক দলের পারফরমেন্স সেটাই প্রমাণ করে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বসহ গেল তিন মাসে তিন আসরে ধারাবাহিক ব্যর্থতার মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। সাফ সুজুকি কাপে ব্যর্থ হওয়ার পর গত মাসে ঘরের মাঠে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে চরম ব্যর্থ হয়েছে জাতীয় দল। বড়দের পথ অনুসরণ করছে ছোটরাও। বাংলাদেশ অলিম্পিক দল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে হতাশাজনক পারফরমেন্স করার পর এবার গৌহাটি-শিলং সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসেও হতাশ করেছে জাতিকে। এসএ গেমসে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দূর্বল ভুটানের বিপক্ষে হারতে হারতে বেঁচে গেল বাংলাদেশ। গতকাল গৌহাটির সাই স্টেডিয়ামে প্রথমে পিছিয়ে থেকে লাল-সবুজরা ১-১ গোলে ড্র করে ভুটানের সঙ্গে। ভুটানের ডিফেন্ডার জিগমি দর্জি ও বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবন একটি করে গোল করেন।
ভুটানের মতো দলের কাছ থেকে পয়েন্ট আদায় করতে ঘাম ঝরেছে স্প্যানিশ কোচ গঞ্জালো মরেনো সানচেজের শিষ্যদের। অথচ এই ভুটানকেই সোমবার নেপাল ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে। অপ্রত্যাশিত এই ড্র’র ফলে সেমিফাইনাল এখনো নিশ্চিত হয়নি বাংলাদেশের। গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে আগামীকাল নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামতে হবে লাল-সবুজদের। ওই ম্যাচে এক পয়েন্ট পেলেই শেষ চারে নাম লেখাতে পারবে রেজাউল করিম বাহিনী। তবে যদি নেপালের কাছে ৬-০ ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ, তাহলে তারা ছিঁটকে পড়বে এসএ গেমস থেকে।
কাল সাই স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের পারফর্ম্যান্স মোটেও সন্তুষ্ঠ করতে পারেনি সমর্থকদের। পুরো ম্যাচটিই ছিল ভুলে ভরা। অগোছালো ফুটবল উপহার দিয়েছেন সানচেজের শিষ্যরা। বল রিসিভ কিংবা পাসিং, কোন কিছুতেই পরিকল্পনার ছাঁপ ছিল না। মাঠের লড়াইয়ে স্বার্থপরতারও পরিচয় দিয়েছেন ফুটবলাররা। সতীর্থদের পাস না দিয়ে নিজেরা গোল করতে গিয়ে দলকে জয় বঞ্চিত করেছেন বেশ কয়েকবার। বল খুঁজতে মাঠে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে ফুটবলারদের। শিষ্যদের এমন পারফর্ম্যান্সে বেশ হতাশই দেখালো কোচ সানচেজকে। ম্যাচ শেষে ডাক আউট ছেড়ে ড্রেসিং রুমেও ঢুকেননি কোচ। বসেছিলেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষের ঠিক দরজার সামনেই। সেখান থেকেই সরাসরি হাজির হলেন সংবাদ সম্মেলনে। নিজের ক্ষোভ ঢাললেন পুরোটাই, ‘একটা ম্যাচে এতো ভুল হলে জয় আসবে কি করে? আজ যদি ৪-১ স্কোর লাইন হতো, তাহলে খুশী হতাম। একে একে তিনটা সুযোগ হাতছাড়া করেছে দল। আমি তাদের পারফর্ম্যান্সে মোটেও খুশী নই। এভাবে খেললে ভালো কিছু হবে না। আমরা যখন গোল মিসের মহড়ায় ব্যস্ত, তখন ভুটান একটি সুযোগ পেয়েই কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।’ দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপুও বেশ ক্ষুব্ধ, ‘মাঠে আমরা জঘন্য খেলেছি। এমন খেললে কোন আশাই থাকবে না। নেপালের সঙ্গে কোনভাবেই পেরে উঠা সম্ভব নয়।’
গতকাল ম্যাচের পাঁচ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার দারুন এক সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কপালটা মন্দই বলতে হবে লাল-সবুজ জার্সীধারীদের। নাবিব নেওয়াজ জীবনের নেয়া পাওয়ারফুল শটটি যদি ভুটানের ক্রসবারে লেগে ফিরে না আসতো, তবেই গোলের দেখা মিলে যেতো। এরপরই যেনো হঠাৎ করে অগোছালো হয়ে পড়ে বালাদেশ শিবির। ভুটানের পরিকল্পিত ফুটবলের সামনে অসহায় দেখাচ্ছিল রেজা-তপুদের। সবচেয়ে জঘন্য ছিল বাংলাদেশের ডিফেন্স। রক্ষণভাগের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ২ মিনিটেই এগিয়ে যায় ভুটান। বাঁ প্রান্ত দিয়ে সেসো গিয়ালসন বল নিয়ে যখন বিপদসীমায় প্রবেশ করছিলেন, তখন ডিফেন্ডার তপু তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছিলেন। আর এ সুযোগেই মাইনাস করে বল ঠেলে দেন ছোট বক্সের ভেতরে থাকা জিগমি দর্জির সামনে। এ ডিফেন্ডার আলতো টোকায় বল জালে পাঠিয়ে দিতে ভুল করেননি (১-০)।
গোল হজম করার পর ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে সানচেজের শিষ্যরা। ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে সমতা ফিরিয়ে আনে রেজা-শাহেদরা। জামাল ভুঁইয়ার কর্নারে দারুন এক হেডে গোল করেন নাবিব নেওয়াজ জীবন (১-১)। দুই মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে সোহেল রানার নেয়া জোড়ালো শটটি ভুটানের গোলরক্ষক গিয়ালসেন জাংপু বাদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করে দলকে বিপদমুক্ত করেছিলেন। ৬৪ মিনিটে নাবিব নেওয়াজ জীবন আরও একটি সুযোগ মিস করেন। স্বার্থপরতার পরিচয় দিয়েছেন গোল পায়ে। ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমনে যাওয়া জীবনের উল্টো দিকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন হেমন্ত ভিনসেন্ট। তিনি হেমন্তকে পাস দিলে গোল হতো নিশ্চিত। কিন্তু তা না করে নিজেই গোল করার বৃথা চেষ্টা করেন। ৭১ মিনিটে ভুটানের গোলরক্ষক গিয়ালসেন জাংপুকে একা পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি বদলী হিসেবে মাঠে নামা রুবেল মিয়া। আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেন বল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ড্র’য়ে মান বাঁচালো বাংলাদেশ

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ