বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আবারো বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবারো পানি বাড়তে শুরু করেছে সর্বগ্রাসী তিস্তা নদীর পানি। এতে করে আবারো প্লাবিত হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা। বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে বানের পানি নেমে গিয়ে কাদা শুকাতে না শুকাতেই আবারো পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে দূর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দি লোকজন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারেজের সবক’টি গেট খুলে দেয়ায় গত ৭ জুলাই বুধবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়ে রোববার নাগাদ তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩০ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে ব্যারেজের উজানে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ১০/১২টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ৬/৭ হাজার পরিবার। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি ও পাওয়ায় প্রবল স্রোতের কারণে কর্তৃপক্ষ তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেন। এতে করে ব্যারেজের ভাটি এলাকা লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর এবং গাইবান্ধা জেলার ১৩টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে আরও প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়। উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বিনবিনা চর হতে লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী সংযোগ বেড়ি বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় বাগেরহাট বাজার এলাকাসহ আশ্রয়ণে পানি ঢুকে পড়ে। ইতিপূর্বে বিনবিনার চরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতেত নির্মিত বাঁধটি ভেঙ্গে পূর্ব বিনবিনার চরের মসজিদটি বিলীন হয়ে যায়। লক্ষীটারীর কেল্লারপাড় চরে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত উপবাঁধটিও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙনে কোলকোন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বিনবিনা ও পশ্চিম ইচলীর ২০টি পরিবারের ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, শংকরদহ, বাগেরহাট আশ্রয়ন, পূর্ব ইচলির প্রায় সাড়ে ৩ হাজার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, মটুকপুর, চিলাখাল, খলাইরচরসহ নিম্ন এলাকার ৩ হাজার, নোহালীর মিনার বাজার, কচুয়াচর, বৈরাতী বাঁধের ধার, চর নোহালী, বাগডহরা চরের ২শ, মর্নেয়া ইউনিয়নের মর্নেয়াচর, তালপট্টি, আলাল চর, নরসিং চর, গজঘন্টা ইউনিয়নের কালির চর, ছালাপাক, গাউছিয়া বাজার, জয়দেব, মইশাসুর, রামদেব চরসহ আলমবিদিত ও গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের তিস্তা বেষ্টিত নিম্ন এলাকার ২শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বানের পানি ঢুকে পড়ায় ভেসে গেছে ছোট-বড় কয়েক’শ পুকুরের মাছ। সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েন বন্যাকবলিত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। অস্বাভাবিক এবং আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া তিস্তার পানি ২/৩ দিন স্থিতিশীল থাকার পর গত সোমবার থেকে পানি কমতে শুরু করে। এতে করে বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চলগুলো ছাড়া অনেক এলাকা থেকে বানের পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবারো তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করায় এসব এলাকায়ও বানের পানি বাড়তে শুরু করেছে। সে সাথে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভ্ঙ্গান শুরু হয়েছে। ফলে এসব এলাকার পানিবন্দি মানুষগুলো নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
আজ শুক্রবার সরেজমিনে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক এলাকা থেকে বানের পানি নেমে গেছে। কিন্তু কাদা এখনও শুকায়নি। এসব এলাকায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আবার অনেক এলাকাতে এখনও প্রায় হাঁটু পানি রয়েছে। উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো এখনও তাদের বাড়িতে ফিরতে পারেনি। হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগলসহ পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় কিংবা বাঁধের পলিথিন টাঙ্গিয়ে দিন পার করছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এভাবে থাকায় এসব পরিবারে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এমনিতেই করোনা মহামারী, তার ওপর বন্যা। কাজ ও খাদ্যাভাবে পরিবার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। এর মাঝেও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তারা। বানের পানি নেমে যাওয়ায় আশ্রয়স্থল থেকে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকেই। এরই মধ্যে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চোখে সর্ষের ফুল দেখছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি আবারো বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারো ঐসব এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে, ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর ও পূর্বছাতনাই গ্রামসহ ৬টি ইউনিয়নের ১০টি চর ও গ্রাম, লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডারের আমিনগঞ্জ, কাকিনা, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু মৎস খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। দফায় দফায় পানি বৃদ্ধির কারনে বিভিন্ন রবিশস্য ও ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ বাড়ছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে সবগুলো পাট খুলে দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।