পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হজ আদায়ের প্রাক্কালে হেরেম শরীফে উপস্থিত হওয়ার পর বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে হয়। এই তাওয়াফ হজের রুকন এবং ফরজ। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর তারা যেন মহান আল্লাহর প্রাচীনতম বরকতময় ঘরের তাওয়াফ করে।’ (সূরা আল হজ : আয়াত ২৯)। তাওয়াফ সাতবার করতে হয়। তন্মধ্যে তিনবার ‘রমল’ করতে হয় এবং চারবার সাধারণভাবে চলতে হয়। আরবী ‘রমল’ শব্দের অর্থ হলো দুই কাঁধ নেড়ে বা হেলিয়ে দ্রুত চলা। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) তাওয়াফকালে এই দোয়া পড়তেনÑ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি সন্দেহ, সংশয়, শিরক, মুনাফেকী, হিংসা-বিদ্বেষ ও খারাপ চরিত্র হতে’। তাওয়াফ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মাকামে ইব্রাহীমে আসতে হয়। এখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমরা এই ঘরকে যখন মানুষের মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাপূর্ণ স্থান বানিয়ে দিলাম, তখন নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে নামাজের জায়গারূপে গ্রহণ করো’। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১২৫)। এই আয়াতে কারীমায় ইব্রাহীমের দাঁড়াবার স্থান বলতে সে পাথরখানা বোঝানো হয়েছে, যার উপর তিনি কাবাগৃহ নির্মাণকালে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হযরত আনাস (রা:) বলেছেন : আমি পাথরটিতে তাঁর (হযরত ইব্রাহীম (আ:)-এর) অঙ্গুলি ও গোড়ালির চিহ্ন দেখেছি। এতে তাঁর পা বসে গিয়েছিল। তবে মানুষের হস্ত সম্পর্কে তা নিশ্চিত হয়ে গেছে।
ওয়াজেবুত তাওয়াফ নামাজ আদায়ের পর সাফা পাহাড়ের উপর চলে যেতে হয়। সেখান হতে সাঈ বা দৌড় শুরু করে মারওয়া পাহাড় পর্যন্ত যেতে হয়। এভাবে দু’পাহাড়ের মাঝে সাতবার দৌড়াতে হয়। সাঈ আরম্ভ করার পূর্বে বা তাওয়াফকালে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর চুম্বন করতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা:) সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে এই আয়াত তিলাওয়াত করেছিলেন : ‘নিশ্চয়ই সাফা এবং মারওয়া পাহাড় আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৮)।
এই আয়াতে কারীমায় সাফা এবং মারওয়া পাহাড়দ্বয়কে ‘শায়ায়ের’ অর্থাৎ আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘শায়ায়ের’ শব্দটি বহুবচন। এর একবচন শেয়ারুন, অর্থ নিদর্শন। এই শব্দটির মূল ‘ইশয়ারুন’। ইশয়ারুন বলতে ঐ সকল জিনিসকে বোঝায়, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। যেমন নামাজ, রোজা, দোয়া, কুরবানি ইত্যাদি। আর হজ আদায়ের প্রাক্কালে আল্লাহর নিদর্শনাবলি হলোÑ হজের বাহ্যিক অনুভবযোগ্য অনুষ্ঠানমালাসমূহ। যেমনÑ কাবাঘর তাওয়াফ করা, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা, সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঈ করা, মিনায় অবস্থান করা, আরাফাতে গমন করা, মুজদালেফায় রাত্রিযাপন করা, শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা, কুরবানি করা ইত্যাদি।
মোটকথা, আল্লাহর নিদর্শন বলতে আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শনকে বোঝানো হয়েছে। কেননা, এগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, এ সকল কাজ অন্য কারো জন্য নয়, বরং কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সম্পন্ন করা হচ্ছে। তাই এগুলো আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শন বলেই স্থিরীকৃত। জমহুর ফিকাহবিদদের অভিমত হলোÑ এই দৌড়ানো হজের রুকন। তা না করলে হজ সম্পূর্ণ হতে পারে না। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন : এটা ওয়াজিব। এটা না করলে পশু জবেহ করে কাফফারা আদায় করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।