পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন অধিদফতরের পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প ‘টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল)’ এর এখন পর্যন্ত কোন সফলতা নেই। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের গত তিন বছরে অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। তবে এরই মধ্যে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্প শুরুর দ্বিতীয় অর্থ বছরের অডিটে ১৩টি আপত্তি করা হয়। আর এসব আপত্তি সংশ্লিষ্ট অর্থের পরিমাণ দুই কোটি টাকারও বেশি।
সরকারি বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ‘সুফল’ প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাইতে। বনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো, বনজ সম্পদ উজাড় রোধ ও বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকার সংস্থানও এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
এ ছাড়া প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের জাতীয় বনাঞ্চল ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে। প্রকল্প অনুযায়ী প্রথম তিন অর্থবছরে প্রায় এক হাজার ১৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ছাড়ের কথা ছিল। কিন্তু তার এক তৃতীয়াংশও ছাড় হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুফলে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৩৪ কোটি ৮২ লাখ আট হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের শর্ত মেনে এখনও পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়নি। এ ছাড়া বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল ৪০ হাজার জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা থাকলেও কোনও কার্যক্রম শুরু হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বন অধিদফতর ২৮টি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় আছে ৫টি বনাঞ্চল। আট বিভাগের ২৮ জেলার ১৬৫টি উপজেলার ৬০০ গ্রাম এতে সম্পৃক্ত। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-নতুন করে ৭৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বনায়ন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও চলাচল পথের (করিডোর) উন্নয়ন, বিপন্ন বন্যপ্রাণী (হাতি, শকুন, চামচঠুঁটো বাটান, শার্ক রে, ঘড়িয়াল, ডলফিন ও বাঘ) সংরক্ষণ, বিপন্ন প্রজাতির গাছপালার লাল তালিকাকরণ, কিছু স্থাপনা নির্মাণ, বনাঞ্চলের আশাপাশের বননির্ভর ৬০০ গ্রামের ৪০ হাজার পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদি।
গত তিন বছরে প্রকল্পে পণ্য, কার্য, সেবা মিলে ক্রয় অগ্রগতি মাত্র ২৪ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় ১৬২টি প্যাকেজ ক্রয়ের সংস্থান থাকলেও ৮৮টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ২৫টির দরপত্র প্রক্রিয়াধীন। বাকি ৪৯টির প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। চুক্তি হয়েছে ৩৭টি প্যাকেজের। প্রকল্পের কেনাকাটা শুরু করতে ১৬ মাস দেরি হয়েছে। ৯৩টি ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও মাত্র ৫টি ভবনের দরপত্র আহ্বানেই এ কাজ সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৩২ ধরনের বনায়ন কার্যক্রমের ৫০ শতাংশ এবং ৬৩ লাখ ৫০ হাজার চারা উত্তোলন বিতরণের লক্ষমাত্রার বিপরীতে অগ্রগতির হার ৮৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। ৫১ লাখ বনজ-ফলজ চারা উত্তোলন ও বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। ৫টি মডেল উপজেলায় পাঁচ লাখ চারা বিতরণ ও উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অগ্রগতি হয়েছে ৬২ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় বনবিভাগের চারা উত্তোলনের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উন্নত চারা উত্তোলন ও বিতরণ কর্মসূচির কোনও কার্যক্রম এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনাঞ্চল তথা অ্যাসিস্টেড ন্যাচারাল রিজেনারেশন (এএনআর)-এর অংশ হিসেবে দেশি প্রজাতির গাছ লাগানোর কথা রয়েছে প্রকল্প পরিকল্পনায়। ৭১ শতাংশ গাছ লাগানো হলেও যেসব গাছ লাগানোর কথা ছিল তার শর্ত মানা হয়নি। তাছাড়া এসব গাছের চারার ৪০ শতাংশ প্রথম বছরেই মারা গেছে। দ্বিতীয় বছরে কম্পোস্ট সার প্রয়োগের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কিছু বনাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৯০ হেক্টরে স্ট্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট বনায়ন করার কথা। আড়াই বছরে এর অগ্রগতি ১০ শতাংশেরও কম। যেসব চারা লাগানো হয়েছে সেগুলোর আগাছা পরিষ্কার করা হয়নি। পরিচর্যার অভাবে মারা গেছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ চারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম বছরে ধীর ও দ্রুত বর্ধনশীল মিশ্র বাগান তৈরি করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় বছরেরও ম্যানগ্রোভ বাগান তৈরি সম্ভব হয়নি ।
প্রকল্পের আওতায় বিলুপ্তপ্রায় ১০০ প্রজাতি নির্বাচন এবং ৫টি সংরক্ষিত এলাকায় আগ্রাসী প্রজাতির উদ্ভিদ তথা-ইউক্যালিপটাস, আসামলতা, স্বর্ণলতা, ল্যান্টানা ও মটমটিয়ার জরিপ প্রথম পর্যায়ে শেষ হয়েছে। বিপন্ন প্রজাতির বন্য ও জলজ প্রাণী যেমন শকুন, ঘড়িয়াল, ডলফিন ইত্যাদি সংরক্ষণে পরামর্শক সংস্থা নিয়োগের কথা থাকলেও তাতে অগ্রগতি নেই। প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। এ কাজে বেজলাইন জরিপ প্রতিষ্ঠান নিয়োগও হচ্ছে না। সুবিধাভোগী নির্বাচনে সাতটি এনজিওর সঙ্গে চুক্তির কথা থাকলেও মাত্র একটির নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পে অনলাইন (ওপেন ডাটা কিট) পর্যবেক্ষণের সুবিধা চালু হলেও মাঠ পর্যায়ে দক্ষ জনবলের অভাবে তা কাজে আসছে না। গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কমিউনিটি পেট্রোলিং, অফিস বিল্ডিং ও আবাসিক ভবন নির্মাণ, রেসকিউ বোট কেনা, বন্যপ্রাণী কেন্দ্রের জন্য সোলার লাইট স্থাপন, বন্যপ্রাণী জাদুঘর ও লাইব্রেরি স্থাপন, মাটি ভরাট ও উন্নয়ন, বন্যপ্রাণী অলিম্পিয়াড, ফরেনসিক ল্যাবের জন্য রিএজেন্ট কেনাসহ আরও অনেক কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।
প্রকল্পের অগ্রগতি ও অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সংসদীয় কমিটি ইতোমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের ‘সুফল’ খুব ভালো নাম। কিন্তু এর কাজ তত ভালো নয়। প্রত্যাশার ধারে কাছেও নেই তারা। এত বড় প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে গেলে ভিত শক্ত করতে হবে। কিন্তু তাদের সে পরিকল্পনা নেই, বাস্তবায়ন তো পরের কথা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের টেকসই বন ও পরিবেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুফল প্রকল্পটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হওয়ায় এর কাঙ্খিত অগ্রগতি হয়নি। তবে সামনে এর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।