Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জৌলুস হারাচ্ছে নাটোরের চামড়ার বাজার

বকেয়া টাকা না পাওয়ার অভিযোগ

নাটোর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশের মধ্যে নাটোরের চামড়ার বাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রধান বাজার। এক সময় নাটোরের চামড়ার বাজারে অনেক জৌলুস ছিল। আগে নাটোরের চামড়ার বাজার ব্যবসায়ীদের আনাগোনা ও চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদের কাজে মুখরিত থাকতো। এদিকে ট্যানারি মালিকেরা চামড়ার বকেয়া শত কোটি টাকা পরিশোধ না করার কারণে চামড়ার বাজার নিম্নমুখী। তাই সেই কর্মযজ্ঞ আর নেই। আজ বছর তিনেক ধরে দেশে চামড়ার মূল্য নিম্নমুখীর কারণে যেমন ক্ষতি হচ্ছে গরীব মিসকিনদের তেমনি ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অনেক ব্যবসায়ী চামড়ার ন্যায্য দামে বিক্রির অর্থ ফেরত না পাওয়ায় তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।
হতাশা বাড়ছে চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের। সামনে কুরবানির মৌসুম। এবারেও যদি ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে চামড়ার পাওনা টাকা না পাওয়া যায়। তবে এবারও আড়তদাররা কুরবানির পশুর চামড়া ক্রয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
অথচ কম দাম দিয়ে চামড়া কিনে চামড়া জাত পণ্য (যেমন জুতা-স্যান্ডেল- বেল্ট ইত্যাদি) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কুরবানির এই মৌসুমে এই আড়তের সাথে সংশ্লিষ্ট মৌসুমী ব্যবসায়ীদের যেন মাথায় হাত না পড়ে তাই চামড়া ব্যবসায়ীদের ট্যানারি মালিকদের কাছে দাবি বিগত বছরের পাওনা অর্থ পরিশোধ করার। নাটোরের চামড়া আড়তদার মো. লুৎফর রহমান বলেন, আজ থেকে ৫ বছর আগেও নাটোরের চামড়া আড়তে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রচুর চামড়া আসতো। আগে যেখানে ৫ হাজার চামড়া কিনতাম সেখানে এখন ৫’শ চামড়া কিনতে হয়। আগে ট্যানারীর মালিকরা চামড়া কিনে টাকা বকেয়া থাকলেও তা পরিশোধ করে দিত। কিন্তু বছর তিনেক হলো নাটোরের সব আড়তদারদের প্রায় শত কোটি টাকার উপরে ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া আছে। যার কারণে চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া ক্রয়ের টাকা পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, চামড়া কিনে লাভ কি যদি তা বেঁচে টাকাই না পাই। ২’শ আড়তদার ও ১২’শ ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের রোজগার এই চামড়া ব্যবসা থেকে। তদের অনেকই এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে। আবার অনেকেই টাকার অভাবে নামমাত্র চামড়া কিনে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে।
অপর একজন ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, বর্তমানে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ে এমন অবস্থা যে এর সাথে জড়িত অন্যান্য ব্যবসাগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীরা কর্মহীন হয়েছে বা অন্য ব্যবসার দিকে চলে গিয়েছে। তবে ট্যানারি মালিকদের নিকট থেকে বকেয়া অর্থ পেলে আবার চামড়া ব্যবসায়ের সুদিন ফিরে আসবে।
নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম শরীফ বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা বকেয়া পরিশোধের অচলাবস্থা এখনও কাটেনি। তবে তারা আশা দিয়েছেন খুব শীঘ্রই তা কেটে যাবে। তবে রমজানের ঈদের আগে যেখানে ঢাকায় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি পিচ হাজার-বারোশো টাকায় সেখানে ঈদের পরে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি পিচ ২’শ থেকে ৫’শ টাকায়। আবার রমজানের ঈদের আগে যেখানে খাসির চামড়া বিক্রি হযেছে ৫০ টাকায় সেখানে ঈদের পরে খাসির চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০ টাকায়।
চামড়ার মৌসুমী ব্যবসায়ী দেলোয়ার, পিন্টু ও রিংকু বলেন, চামড়া শিল্প যেমন ধ্বংসের মুখে পড়ছে তেমনি গরীব মিসকিনরা পাচ্ছে না তাদের হক। এজন্য ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট ছাড়াও চামড়া রফতানির ক্ষেত্রে কাজ করা ট্যানারি শিল্প মালিক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায় এড়াতে পারেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চামড়ার বাজার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ