Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণ-পশ্চিমে চামড়ার বাজারে স্মরণকালের বড় ধস

প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবখানে প্রায় সমানতালে ধস নেমেছে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে। এই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ মোকাম যশোরের রাজারহাটে ঈদপরবর্তী প্রথম হাটের বেচাকেনা দেখে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ক্ষুদে ব্যবসায়ী যারা ব্যাংক লোন ও চড়া সুদে দাদন টাকা নিয়ে মৌসুমে চামড়া ব্যবসা করে থাকেন, তারা বলেছেন, অন্যান্য বারও কমবেশি লাভ-লোকসান হয়ে থাকে। কিন্তু এবার কল্পনাতীত লোকসান হচ্ছে। তাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোনোভাবেই মেরুদ- সোজা করে দাঁড়ানোর উপায় নেই। ঈদের দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেশি দামে চামড়া ক্রয় করে বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দরে। এবার লবনের দাম অস্বাভাবিক বেশি। চামড়া রক্ষা করতে বাধ্য হয়ে চড়া দামে লবণ কিনতে হয়েছে। এখন আম-ছালা দুই যাচ্ছে। এবছর লবণ ও পুঁজি সংকটে পড়েছেন যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া এলাকার ব্যবসায়ীরা। লবণের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা আদায় না হওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চামড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির হিসাবানুযায়ী ট্যানারি মালিকরা শুধু যশোরের আড়তদারদের বকেয়া প্রায় ৫ কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ করেনি। অঞ্চলভিত্তিক এর পরিমাণ ১ কোটি টাকারও বেশি। এজন্য তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে পারছেন না। চামড়া ব্যবসায়ীদের কথা, দক্ষিণ-পশ্চিমের বড় মোকামে চামড়া বাজারে স্মরণকালের বড় ধরণের ধস নেমেছে। চামড়া নিয়ে অতীতে এতটা সংকটে পড়তে হয়নি।
দেশের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে বাজার বসে সপ্তাহে দুইদিনÑশনিবার ও মঙ্গলবার। যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে হাজির হয় এই হাটে। রাজারহাটের এই চামড়াহাটকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। দুই শতাধিক আড়ত রয়েছে এই মোকামে। এবার ট্যানারি মালিকরা গরুর চামড়া বর্গফুট ৪০ টাকা আর ছাগলের দাম নির্ধারণ করেছেন ২০ টাকা হারে। তারা বলছেন, রাজারহাটে ঈদের আগে গরুর চামড়া ৬০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ২৪ টাকা ফুট বিক্রি হয়েছে। শনিবার রাজাহারহাটের ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে লবনের। একবস্তা লবনের দাম ১৬শ’ টাকা পর্যন্ত ক্রয় করতে হয়েছে। তাছাড়া নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করেছে। সাতক্ষীরা শ্যামনগরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়া ব্যবসায়ী নিমাই দাস জানালেন, নির্ধারিত দামে তিনি চামড়া কিনতে পারেননি। চড়া দামে চামড়া ক্রয় করতে হয়েছে। সেইসঙ্গে লবনের দামও বেশি। যশোর নিউ মার্কেট এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী সজীব দাস বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ক্রয় করা হয়েছে কাঁচা চামড়া। এই চামড়া সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ লবণ। সেই লবণের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। গত বছর যে লবন ৫৭০টাকায় প্রতি বস্তা কিনেছি সেই লবন এবার ১ হাজার ৬শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে। চড়া দামে লবণ কিনে চামড়া সংরক্ষণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল মজিদ পলাশ বলেন, ট্যানারি মালিকরা বকেয়ার ২৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছেন। আড়ৎদারদের ৭৫ শতাংশ টাকা বকেয়া রয়েছে। পুঁজি সংকটে আড়তদাররা চামড়া কিনতে পারছে না।
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, লবন ছাড়া কাচা চামড়া সংরক্ষনের কথা কল্পনা করা যায় না। চামড়া সংরক্ষনে লবনের সংকট দেখা দিয়েছে। বাড়তি দামে লবন ক্রয় করায় চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দামে কাচা চামড়া ক্রয় করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বাড়তি টাকা ব্যয় করে চামড়া সংরক্ষণ করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণ-পশ্চিমে চামড়ার বাজারে স্মরণকালের বড় ধস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ