সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
ত ম সু র হো সে ন
আলুর বস্তার ভেতর ঢুকে শহরে চলে গেলো গাঁয়ের ইঁদুর। বস্তার সাথে সে হিমাগারে ঢুকলো। ভেতরে লম্বা বস্তার সারি। বস্তা কেটে বের হয়ে সে এক সারি থেকে অন্য সারিতে ছোটাছুটি করতে লাগলো। সেখানে সে কোন ইঁদুরের দেখা পেলো না। সে দারুণ চিন্তায় পড়লো। এতো খাবারের স্তূপ! অথচ কোন ইঁদুর নেই। প্রচ- ঠা-ায় সে অস্থির হয়ে পড়লো। এতো ঠা-া লাগছে কেন? এখানে থাকলে সে নির্ঘাত মারা যাবে। হিমাগার থেকে বের হওয়ার জন্য পথ খুঁজতে লাগলো সে। অনেক খুঁজে পানির চিকোন নল দিয়ে সে বহু কষ্টে হিমাগারের বাইরে বের হলো। এতে তার শরীরে সামান্য জখম হলো। জখমের ব্যথায় খুব কাহিল হয়ে পড়লো গাঁয়ের ইঁদুর। একটা পরিত্যক্ত দালানের কার্নিশে চড়ুই পাখির বাসায় শুয়ে কয়েকদিন বিশ্রাম নিলো সে।
দালানটার পাশে ছিলো একটা শস্যের আড়ত। একদিন সেখানে সে তার এক পুরনো বন্ধুর দেখা পেলো। বন্ধুকে পেয়ে সে খুব খুশি হলো। এতো বড় শহরে বন্ধুহীন থাকলে সে ফাঁপড়ে পড়ে মারাই যেতো। শহুরে রান্নাঘরে নানা রকমের খাবার। এসব খাবার কেমন করে খায় সে তার কিছুই জানে না। শহরের বন্ধু তাকে সব শিখিয়ে দিলো। সে বললো, বেশি শ্বেতসার খেলে ডায়াবেটিস হয়। আর অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার খেলে প্রেসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’ মাঝে মাঝে টক আর মিনারেল খাওয়ার পরামর্শ দিলো সে। আর আপেল, কমলা, নাশপাতি, চিনাবাদাম, খেঁজুর প্রয়োজন মতো খেতে বললো সে। ঘি এবং পনির খেতে একদম নিষেধ করলো শহুরে বন্ধু।
গাঁয়ের ইঁদুর এসব কথার কোন গুরুত্ব দিলো না। সে সামনে যা পেলো সমানে খেয়ে যেতে লাগলো। মিষ্টি আর মাংস পেলে তো কথাই নেই। শহুরে বন্ধু তাকে মানুষের ব্যবহার্য কাপড়চোপড় কাটতে নিষেধ করলো। এতে মানুষের সাথে খামাখা শত্রুতা সৃষ্টি হয়। তাকে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে মুখ দিতেও নিষেধ করলো শহুরে বন্ধু। গাঁয়ের ইঁদুর শহরের মজাদার খাবার কুটকুট করে খায়। চানাচুর, আচার, ছনবাবরি, কাটলেট, কেক, আতবচাল, কালোজিরা সবকিছু সে মনের সুখে খেয়ে সাবাড় করে। খায় আর দ্রুত মোটা হয়। কিছুদিনের মধ্যে সে আস্ত এক ভোম্বল হয়ে গেলো। তাকে সক্রিয়ভাবে ডায়েট কন্ট্রোল করার তাকিদ দিলো শহুরে ইঁদুর। কিন্তু লোভনীয় খাবার বাদ দিয়ে সে কৃচ্ছ্রতার পথ গ্রহণ করতে রাজি হলো না।
একদিন গাঁয়ের ইঁদুর খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো। বুকের ব্যথা আর শ^াসকষ্টে সে হাঁপাতে লাগলো। একটা ছেঁড়া মাদুরে শুয়ে শহুরে বন্ধুকে ডাকতে লাগলো সে। তার ডাক শুনে চরম ব্যস্ততার মধ্যেও শহুরে বন্ধু ছুটে এলো। তার অবস্থা দেখে প্রমাদ গুনলো সে। বেছে বুঝে খেলে এমন দশা হতো না তার। এ কথা স্মরণ করে দিলো শহুরে বন্ধু। কাছের একটা দোকান থেকে শ^াসকষ্ট কমার ওষুধ এনে খাওয়ালো শহুরে বন্ধু। সে তাকে তাড়াতাড়ি ইঁদুর হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করলো।
শহরের ইঁদুরের নাম গক্কু আর গাঁয়ের ইঁদুরের নাম ছক্কু। গক্কুকে শহরের সবাই চেনে। কারণ সে অনেক আগে শহরে এসেছে। ইঁদুর কমিটির সভাপতি পিক্কু তার কথার দাম দেয়। গক্কু মোবাইল করে পিক্কুকে জানালো যে তাদের একজন সদস্য খুবই অসুস্থ। একটানা পনের দিন ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকলো ছক্কু। তার হার্টের ধমনী চর্বির লেয়ার দিয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তার হার্টের বাইপাস করার চিন্তা করলো চিকিৎসকরা। তাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণের জন্য আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিলো তারা। এমন কঠিন অসুখে ছক্কু মারাত্মকভাবে নেতিয়ে পড়লো। সে স্বজনের কাছে ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে উঠলো। এখন সে আগের মতো ছুটে ছুটে চলতে পারে না। হাঁটতে দারুণ কষ্ট হয় তার। সে গ্রামে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে গক্কুকে অনুরোধ করতে লাগলো। গক্কু তখন সংসদ নির্বাচনের প্রচারের কাজে খুব ব্যস্ত। ইঁদুরদের সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে। এর মধ্যে শুরু হয়েছে সরকারের ইঁদুর নিধন অভিযান। সংসদ সভাপতি ইঁদুরদের সাবধানে চলাফেরা করার নির্দেশ দিলো। তার নির্দেশ মতো ইঁদুররা নিরাপদ জায়গায় চলে গেলো। রোগীদেরকে একটা গোপন কুটরীতে রেখে জান বাঁচাতে হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্স যে যেদিকে পারলো পালিয়ে গেলো। যেসব রোগীর চলার ক্ষমতা ছিলো তারা অন্যখানে চলে গেলো। তারা অধিকাংশই ছিলো শহরের অধিবাসী। শহরের রাস্তাঘাট তাদের জানা ছিলো।
শূন্য হাসপাতালে একা পড়ে থাকলো ছক্কু। দুঃখে তার কান্না এসে গেলো। কেন সে শহরে আসার অলুক্ষুণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। এক গৃহস্থের জনহীন খামার বাড়িতে থাকতো সে। সেখানের ধানখেত, গাছপালা এবং শস্যভরা গোলাঘর ছিলো তার অবাধ বিচরণক্ষেত্র। সেসব ত্যাগ করে সে আলুর বস্তার ভেতর কেন ঢুকতে গেলো। দেশে তার গুণবতী স্ত্রী এবং দু’টি অবোধ সন্তান আছে। আছে গুণধর ভ্রাতা এবং বৃদ্ধ বাবা-মা। সারাটা গ্রামজুড়ে অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে তার। গাবলু এবং মিন্টু তাকে নিষেধ করেছিলো শহরে না আসার জন্য। হাসপাতালের জনহীন প্রকোষ্টে শুয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো ছক্কু। ইঁদুর নিধনের লোকদের আর আসতে হলো না। ছক্কুর প্রাণবায়ু রোগাক্রান্ত দেহ থেকে নীরবে বের হয়ে হাওয়ায় মিশে গেলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।