Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অতিরিক্ত ভাড়ায় লকডাউনেও চলছে বরগুনার খেয়া

বরগুনা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ৪:৪২ পিএম

বরগুনার ১৮টি খেয়াঘাট লকডাউনে বন্ধ থাকার কথা থাকলেও চলাচল করছে খেয়া। জরুরি প্রয়োজনে পাড়াপাড়ের জন্য আসা যাত্রীদের জিম্মি করে প্রায় ছয়গুন বেনিকট থেকে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন ইজারাদাররা। জেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

বরগুনা জেলা সদরের সাথে ছয়টি উপজেলার যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। এর মধ্যে শুধুমাত্র পায়রা ও বিশখালী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১৮টি স্থানে খেয়া চলাচল করে।
বরগুনা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় বরগুনা পুরাকাটা-আমতলী, বড়ইতলা-বাইনচটকি, গোলবুনিয়া-পঁচাকোড়ালিয়া, চালিতাতলী-বগীর হাট, আয়লা-গুলিশাখালী, ছোট লবণ গোলা-বালিয়াতলী, তালতলী-বালিয়াতলী, লতাকাটা-নকরী, নিশানবাড়িয়া-পাথরঘাটা, কালমেঘা-বান্দরগাছিয়া, কাকচিড়া-গুলিশাখালী, ফুলঝুড়ি -রামনা, বদনীখালী-বামনা, অযোদ্ধা-দক্ষিণ কালিকাবাড়ি, বেতাগীর সৌলজালিয়া ও বেতাগি কচুয়া খেয়াঘাট এই ১৮টি পয়েন্টে খেয়াঘাট রয়েছে। এর মধ্যে এ বি ও সি তিনটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবছর খেয়ার ইজারা দেয়া হয়।

পুরাকাটা-আমতলী, গোললবুনিয়া-পঁচাকোড়ালিয়া, চালিতাতলি-বগীরহাট, আয়লা-গুলিশাখালী, ছোটলবনগোলা-বালিয়াতলী, তালতলী-বালিয়াতলী, লতাকাটা-বাইনসমের্ত-নকড়ি, নিশানবাড়িয়া-পাথরঘাটা, কালমেঘা-বান্দরগাছিয়া, কাকচিড়া-গুলিশাখালী, বড়ইতলা-বাইনচটকি, ফুলঝুড়ি-রামনা স্লুইজ, বামনা-বদনিখালী, অযোধ্যা-দক্ষিন কালিকাবাড়ি এই ১৪টি খেয়া প্রথম শ্রেণির। যার সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ১৫ টাকা। এছাড়া পোটখালী-ফুলঝুড়ি সড়ক, ঢলুয়া স্লুইজ-খেয়াঘাট, পোটকাখালী বাজার-কুমড়াখালী এই তিনটি স্থানে ভাড়া পাঁচ টাকা।

ইজারার শর্তমতে ভোর পাঁচটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এই রেটে ভাড়া আদায় করতে হবে এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তার ইজারা বাতিল করার কথাও শর্তে উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রথম শ্রেণির প্রায় সবগুলো খেয়াঘাটেই সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী পারাপার করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেয়া বরইতলা-বাইনচটকি, পুরাকাটা-আমতলী, নিশানবাড়িয়া-পাথরঘাটা, চালিতাতলী-বগী ও ফুলঝুড়ি-বদনীখালী এই পাঁচটি খেয়া লকডাউনের মধ্যেও নিয়মিত চলাচল করে। আর যাত্রীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের জিম্মি করে আদায় করা হয় অতিরিক্ত ভাড়া।

বড়ইতলা-বাইনচটকি খেয়াঘাটে পারাপার হওয়া যাত্রী সবুজ মিয়া বলেন, শনিবার সকালে আমি করোন পরীক্ষার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার জন্য খেয়া ঘাটে খেয়া চালক আমার কাছে ১০০ টাকা ভাড়া দাবি করে। এসময় আমার সাথে আরো কয়েকজন জরুরি প্রয়োজনে পারাপারে জন্য আসলে প্রত্যেকের কাছ থেকেই ১০০ করে ভাড়া আদায় করে আমাদের পারাপার করা হয়’। সবুজ মিয়া আরো বলেন, এখানের নিয়মিত ভাড়া ১৫ টাকা, কিন্ত আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এভাবে গলাকাটা হয়, এটা দেখার মত কেউ কি নেই। একাধিক যাত্রীর ঠিক একই অভিযোগ। ঘাটের ইজারাদার হাসান মিয়া বলেন, আমরা কোটি টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি, প্রশাসনের নিয়ম মেনেই খেয়া চালাই, লকডাউনে খেয়া বন্ধ রাখার ও সুযোগ নেই, কারণ প্রশাসনের লোকজনকে পার করতে হয়। যাত্রী পারাপার ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে হাসান মিয়া বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সত্য নয়, কিছু লোক জরুরি দরকারে ঘাটে আসলে আমরা এক খেয়ার ভাড়া (রিজার্ভ) নিয়ে তাদের পাড় করি।

আতমলী-পুরাকাটা খেয়ায় জনপ্রতি ১৫ টাকা নির্ধারিত ভাড়ার বিপরীতে ৩০ টাকা ভাড়া আদায় করে নিয়মিত খেয়া চলাচল করে। বরগুনা সদর উপজেলার বাসিন্দা সোহাগ মিয়া বলেন, জরুরি প্রয়োজনে আমি রবিবার দুপুরে আমতলী যাওয়ার সময় খেয়া পার হই। এসময় ৩০টাকা ভাড়া নিয়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০জন যাত্রী নিয়ে খেয়া চলাচল করে। এই ঘাটের ইজারাদার শ্যমল চন্দ্র নামের এক ব্যক্তি। তবে খেয়া পরিচলনা করে হাসান, মজিদ খান ও ফারুক ও সুমন। যোগাযোগ করা হলে শ্যামল চন্দ্র বলেন, ঘাটের ইজারা নিলেও তিনি খেয়া পরিচালনা করেননা। বেশী ভাড়া বা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার বিষয়টি তার জানা নেই।

বরগুনা জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী হারুন অর রশিদ বলেন, লকডাউনের বিধিনিষেধ সম্পর্কিত একটি চিঠি প্রত্যেক ইজারাদারকই দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তেই খেয়াঘাট পরিচালনা হয়। কেউ শর্ত বা নিয়ম না মানে তবে এদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা খেয়াঘাটে একাধিক অভিযান পরিচালনা করছি। এখনো সে অভিযান অব্যহত আছে। কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খেয়া চালায় তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের নিয়োজিত করেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ