Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুখী, মধুমতি ও ভৈরবকে পেতে হলে দিতে হবে কোটি টাকা

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২১, ৪:৪৬ পিএম

ভৈরব, মধুমতি ও সুখী। নাম শুনলেই মনে হয় গ্রামের গৃহস্ত ঘরের তিন সন্তান। কিন্তু না, কোরবানি উপলক্ষে আদর করে লালন-পালন করা একই খামারীর বিশালাকার তিন ষাড়ের নাম ভৈরব, মধুমতি ও সুখী। ওজন, আকৃতি ও সৌন্দর্যে তারা নজর কেড়েছে সকলের। প্রতিদিনই দূর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন তাদের দেখতে। এবার কোরবানির হাট মাতাবে তারা। তবে করোনাকালে নায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ষাড় তিনটির মালিক আবুল হোসেন।

বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকার খামারী আবুল হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে গরু লালন-পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। তিন বছর আগে নিজের গোয়ালের একটি গাভীতে জন্ম নেয় ব্রাহমা জাতের ষাড়ের বাচ্চা। কালো কুচকুচে রংয়ের আকর্ষনীয় চেহারার সেই বাচ্চার নাম রাখেন সুখী। সুখী বড় হাতে থাকে। সুখীর বয়স বাড়ার সাথে সাথে হলিস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের আরও দুটি ষাড়ের বাচ্চা ক্রয় করেন আবুল হোসেন। নাম রাখেন ভৈরব ও মধুমতি। সমবয়সী হওয়ায় সুখী, ভৈরব ও মধুমতির সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে সখ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। আড়াই বছর আগে ক্রয় করা হলিস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড় ভৈরবের ওজন এখন ১৮০০ কেজি। পুরো শরীর কালো ও মাথায় সাদা চিতা এক অন্যরকম আকর্ষনীয় চেহারা দিয়েছে ভৈরবকে। তার পিছনের দুটি পা সাদা হলেও সামনের পায়ের বেশির ভাগ অংশ কালো। ৯ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার এই গরুর দাম হাকা হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকা। পাঁচ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৯ ফুট লম্বা সুখীর ওজন এখন এখন ১৭০০ কেজি। পুরো শরীর কালো সুদর্শন এই ষাড়ের পেটের দিকে লালচে ভাব রয়েছে। সুখি’র দাম ৪০ লাখ টাকা। ৯ ফুট লম্বা ও ৫ফুট ৬ ইঞ্চি মধুমতির ওজন এখন ১৫০০ কেজি। কালো শরীর, মাথায় সাদা চিতা পেট ও পায়ের নিচের অংশে সাদা রং থাকা মধুমতি অনেক শান্তস্বভাবের।মালিক আবুল হোসেন এই মধুমতির দাম চেয়েছেন ২০ লক্ষ টাকা। কোটি টাকা মূল্যের তিন গরুর জন্য আবুল হোসেনকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার খাবার খাওয়াতে হয়। গরুর যত্ন, গোসল ও খাবার প্রদানের জন্য আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী পাপিয়া হোসেন ছাড়াও রয়েছে আবুলের ছোট ভাই হাসান আলী। নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ঘাষ, কুটা, দেশীয় ফল মুলের পাশাপাশি প্রতিদিন দশ কেজি করে দানাদার (খৈল, ভুট্টো, ছোলা, গমসহ নানা প্রকার বীজ) খাবার খায় প্রতিটি গরু। এই তিন বছর ধরে এই গরু পালন করতে গিয়ে ঋণও করেছেন আবুল হোসেন। এক সাথে বিশালাকৃতির তিন গরু দেখতে প্রতিদিনই ভীড় জমায় স্থানীয়রা। কিছুটা বিরক্ত হলেও হাসিমুখে দর্শনার্থীদের গরু দেখান খামার মালিক। খামারী আবুল হোসেন বলেন, গত বছর কোরবানিতেও ষাড় তিনটি বিক্রির জন্য চেষ্টা করেছি। হাটেও নিয়েছি। কিন্তু করোনার কারনে উপযযুক্ত ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারিনি। করোনার পরিস্থিতির কারণে এবারও শঙ্কায় রয়েছি। আসলে কি হবে জানি না। অনেক সখ ও ত্যাগ স্বীকার করে একসাথে তিনটি ষাড় বড় করেছি। এতবড় গরু বাগেরহাট ও আশাপাশের জেলায় নেই। এই গরুর পিছনে আমার পরিবারের সকলের শ্রম রয়েছে। তিনটি গরু কোটি টাকায় বিক্রি করতে চাই। ন্যায্য মূল্যে পেতে সরকারী সহায়তা কামনা করেন তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ লুতফর রহমান বলেন, বাগেরহাটে দিন দিন বড় গরু লালন পালনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্রিজিয়ান, শাহী ওয়াল, ব্রাহমা জাতের ষাড় বেশি পালন করছে খামারীরা। সদর উপজেলার আবুলের গরু তিনটি আমি দেখেছি। আমাদের পরামর্শ নিয়ে সে গরু পালন করে। কোন প্রকার হরোমন বা স্টেরয়েড এই গরুর জন্য আবুল ব্যবহার করেনি। সম্পূর্ণ দেশীয় খাদ্য-খাবার দিয়ে সে গরু পালন করেছে। তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে জেলার মধ্যে বড় গরুর ক্রেতা পাওয়া একটু কষ্ট সাধ্য। তাই আমরা অনলাইন ও বড় বড় শহরে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। যাতে খামারীরা নায্যমূল্য পায় সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরবানির পশু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ