পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী মাসেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এরই মধ্যেই রাজধানীতে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট বসানোর স্থান নির্ধারণ হয়ে গেছে। আর স্থায়ী হাটগুলোতো রয়েছেই। তবে এবছর গত দুই বছরের তুলনায় কোরবানির পশু বেশি বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরবাসীরা বলছেন এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না থাকায় কোরবানির পশু বিক্রি হবে অন্য দুই বছরের তুলনায় অনেক বেশি। কোরবানির পশুর সঙ্কটও থাকবে না।
পশুর খামারিরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দামও ভালো পাবেন তারা। তাদের আশা গত বছর অনেক পশু অবিক্রিত রয়ে গেছে। সেসব পশুর তারা এবার বিক্রি করতে পারবেন। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, এবারের ঈদে কোরবানির জন্য এক কোটি ২১ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে দুই লাখের বেশি। সাধারণ নিত্যপণ্যের মতো গো-খাদ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন খামারি ও পশু পালনকারীরা। ধানের খড়, গমের ছাল, সরিষা, ছোলা, ভূসি, খেসারি, ভূট্টা, ভুট্টা পাউডার, চালের খুদ, খৈল ও চিটাগুড়ও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। তবে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সয়ামিল রফতানি চালু রাখা ও গম আমদানি কমে যাওয়ার অজুহাত দিয়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন উৎপাদনকারী ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে সব গো-খাদ্যের দাম প্রতি মণে অন্তত দুশো টাকা বেড়েছে। এই দাম অব্যাহত বেড়েই চলছে। ঈদের সময় পশু খাদ্যের দাম আরও বাড়ার অশঙ্কা করছেন তারা। তাই এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি তাদের।
জানা যায়, এ বছর রাজধানীতে মোট ১৯টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু ও ছাগলসহ নানা ধরনের পশু রাজধানীর হাটগুলোতে বিক্রির জন্য তোলা হয়। এর মধ্যে দুটি হলো স্থায়ী হাট, যেগুলোতে বছরের অন্য সময়ও পশু বিক্রি হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছে গাবতলী স্থায়ী হাট আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে সারুলিয়া স্থায়ী হাট। এই হাট দুটি ছাড়া ১৭টি অস্থায়ী হাট বসানো হবে। অস্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবে ১০টি আর উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবে ৭টি। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডিজিটাল হাট চালু থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যে ১০ স্থানে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট বসবে সেগুলো হলো- লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা এবং লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের এলাকায় অস্থায়ী হাট বসবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের যে সাত স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসবে- ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাট, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলায় ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্ল-ই থেকে এইচ পর্যন্ত এলাকার খালি জায়গা এবং ৩০০ ফিট সড়ক সংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল-যমুনা হাউজিং কোম্পানির খালি জায়গা ও এর পাশে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন খালি জায়গা মিলিয়ে অস্থায়ী পশুর হাট বসবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য মতে, এবার ঈদুল আজহায় দেশে কোরবানিযোগ্য মোট পশু আছে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি। প্রশিক্ষিত খামারিদের কাছ থেকেই আসবে ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ৪৪২টি। ৪৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৭টি কোরবানিযোগ্য উৎপাদিত পশু গৃহপালিত। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৩৮৩টি। আর ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭৫ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭। এছাড়া অন্যান্য পশু অর্থাৎ উট, দুম্বার সংখ্যা ১ হাজার ৪০৯টি। গত বছর ২০২১ সালে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার। আর ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৮। এছাড়া অন্যান্য পশু অর্থাৎ উট, দুম্বার সংখ্যা ১ হাজার ৪০৯টি।
২০২১ সালে কোরবানিতে পশু জবাই হয়েছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। এর মধ্যে গরু/মহিষ ছিল ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৯টি এবং ছাগল/ভেড়া ছিল ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৮টি। এছাড়াও অন্যান্য পশু জবাই হয় ৭১৫টি। তবে এবার এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হতে পারে। এ বছর সবচেয়ে ভালো পশু উৎপাদন হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯ খামারির কাছ থেকে আসবে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি পশু। চট্টগ্রাম বিভাগের ৮৬ হাজার ৩৬ জন খামারির কাছ থেকে আসবে ১৫ লাখ ৯২ হাজার ১১৪টি পশু। রংপুর বিভাগের ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪০ খামারির কাছ থেকে আসবে ১০ লাখ ৩ হাজার ২৮১টি পশু। খুলনা থেকে আসবে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ২৫১টি পশু। ঢাকা বিভাগ থেকে আসবে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৬টি পশু। বরিশাল বিভাগ থেকে আসবে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৩টি পশু। ময়মনসিংহ থেকে আসবে ২ লাখ ৯ হাজার ৩৪৪টি পশু এবং সিলেট থেকে আসবে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৩টি পশু।
গরুর খামারি রেজাউল ইসলাম বলেন, আমার ঢাকার যাত্রাবাড়ি এবং রাজধানীর বাইরে একটি করে খামার রয়েছে। দুইটি খামারে প্রায় দুই শতাধিক গরু আছে। পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় দিন দিন খরচ বাড়ছে। তবে এবার ঈদে আশা করছি সবগুলো গরু বিক্রি হলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
পাইকারি পশু বিক্রেতা কাজল মিয়া বলেন, গত দুই বছর করোনার প্রকোপ থাকায় বেশি পশু বিক্রি করতে পারিনি। এবার আশা করছি গত দুই বছরের চেয়ে বেশি পশু বিক্রি করবো। এবার সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে রাস্তায় কোরবানির পশু পরিবহন থেকে যদি আমাদের চাঁদা দিতে হয় সেক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যায়। অনেক সময় লোকসানও হয়। এবার যাতে পশু পরিবহন ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি না হয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে ভালো হবে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।