নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ভারতকে হারিয়ে শুভসূচনা বাংলাদেশের
জাহেদ খোকন : অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকির উদ্বোধনী দিন নিজেদের প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি কর্নার (পিসি) স্পেশালিষ্ট আশরাফুল ইসলামের হ্যাটট্রিকে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে শুভসূচনা করলো বাংলাদেশ।
গতকাল বিকালে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে ‘এ’ পুলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ ৫-৪ গোলে হারায় ভারতীয়দের। আশরাফুল হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেন। বিজয়ীদের পক্ষে অন্য গোলটি আসে ফজলে হোসেন রাব্বি’র স্টিক থেকে। ঠিক যেন দেশের স্বীকৃত পিসি স্পেশালিষ্ট মামুনুর রহমান চয়নের প্রতিচ্ছবি। তরুণ আশরাফুল ইসলাম নিজের স্টিকের যাদুতে কুপোকাত করলেন ভারতকে। পিসিতে তার অসাধারণ ড্র্যাগ অ্যান্ড ফ্লিক নজর কেড়েছে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে উপস্থিত কয়েকশ’ দর্শকের। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের আক্রমণের ধারা অব্যাহত ছিলো। পুরো খেলায় একবার পিছিয়ে থাকলেও চারবারই লিড নেয় স্বাগতিকরা এবং শেষ গোলের লিড ধরে রেখেই জয় আয়ত্বে নেয় লাল-সবুজের যুবারা।
শক্তিশালী প্রতিপক্ষের শক্ত রক্ষণদুর্গ ভেদ করা কঠিন হলেও ধারাবাহিক আক্রমণের মুখে তা করে দেখিয়েছে রোমান সরকার বাহিনী। যে কারণে ম্যাচের ৩ মিনিটেই প্রথম পেনাল্টি কর্নার (পিসি) আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এসময় তরুণ পিসি স্পেশালিস্ট আশরাফুলের ড্র্যাগ ভারতীয় গোলরক্ষক পঙ্কজ কুমার ড্রাইভ দিয়ে রক্ষা করেন। রিবাউন্ডটি পেয়েছিলেন আনমার্কে থাকা আরশাদ হোসেন। তিন পুশ করেত পারলেই গোল পেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু আরশাদ বলের লাইন মিস করায় তা আর সম্ভব হয়নি।
শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে কোনও রকম জড়তা না দেখিয়ে বীরদর্পে খেলে যান আশরাফুলরা। তারা দাপটের সঙ্গে খেলে প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গে চালায় একের পর এক আক্রমণ। ভারতও পাল্টা আক্রমণ চালায়। তবে তা দৃঢ়তার সঙ্গেই প্রতিহত করলেও নিয়মিত গোল হজম করতে হয় স্বাগতিকদের। অবশ্য রক্ষণভাগের ব্যর্থতা কাটে দেয় বাংলাদেশের আক্রমণভাগ। বাংলদেশ একাদশে ছিলেন পাঁচ অ্যাটাকার- অধিনায়ক রোমান সরকার, ফরোয়ার্ড নাইমউদ্দিন, মাহবুব হোসেন, আরশাদ হোসেন ও ফজলে হোসেন রাব্বি। যে কারণে স্বাগতিক দলের আক্রমণে ধার ভালোই ছিলো। ম্যাচের ১৫ মিনিটে দ্বিতীয় পিসি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় লাল-সবুজরা। এসময় ফজলে রাব্বীর পুশ নাইম উদ্দিন স্টপ করার পর আশরাফুলের হিট খুঁজে পায় ঠিকানা (১-০)।
পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফিরতে চেষ্টা করে সফল হয় ভারত। ২১ মিনিটে সমতায় ফিরে তারা। স্বাগতিক ফরোয়ার্ড আরশাদ হোসেন ভারতীয় ফরোয়ার্ড ধারমিন্দার সিংকে ডি-বক্সের মধ্যে ফেলে দিলে পেনাল্টি স্ট্রোক পায় অতিথি দল। ধারমিন্দারই নেন স্ট্রোকটি এবং তিনি গোল করে বোকা বানান বাংলাদেশের গোলরক্ষক ইয়াসিন আরাফাতকে (১-১)।
২৬ মিনিটে চমৎকার এক গোলে এগিয়ে যায় ভারত। আবারও ধারমিন্দার সিংয়ের আক্রমণের উৎস। তার করা পাওয়ার হিটে চকিতে কব্জির মোচড়ে যে ফ্লিকটি করেন কনজেংবাম সিং তা ইয়াসিন আরাফাতকে নড়াচড়ার কোন সুযোগই দেয়নি (২-১)। পিছিয়ে পড়ে কিন্তু ঘাবড়ে যায়নি লাল-সবুজরা। বরং নতুন উদ্যোমে আক্রমণে ঝাপিয়ে পড়ে তারা। ৩০ মিনিটে আবারও আশরাফুলের পিসি থেকে করা গোলে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। রাজু আহমেদের করা পুশে স্টপ করেছিলেন নাঈম, আশরাফুল এবার তা উঁচিয়ে না মেরে নেন টার্ফ কামড়ানো হিট, বল আছড়ে পড়ে বোর্ডে (২-২)। আশরাফুলের স্টিকেই দ্বিতীয়বার চালকের আসনে বসে বাংলাদশে। ৩৮ মিনিটে অন্যরকম পেনাল্টি কর্নারে তিনি পূর্ণ করেন নিজের হ্যাটট্রিক। ফজলে রাব্বির করা পুশটি আশরাফুল নিজেই রিসিভ করে নেন কোনাকুনি একটি হিট, বল পরাস্ত করে ভারতীয় গোলরক্ষক পঙ্কজ রজককে (৩-২)।
ম্যাচের ৪৯ মিনিটে আবারো ম্যাচে ফিরে ভারত। এসময় ডানপ্রান্ত থেকে সাপের মতো একবেঁকে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন হারদিক সিং। শুয়ে পড়ে রিভার্স হিট নেন, প্রচ- গতিতে বল আছড়ে পড়ে বোর্ডে (৩-৩)।
তিনটি গোল পিসি থেকে পেলেও প্রথম ফিল্ড গোলটি পায় স্বাগতিক দল ম্যাচের ৫০ মিনিটে। আরশাদ হোসেনের স্কয়ার পাসে হিট করে ফজলে হোসেন রাব্বি গোল করলে তৃতীয়বার লিড নেয় বাংলদেশ (৪-৩)। কিন্তু তিন মিনিট পরেই আবারও সমতা আনে ভারত। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে বক্সের ভেতরে খুব ছোট জায়গার মাঝে পুরো শরির ঘুরিয়ে রিভার্স হিটে গোল করেন করেন দিলপ্রিত সিং (৪-৪)। স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা আশরাফুলের শেষ পিসি যাদু দেখেন ম্যাচের ৬২ মিনিটে। এই পিসি থেকেই নিজের চতুর্থ ও দলের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন তিনি। ফজলে রাব্বি’র পুশ ও নাইমের স্টপে চমৎকার হিটে গোল করে দর্শকদের আনন্দে ভাসান আশরাফুল (৫-৪)। আর এ গোলেই নিশ্চিত হয় ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের চমৎকার জয়। অসাধারণ পারফরমেন্সের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান আশরাফুল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।