Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইউপি নির্বাচন আর পশ্চিম সীমান্তের সড়ক পরিবহন দক্ষিণাঞ্চলে করোনার ভয়াবহ বিস্তৃতি ঘটিয়েছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২১, ৫:৩৩ পিএম

ইউপি নির্বাচনী ডামাডোল আর সময়মত পশ্চিম সীমান্তের সাথে সড়ক পরিবহন বন্ধ না করার খেশারত হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলে করোনার ভয়াবহ বিস্তৃতি অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের একাধীক কর্মকর্তাও গত কয়েকদিনে দক্ষিনাঞ্চলে করোনা সংক্রমন আশংকাজনক বিস্তৃতির কারণগুলোর মধ্যে এ দুটি বিষয়কেও অন্তভর্’ক্ত করেছেন। তবে ঐ ভোটের আগে বরিশাল সফরকালে সিইসি ‘ভোটে করোনা সংক্রমন বাড়ে বলে যে ধারনা, তা ভুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধীক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্র্শ মানলে এসময়ে ইউপি নির্বাচন করা হতনা। পাশাপাশি, পশ্চিম সীমান্তের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধের সুপারিশ সময়মত অনুসরন করলেও বর্তমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও এড়ান যেত বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগন। শুক্রবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায়ও দক্ষিণাঞ্চলে নতুনকরে ২৪৮ জন করোনা সংক্রমনের শিকার হয়েছেন। এসময়ে বরিশালে উজিরপুরে মারা গেছেন আরো একজন। এনিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার অতিক্রম করে আরো ১৩৪ যোগ হল। মৃত্যুসংখ্যা পৌছেছে ৩১২ জনে।
গত ২১ জুন দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ঝালকাঠী পৌরসভায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দক্ষিনাঞ্চলের শহর-গ্রামে ছিল রমরমা প্রচারনা। ব্যাপক জনসমাগমে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই ছিলনা। ঐ নির্বাচনে নির্বাচনী এলাকার প্রায় ২৯ লাখ ভোটারের বাড়ি-বাড়ি ছুটেছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। এ অঞ্চলের ১ হাজার ৬৪৩টি কেন্দ্রের সাড়ে ৮ হাজারেরও বেশী কক্ষে ঐ ভোট গ্রহন করতে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রায় ২৯ হাজার প্রিজাইডিং অফিসার,সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার। পাশাপাশি আইনÑশৃংখলা বাহিনীর আরো ১২ হাজার সদস্য ঐ নির্র্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেন। ২১ জুনের ইউপি নির্বাচনে ২৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোটের আগেই নির্বাচিত হলেও আরো ৬৯৫ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে ছিলেন। পাশাপাশি আরো ৭ হাজার ৭৫৮ জন সংরক্ষিত ও সাধারন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ছুটেছেন। ঝালকাঠী পৌরসভা নির্বাচনেও ৫০ জন প্রার্থী ভোটদের কাছে গেছেন। আর ঐ নির্বাচনে ভোট গ্রহন ও পরের দিন সন্ত্রাশের বলি হলে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪জন।
কিন্তু এ নির্বাচনে ভোট কর্মী ও সমর্থকদের সিংহভাগই মাস্ক পর সহ নুন্যতম স্বাস্থ্য বিধি অনুসরন করেন নি। পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জে নির্বাচনী সভা-সমাবেশেও করোনা সতর্কতা বলতে কিছু চোখে পড়েনি। দক্ষিনাঞ্চল যুড়ে গত কয়েকদিন ধরে করোনার ভয়াবহ বিস্তৃতির পেছনে ইউপি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা সহ স্বাস্থ্যবিধি না মানা অন্যতম কারন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত ৩১ মে দক্ষিণাঞ্চলে করেনা সংক্রমনের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০ জন। কোন মৃত্যু ছিলনা। ১০ জুনও আক্রান্তের সংখ্যা ২০ থাকেও কোন মৃতুর খবর ছিলনা। কিন্তু ২০ জুন, নির্বাচনের আগের দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৯। ২১ জুন আক্রান্তের সংখ্যা ১১৭তে উন্নীত হয়। যা ৩০ জুন ২০৮ জন আক্রান্তের সাথে ২ জন এবং ১ জুলাই এযাবতকালের সর্বোচ্চ ২৮৬ জন আক্রান্তের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর শুক্রবার আক্রান্তের সংখ্যা ২৪৮ জনের মধ্যে মারা গেছেন একজন।
এমনকি মহানগরী সহ বরিশাল জেলা এবং বরগুনা ও পটুয়াখালীতেও গত দিন দশেক ধরে সংক্রমন হার গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বাধীক।
এদিকে গত মাসের মধ্যভাগ থেকে খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা সহ পশ্চিম সীমান্তে ভয়াবহ করোনা বিস্তৃতি শুরুর পরে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ঐসব এলাকার সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন বন্ধের সুপারিশ করা হলেও তাও সময়মত অনুসরন করা হয়নি। ফলে ঐসব অঞ্চলের সাথে অবাধ যাতায়ত দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতিকে যথেষ্ঠ নাজক ও ঝুকিপূর্ণ করে তুলেছে ইতোপূর্বেই। খুলনাÑবাগেরহাট সীমান্তের পিরোজপুরে গত ১৫ দিনে সাড়ে ৫শর মত আক্রান্ত হয়েছেন। এসময়ে মারাগেছেন ৬ জন। ৪ উপজেলার ছোট জেলা ঝালকাঠীতেও প্রায় পৌনে ৪শ আক্রান্ত হয়েছেন গত ১৫ দিনে, মারা গেছেন আরো ৩ জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ