Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুদ্ধবিমান কিনে হতাশ ভারতীয় বিমানবাহিনী

দরকার ১০৮টি, কেনা হয়েছে ৩৬টি। তাও আবার এগুলো হাতে পেতে সময় লাগবে সাড়ে পাঁচ বছর

প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পাকিস্তান ও চীনের সাথে একই সময়ে যুদ্ধ লাগলে ভারতের ৪২ থেকে ৪৪ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান প্রয়োজন হবে। কিন্তু রয়েছে মাত্র ৩৩ স্কোয়াড্রন। তার তিন ভাগের এক ভাগই জরাগ্রস্ত মিগ। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে

ইনকিলাব ডেস্ক : ফ্রান্সের সাথে ৩৬টি ফাইটার জেট ক্রয় করতে ৭৮৭ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে ভারত। যেখানে দরকার ১০৮টি যুদ্ধবিমান সেখানে কেনা হলো ৩৬টি। তা-ও সেগুলো সব হাতে পেতে লাগবে সাড়ে পাঁচ বছর। গত শুক্রবার ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে সই করেছে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকর। কিন্তু তাতে উল্লাস নয় বরং হতাশাই ছড়াল দিল্লিতে বিমানবাহিনীর সদর দফতরে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক খবরে জানা যায়, ইসলামাবাদ-লাহোর হাইওয়েতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নামিয়ে মহড়া শুরু করেছে পাকিস্তান। মুখে যতই পাকিস্তান রুটিন মহড়ার কথা বলুক, নয়াদিল্লির উদ্দেশে পাকিস্তান সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের বার্তা খুবই স্পষ্ট। যুদ্ধের জন্য পাকিস্তান তৈরি। এমন নয় যে, ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে। বরং অঙ্কের হিসেবে তারা এগিয়েই। ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান হাতে চলে এলে এগিয়ে যাবে আরো অনেকটাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে ৮টি এফ-১৬ বেচতে রাজি হওয়ায় দিল্লির চিন্তা বেড়েছিল। কিন্তু রাফায়েল হাতে চলে এলে তারা ফের পাকিস্তানকে টেক্কা দিতে পারবে বলেই মনে করছে।
কিন্তু ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বাহিনীর শক্তি এখনো প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। খাতায়-কলমে যুদ্ধবিমান অনেক হলেও অধিকাংশই জরাগ্রস্ত। বাহিনীতে যত যুদ্ধবিমান রয়েছে তার সব ক’টি একসঙ্গে অভিযানে নামানোর অবস্থায় থাকে না। বিমানের বয়স যত বাড়ে মেরামতের কাজও বাড়ে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, এখনই আমাদের ছয় স্কোয়াড্রন, অর্থাৎ ১০৮টি রাফায়েলের মতো মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট প্রয়োজন। তার বদলে এখন মাত্র দুই স্কোয়াড্রন বিমান কেনার চুক্তি হলো। সেগুলোও সব হাতে আসতে সাড়ে পাঁচ বছর লাগবে। এছাড়াও পাকিস্তান ও চীনের সাথে একই সময়ে যুদ্ধ লাগলে ভারতের ৪২ থেকে ৪৪ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান প্রয়োজন। রয়েছে মাত্র ৩৩ স্কোয়াড্রন। তার তিন ভাগের এক ভাগই জরাগ্রস্ত মিগ। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ভারতীয় বিমানবাহিনী কর্মকর্তাদের হিসাব মতো, আগামী ১০ বছরে অন্তত ৪০০টি যুদ্ধবিমান কেনা হলে তবেই একসঙ্গে পাকিস্তান-চীনের মোকাবিলা করা সম্ভব। বিমানবাহিনীর সেরা অস্ত্র এখন রুশ সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান। কিন্তু তাদের যন্ত্রাংশ জোগাড় করতে বিমানবাহিনীর ঘাম ছুটছে। যার ফলে, যেকোনো সময়ে মাত্র ৫৫ শতাংশ সুখোই ওড়ার অবস্থায় থাকে। তাই সুখোইয়ের যন্ত্রাংশ কেনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে চাইছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ইউপিএ-জমানায় ভারত ১২৬টি মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু প্রক্রিয়াগত কারণে দেরি হওয়ায়, সিদ্ধান্ত বাতিল করে সরাসরি ৩৬টি রাফাল তৈরি অবস্থাতেই কিনে ফেলার পরিকল্পনা হয়। গত শুক্রবার ভারত ও ফ্রান্স যে চুক্তি করেছে, তা ৩৬টি রাফায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যার অর্থ, আরো রাফাল কিনতে হলে নতুন করে দরদাম করতে হবে দিল্লিকে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের ভরসা এখন দেশে তৈরি তেজস। মিগ-২১ ও মিগ-২৭-এর যুদ্ধবিমানগুলো একেবারে অচল হয়ে পড়লে সেই শূন্যস্থান তেজস দিয়েই ভরাট করা হবে। ১২০টি তেজস বাহিনীতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর। কিন্তু সে কাজ করতেও আরো ছয় বছর লাগবে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা একমাত্র একটি বিষয়েই উল্লসিত। তা হলো, রাফায়েলের সঙ্গে মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্র। আকাশ থেকে আকাশে ছোড়ার এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১৫০ কিলোমিটার। তা-ও দৃশ্যমান এলাকার বাইরে। পাকিস্তানের সঙ্গে শেষ সংঘাত, কারগিলের যুদ্ধে মাত্র ৫০ কিলোমটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। পাকিস্তানের হাতে এখন ৮০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। কিন্তু মেটিওর হাতে থাকার অর্থ রাফায়েল যুদ্ধবিমান থেকে ভারতের এলাকা থেকেই একইসঙ্গে পাকিস্তান ও চীনে ক্ষেপণাস্ত্র দাগা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, ভারত-পাকিস্তানের অবস্থান যখন যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব, ঠিক এই সময়ে ভারত ৩৬টি ফাইটার জেট ক্রয় করতে ৭.৮৭ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করল ফ্রান্সের সাথে। গত শুক্রবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার এবং ভারত সফররত ফরাসি প্রতিনিধি জিয়ান ইয়াস লি ড্রিয়াসের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৭.৮৭ বিলিয়ন ডলার চুক্তির এই ফাইটার জেট (বিমান) অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত এবং পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। এই জেট বিমানের অত্যাধুনিক রণকৌশল ভারতের যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। এবিপি, এনডিটিভি, ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • ৭ জুলাই, ২০১৭, ১:২৯ এএম says : 0
    ভারতিয় আর হতশা হবে না এখন। একাই লড়াই করবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুদ্ধবিমান কিনে হতাশ ভারতীয় বিমানবাহিনী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ