Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মুসলিমদের জন্য অ্যাথলিট চার্টার!

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১১:৪৩ পিএম

চলতি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের (ইউরো) এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্সের ফুটবলার পল পগবা যখন হেনিকেইন ব্র্যান্ডের একটি বিয়ারের বোতল টেবিল থেকে সরিয়ে রাখেন, তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে আলোচনা। অ্যালকোহল পান, কিংবা তার প্রসার ও বিজ্ঞাপনে অংশ নেয়া মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ, তাই একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে হয়তো এটা অনুভব করেছেন এর থেকে নিজেকে দ‚রে সরিয়ে রাখা দরকার। কিন্তু এমন একটি পরিস্থিতিতে তাকে ঠেলে দেয়ার কতটা দরকার ছিল?
বিবিসি স্পোর্টের শামুন হাফেজ জানিয়েছেন যে গত শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চার্টার বা সনদ প্রকাশ করা হয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘মুসলিম অ্যাথলিট চার্টার’। এটিকে এ ধরণের প্রথম চার্টার বলে বর্ণনা করা হচ্ছে যার ধারণাটি এসেছে অলাভজনক সংস্থা নুজাম স্পোর্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এবাদুর রহমানের মাথা থেকে। আগে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ)-র সঙ্গে কাজ করা এবাদুর বলেন, ‘পল পগবার বোতল লুকিয়ে রাখার এই ঘটনা এটা বোঝাচ্ছে যে শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।’
মুসলমান পুরুষ ও নারী খেলোয়াড়দের সমর্থন করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠার যাতে এগিয়ে আসে, এই চার্টার সেটিই চাইছে। আর যারা এতে স্বাক্ষর করছে, তারা ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসার ব্যাপারে অঙ্গীকার করছে। চার্টারে সেব মিলিয়ে ১০টি পয়েন্ট রয়েছে, যার মধ্যে অ্যালকোহল পরিহার এমনকি উদযাপনের সময়েও, প্রার্থনার জন্য উপযোগী স্থানের ব্যবস্থা করা, হালাল খাবার এবং রমজান মাসে রোজা রাখার অনুমতি দেয়া। এবাদুর রহমান বিবিসি স্পোর্টকে বলেন, ‘আমি খেলাধুলার জগতে কাজ করার সুবাদে জানি যে এখানে আমার ধর্ম মেনে চলা কতটা কঠিন। খেলোয়াড় ও ক্লাবগুলোর সাথে কথা বলে আমরা এটা অনুভব করেছি যে যুক্তরাজ্যে একটি মুসলিম অ্যাথলিট চার্টার চালু করার এটাই সঠিক সময়। আমরা বিশ্বাস করি এটাই প্রথম এবং এর মতো কিছু আগে হয়নি। সংহতি, সমতা এবং নিজেদের ক্লাব ও টিমে মুসলমান খেলোয়াড়রা যে অবদান রাখছে তাকে স্বীকৃতি দেয়ার যে ইতিবাচক আন্দোলন, তাতে যোগ দিতে শুরু করেছে ক্লাব ও সংগঠনগুলো।’
নুজাম হিসেব করে দেখেছে যে ইংল্যান্ডের চারটি প্রধান ফুটবল লিগের প্রথম টিম এবং অ্যাকাডেমিগুলোয় ২৫০ জনের মতো মুসলিম ফুটবলরার আছে। এদের মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পল পগবা, লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ এবং সাদিও মানে, চেলসির এন’গোলো কন্তে ও অ্যান্তোনিও রুডিগাররা বিশ্বব্যাপী বেশ পরিচিত। এই চার্টার প্রকাশিত হওয়ার আগেই প্রিমিয়ার লিগের পাঁচটি এবং ইএফএলের ১৫টি ক্লাব ইতোমধ্যে একে সমর্থন জানানোর অঙ্গীকার করেছে। ‘কিক ইট আউট’ এবং ফুটবল সাপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের মতো ক্যাম্পেইন গোষ্ঠীগুলো বলছে যে তারা এই উদ্যোগের সাথে আছে।
ব্রেন্টফোর্ড ক্লাবের একজন মুখপাত্র বিবিসি স্পোর্টকে বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হলো মুসলমানেরা এবং এই সম্প্রদায় দ্উত বাড়ছে। প্রিমিয়ার লিগেরই বিভিন্ন ক্লাবে ৭০ জনের মতো মুসলিম খেলোয়াড় খেলে থাকে। ক্লাবগুলো যাতে বাড়িতে ও কাজের জায়গায় এসব খেলোয়াড়দের সমর্থন দেয়, সে ব্যাপারে তাদের সাহায্য দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই চার্টার এবং এর প্রতি যে সমর্থন দেয়া হচ্ছে, তার প্রয়োজন রয়েছে এবং ক্লাবগুলো একে স্বাগত জানাবে।’ ওয়াটফোর্ড একজন মুখপাত্র বলেন যে নুজামের সঙ্গে কাজ করতে পেরে তার ক্লাব ‘রোমাঞ্চিত’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আমাদের প্রথম টিম, নারী টিম এবং অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এই চার্টার বড় উপকারে আসবে।’
এই সংগঠনটি ৯২টি ক্লাবের মুসলিম ফুটবলারদের জন্য উপহার পাঠিয়েছে। যারা এই উপহার পেয়েছেন, তাদের একজন এএফসি উইম্বলডনের মিডফিল্ডার ১৯-বছর বয়সী আইয়ুব আসাল এই চার্টারকে ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গত বছর ১৬ ম্যাচে চারটি গোল দিয়েছেন আসাল। বিবিসি স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের জীবনযাপন কিছুটা ভিন্ন। দিনে পাঁচবার নামাজ আদায় করার মত কিছু দায়িত্ব আপনাকে পালন করতে হয়। আর মদ পান করার মত কিছু বিষয় আছে, যা আপনি চাইলেও করতে পারেন না। এই চার্টারটি মুসলিম ফুটবলারদের জন্য বেশ সাহায্যের হবে, কারণ এটি তাদের অধিকার নিশ্চিত করবে। তারা হালাল খাবার পাবেন, ক্যান্টিনে যাওয়ার ক্ষেত্রে দু’বার ভাবতে হবে না। ভাবতে হবে না কোনটা খাবো, কোনটা খাবো না - এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম আমাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এটা আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি তার চেয়েও বড় ব্যাপার।’
ওয়েস্ট হ্যামের নারী দলের মিডফিল্ডার হাওয়া সিসোকো বলেন, তার ক্লাবে তিনি পূর্ণ সমর্থন পেয়ে আসছেন, যেখানে সবাই তাকে ‘ভালোবাসে। কিন্তু তিনি মনে করেন যে এই চার্টার তাকে আরও সুখী ও শক্তিমান হিসেবে অনুভব করতে সাহায্য করবে, ‘আমার মনে হয় এখন আমার সাথে একটা কমিউনিটি আছে যারা আমাকে সমর্থন দেবে, আমার আর একা লাগে না। নুজামের মাধ্যমে আমি খাদিজা মেল্লাহকে পেয়েছি, যিনি একজন জকি। এটা জেনে ভালো লাগে যে অনেক মুসলিম খেলোয়াড় আছে, যাদের সঙ্গে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি। মানুষ কীভাবে থাকে, তারা কী ভাবে এগুলো জানতে পেরে ভালো লাগে।’ তিনি যোগ করেন, ‘একজন মুসলিম হিসেবে মানুষকে সঠিক বার্তাটা দেয়া প্রয়োজন। আমি এখানে সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করি। যখন আমি চেঞ্জিংরুমে থাকি, তখন তারা কেবল আমাকে দেখে না- তারা দেখে সকল মুসলমানকে। আমাকে সবসময় ভালো মেয়ে হয়ে থাকতে হবে, আমার পক্ষে যতটা ভালো হওয়া যায়।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অ্যাথলিট চার্টার
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ