Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার পদদলিত হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১১:৪৬ পিএম

সরকারের এই পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকারকে পদদলিত হয়েছে। প্রস্তাবনায় না থাকার পরও অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বহাল রেখে অর্থবিল ২০২১ পাস করায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। অর্থবিলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল করা দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতার নামান্তর। সততা, নৈতিকতা ও সংবিধান পরিপন্থি।

গতকাল বুধবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে করা হয়, নগদ টাকা থেকে শুরু করে সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে রাখা টাকা, প্লট ও ফ্ল্যাট কিংবা নতুন বিনিয়োগের জন্য দেওয়া সুযোগটিতে তথাকথিত বাড়তি কর ও নামমাত্র জরিমানা দেওয়ার বিধান করা হলেও, চূড়ান্ত বিচারে এটি দুর্নীতিবাজ ও এর পৃষ্ঠপোষকদের মাল্যদানসম উপহার হিসেবে বিবেচনা করছে টিআইবি। কেননা বিনা প্রশ্নে দেওয়া এ সুযোগ কালো টাকার মালিকদের আরও অবৈধ অর্থ উপার্জনের আইনগত গ্যারান্টি হয়ে উঠতে যাচ্ছে, যেটি যে কোনো বিচারে নৈতিকতা বিরোধী, দুর্নীতিসহায়ক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি।

বাজেট ঘোষণায় কোনো ধরনের উল্লেখ না থাকার পরও কীভাবে তা পুনরায় অর্থবিলে যুক্ত হলো? সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা নিয়ে সরকার এবার রীতিমতো অশুভ চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। কেননা, ন্যায্যতা ও ন্যায়নিষ্ঠতার নামে অর্থমন্ত্রী যে বিষয়টি প্রথমে বিবেচনা করেননি, তা কোন নৈতিকতার বিচারে চূড়ান্তভাবে রেখে দিলেন, সে ব্যাখ্যা তিনি অর্থবিল পাসের সময়ও দেননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এ ক্ষেত্রে বিতর্ক ও সমালোচনা এড়াতেই সুযোগটি প্রাথমিকভাবে বাজেটে কোথাও রাখা হয়নি। যদিও বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় শুরু থেকেই ছিল। এটি শুধু বাজেট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেনি বরং সরকারের মাঝে জবাবদিহির সংস্কৃতি ক্রমেই বিলুপ্ত হওয়ার ইঙ্গিতও বহন করে। সরকারের এই পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকারকে পদদলিত করছে।

পাস হওয়া অর্থবিলে তালিকাভুক্ত শেয়ার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটসহ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ, নগদ টাকা, ব্যাংক ডিপোজিট এর মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করতে ২৫ শতাংশ হারে কর এবং মোট করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই হার ছিল ১০ শতাংশ।
এছাড়া, অঞ্চলভেদে জায়গা অনুপাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর ও জরিমানা দিয়ে জমি, ভবন, এপার্টমেন্ট কিনেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, কর ও জরিমানা ধার্য করে সরকার যে বার্তাই দিতে চায় না কেনো, এর ফলে যে অনৈতিকতা ও দুর্বৃত্তায়নের সুযোগ বর্ধিতমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করলো, তার বিনিময় মূল্য কোনোভাবেই তুলনীয় হতে পারে না। এতে সাময়িকভাবে কিঞ্চিৎ বেশি কর পাবার সুযোগ তৈরি হলেও, এর বিপরীতে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বার্থান্বেষী শক্তির কাছে সরকারের যে নৈতিক পরাজয় ঘটলো, তা সত্যিই শঙ্কিত হবার মতো। সরকারের এই অবস্থান বৈষম্যমূলক, দুর্নীতিসহায়ক ও সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা কখনো কাম্য হতে পারে না। নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে এমন সুযোগ আগে থেকে রাখা হলেও এর মাধ্যমে কত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে কিংবা আদৌ হয়েছে কি-না, তার কোনো হিসাব সরকার কখনো প্রকাশ করেনি। সরকার একদিকে কালোটাকার মালিকদের নতুন করে কালোটাকা তৈরির আইনি গ্যারান্টি দিচ্ছে আর অন্যদিকে সৎ নাগরিকদের প্রলোভিত করছে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হতে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি বললেও অত্যুক্তি হবে না যে দেশে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ উচ্চতরমাত্রা পেতে যাচ্ছে, যা সত্যিই চরম হতাশার। তারপরও টিআইবি আশা করে, আর্থিকখাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে সরকার সদিচ্ছা দেখিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।



 

Show all comments
  • মোঃ+দুলাল+মিয়া ১ জুলাই, ২০২১, ১:৩৫ এএম says : 0
    সংসদীয় পদ্ধতি যার অর্থ হচ্ছে দলীয় আমলা তন্ত্র শাসন যতদিন এই পদ্ধতি দেশে থাকবে ততদিন এই ভাবেই চলবে,আমরা ছোট একটি দেশে সংসদীয় পদ্ধতির পয়োজন ছিল না,কিন্তু জনগণ কে বোকা বানাইয়া তাহা করেছে সব লুঠ পাঠ করে খাওয়ার জন্য,এই পলিসি এই পলিটিক্স 100%ভারতের ছিল,ভারত চিন্তা করে দেখলেন রাষ্ট্র পতি পদ্ধতি থাকলে বাংলাদেশের ভিতরে প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই,যদি সংসদীয় পদ্ধতি করতে পারি তবে প্রভাব বিস্তার করা সহজ হবে,ভারত গোপনে 1991তে দুই নেত্রীর গোপন বৈঠকে তাহা বাস্তবায়নের সুযোগ নিয়েছিল,ভারতের সাথে যোগাযোগ করেই তত্কালীন সংবিধান সংশোধন করেছে দুই নেত্রী,ভারতের পভুরাই আমাদের বরবাদ করেছে ,রাষ্ট্র পতি পদ্ধতি বাতিল করেছে,কিন্তু আমাদের দেশের বিশিষ্টজনেরা জ্ঞানী গুনী বেকতিগন তাহা বুজে নাই,যার জন্য আজকে এই আমলা তান্ত্রিক সংসদীয় পদ্ধতির খেসারত জনগণ ভুগছেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ