Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সউদীতে সংস্কার : বদল নাকি রাজকীয় ক্ষমতার খেলা?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

সউদী আরবে গত কয়েকবছর ধরে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে সংস্কারকাজ চলছে। তবে এসব পরিবর্তনের লক্ষ্য কি সমাজে পরিবর্তন আনা, নাকি এটি ক্ষমতা বাড়ানোর আরেকটি কৌশলমাত্র? এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন:
চলতি মাসের শুরুর দিকে সউদী আরবে একটি আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। ফলে এখন থেকে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারী তার বাবা বা অন্য পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি না নিয়ে স্বাধীনভাবে বাস করতে পারবেন। এর কিছুদিন পর আরেক ঘোষণায় বলা হয়, এখন থেকে মেয়েরা মক্কায় হজ করতে চাইলে নিবন্ধন করতে পারবেন। সেজন্য তাদের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন পড়বেনা। চাইলে অন্য মেয়েদেরও সঙ্গে নেয়া যাবে।
চলতি সপ্তাহে সউদী সরকার বিদেশ থেকে বই ও ম্যাগাজিন আমদানির নিয়ম সহজ করার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ আমদানির অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে সেন্সরশিপের যে নিয়ম ছিল সেটা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এর আগেও সউদী আরবে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সউদী আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান। এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়। ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন। সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে।
‘কোনো কিছু স্পর্শ করছে না, সবকিছু পরিবর্তন করছে : ওয়াশিংটনভিত্তিক ফরেন পলিসি থিংক ট্যাংক ‘দ্য কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’ এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ের ভিজিটিং ফেলো ইয়াসমিন ফারুক ও সিনিয়র ফেলো নাথান ব্রাউন সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন, যা তাদের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম- ‘সউদী আরবের ধর্মীয় সংস্কার কিছু স্পর্শ করছে না, কিন্তু সবকিছু পরিবর্তন করছে’।
তারা বলছেন, এই যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই অর্থপূর্ণ পরিবর্তন নয়। এগুলো আসলে প্রক্রিয়াগত, আমলাতান্ত্রিক ও আইনগত পরিবর্তন। তারা বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো এই পরিবর্তনগুলো আবার বাতিল করে দেয়া যেতে পারে। ফারুক ও ব্রাউন লিখেছেন, এই পরিবর্তনগুলো মোহামেদ বিন সালমানের ক্ষমতা বাড়ানো ও তার প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করার কেবল আরেকটি উপায় বলে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে।
শুধুমাত্র প্রোপাগান্ডা? : সামাজিক কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসলেও সউদী শাসকেরা কীসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন সেই বিষয়ে এখনও অস্বচ্ছতা, অস্পষ্টতা থেকে গেছে। সউদী সরকারের সমালোচকরা বলেন, সামাজিক উদারতা ও রাজনৈতিক উদারতার মধ্যে পার্থক্য এখনও একটি সমস্যা। বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা সউদী আরবে চলা কয়েকটি ভন্ডামির উদাহরণ তুলে ধরেছে। যেমন গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার আন্দোলন করতে গিয়ে কারাগারে যাওয়া নারী অ্যাক্টিভিস্টদের এখনও জেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া মৃত্যুদন্ড কমানোর অঙ্গীকার করার পরও দেশটি এখনও মৃত্যুদন্ড দেয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ।
বার্লিনের ইউরোপিয়ান সউদী অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটসের গবেষক দুয়া ঢায়নি বলছেন, সউদী আরবে যে সংস্কারগুলো করা হচ্ছে তার প্রভাব আছে, তবে তা সীমিত। ‘কিছু পরিবর্তন হয়েছে, তবে রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে ব্যবহার কিংবা বাকস্বাধীনতা বিষয়ে প্রকৃত পরিবর্তন হয়নি’ -বলেন তিনি। ঢায়নি বলেন, ‘এ পরিবর্তন (সংস্কারগুলো) মানবাধিকার বিষয়ে অর্থপূর্ণ উপায়ে প্রভাব ফেলেনা, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না তা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এগুলো শুধুই প্রোপাগান্ডা’। সূত্র : ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদীতে সংস্কার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ