প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
আমাদের সিনেমা-নাটক কি আমাদের চিরায়ত কৃষ্টি, সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে গেছে? এমন প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সময়ে যেসব সিনেমা ও নাটক নির্মিত এবং প্রদর্শিত হচ্ছে, সেগুলোর গল্প ও চিত্রনাট্য দেখলে বোঝা যায়, আমাদের মূলধারার সংস্কৃতির ছিঁটেফোটাও তাতে প্রতিফলিত হচ্ছে না। প্রেম-ভালবাসা, ভাঁড়ামোপূর্ণ কমেডি গল্প ছাড়া নাটক নির্মিত হতে দেখা যায় না। এসব নাটকে না আছে আমাদের চিরায়ত মূল্যবোধসম্পন্ন শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিফলন, না আছে নীতি-নৈতিকতার প্রদর্শন। এমনকি আমাদের যুথবদ্ধ পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় শাসন-বারণের কোনো আবহ দেখা যায় না। অথচ একটা সময় আমাদের সিনেমা-নাটকে পরিবারের সুখ-দুঃখ, নৈতিকতা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হতো। বিপদে-আপদে আল্লাহর নাম নেয়া, নামাজ পড়া, আজান এবং মসজিদের দৃশ্য প্রায় প্রত্যেক নাটক-সিনেমায় দেখানো হতো। নায়ক-নায়িকা কিংবা মা-বাবার চরিত্রগুলোর সংলাপের মাধ্যমে ধর্মীয় চেতনার প্রকাশ পেতো। এখন কোনো সিনেমা বা নাটকে এ ধরনের দৃশ্য দেখানো হয় না। আমাদের দেশ যে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ এবং এখানের পরিবার ও শিল্প-সংস্কৃতি, আচার-আচরণে রক্ষণশীল, তা যেন নির্মাতারা ভুলে বসে আছেন। কোনো নাটক-সিনেমায়ই আমাদের চিরায়ত মূলধারার সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে না। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাটক-সিনেমা আবর্তিত হয় তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, সামাজিক ও পারিবারিক প্রথা নিয়ে। আমরা যদি ইরান ও তুরস্কের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, তাদের নাটক-সিনেমায় পরিবার, সমাজ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এসব নাটক-সিনেমা অস্কার পুরস্কার পাওয়াসহ সারাবিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ইরানের সাথে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা দিন দ্য ডে নির্মাণ করতে গিয়ে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক, প্রযোজক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি অনন্ত জলিল তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ইরানে নায়িকাকে হিজাব তো পরতেই হয়, এমনকি হাতের কব্জি পর্যন্ত জামা পরতে হবে-এটা বাধ্যতামূলক। অথচ তারা এই শালীন পোশাক পরে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্যে থেকে সিনেমা নির্মাণ করে বিশ্ব জয় করে চলেছে। অনন্ত তার এ অভিজ্ঞতার কথা না বললেও ইরানের সিনেমা দেখলে যে কেউ তা দেখতে পাবেন। ইরানের সিনেমা ইসলামী মূল্যবোধ ও শিল্প-সংস্কৃতি ধারণ করেই বিশ্বে খ্যাতি লাভ করেছে। তুরস্কের নাটক-সিনেমায়ও তাদের শিল্প-সংস্কৃতি তুলে ধরে নির্মিত হচ্ছে। তাদের একেকটি ইতিহাসভিত্তিক সিরিয়াল ও সিনেমায় ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং তাদের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা নানাভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে তুরস্কের বেশ কয়েকটি সিরিয়াল বাংলায় ডাব করে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারের পর আমাদের দেশে তা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সুলতান সুলেমান, এরতুগালসহ এমন আরও অনেক টার্কিশ সিরিয়াল এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, চ্যানেলগুলো অনেকটা প্রতিযোগিতা করে বাংলা ডাবকৃত সিরিয়াল প্রচার করছে। সম্প্রতি তুরস্কের সিরিয়ালের জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় একটি প্রযোজনা সংস্থা তুরস্ক থেকে ছয়টি সিনেমা আমদানি করে বাংলায় ডাব করে তা টিভি চ্যানেলে চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। দেখা যাবে, তুরস্কের এসব সিনেমাও ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পাবে। অথচ আমাদের দেশের মতো ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন সামাজিক ব্যবস্থার কোনো চিত্র নাটক বা সিনেমায় তুলে ধরতে দেখা যাচ্ছে না। অনেক নির্মাতা মনে করেন, এসব তুলে ধরলে তাদের মৌলবাদী বলা হবে। তাদের এ ধারণার বিপরীতে বলা যায়, ইরান, তুরস্ক ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে যেসব সিনেমা ও সিরিয়াল নির্মাণ করে বিশ্বজয় করছে, তাদের তো মৌলবাদী বলা হচ্ছে না। বরং বিশ্বব্যাপী তাদের শিল্প-সংস্কৃতিসম্পন্ন সিনেমা ও সিরিয়াল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী ভারতের সিনেমা ও সিরিয়ালের কথা ধরি, তাহলে দেখা যাবে, এমন কোনো সিনেমা বা সিরিয়াল নেই যাতে তারা তাদের ধর্মচর্চা, পূজা-অর্চনা, মন্দির দেখায় না। সংলাপেও তারা তাদের দেব-দেবীর নাম অহরহ উচ্চারণ করছে। এসব সিরিয়াল আমাদের দেশে জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। এতটাই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে যে, এসব সিরিয়াল দ্বারা দর্শক প্রভাবিত হচ্ছে। তাদের সিরিয়ালে নায়ক-নায়িকার ড্রেস নিয়ে বাণিজ্যও হচ্ছে। এসব ড্রেস আমাদের দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে। এমনও ঘটনা ঘটেছে, কয়েক বছর আগে একটি ভারতীয় সিরিয়ালে পাখি চরিত্রের ‘পাখি’ ড্রেস ঈদে কিনে না দেয়ায় এক কিশোরী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। আবার ক্রাইম পেট্রল দেখে অনেকে অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি কেরাণীগঞ্জে এক তরুণী কর্তৃক তার মা, বাবা, বোন হত্যার ঘটনায় ক্রাইম পেট্রলের প্রভাব রয়েছে। ক্রাইম পেট্রলে দেখানো হত্যার ঘটনায় প্রভাবিত হয়ে সে এ খুন করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ এক ভয়াবহ ঘটনা। একটি সিরিয়াল কতটা প্রভাবিত করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। শুধু খুনের এই ঘটনাই নয়, ক্রাইম পেট্রল দেখে অনেক অপরাধী প্রভাবিত হয়ে অপরাধ করছে। ফলে শিল্প বোদ্ধাদের অনেকে বলছেন, এ ধরনের সিরিয়াল আমাদের দেশে বন্ধ করে দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। তারা এ কথাও বলেন, আমাদের নাটক-সিনেমার গল্পে যদি আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি, সামাজিক, পারিবারিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হতো, তাহলে দর্শক তা দেখত। যেমনটি তারা ভিনদেশী সিরিয়ালগুলো দেখছে। আমরা আধুনিকতার কথা বলে, নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে দিক-ভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। বিশ্বে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছি। ইরান, তুরস্ক, কোরিয়া, চীন যদি তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে সিরিয়াল ও নাটক নির্মাণ করে বিশ্বজয় করতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না? আধুনিকতা মানে তো এই নয় যে, নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে মিশ্র ও ভিনদেশের সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরতে হবে। আমাদের দেশে এক সময় বিটিভিতে অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক ও ধারাবাহিক প্রচারিত হয়েছে। এসব নাটক জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে তুলে ধরা। সেখানে নামাজ, রোজা, মসজিদ, আজান সবই ছিল। এখন আমাদের নাটক-সিনেমায় এসবের কোনো উপস্থিতি নেই। কেউ বলতে পারবে না এসব নাটক-সিনেমা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশের। এ কথাও বলতে পারবে না, এগুলো নির্দিষ্ট কোনো দেশের। অর্থাৎ আমাদের নাটক ও সিনেমা এখন আত্মপরিচয়হীন হয়ে এগিয়ে চলেছে। অথচ আমাদের দেশেই একটি সিরিয়াল একটি সিনেমা যে কি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে পারে তার অসংখ্য নজির রয়েছে। বেগম মমতাজের সকাল-সন্ধ্যা, হূমায়ুন আহমেদের কোথাও কেউ নেই সহ তার সব নাটক, ভাঙনের শব্দ শুনি, সময়-অসময়, সংশপ্তক সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। কোথাও কেউ নেই-এর চরিত্র বাকের ভাইয়ের ফাঁসির ঘটনা তো তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। বাকের ভাইকে ফাঁসি দেয়া যাবে না বলে মিছিল হয়েছিল। দর্শক জেল গেটে গিয়ে বসেছিল। এই যে দর্শকের উন্মাদনা তা আমাদের সামাজিক-পারিবারিক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে। হূমায়ুন আহমেদের অনেক নাটকে কোরানের আয়াত উল্লেখ করাসহ ইসলামের বিভিন্ন নিয়ম-কানুনের কথা বলা হয়েছে। আবার জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ করেছে। এমন আরও অসংখ্য সিনেমা রয়েছে যা মানুষকে যেমন শিক্ষা দিয়েছে তেমনি বিনোদনও দিয়েছে। এখন আমাদের কোনো নাটক বা সিনেমা দর্শকের মাঝে কোনো ধরনের উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পারছে না। এর মূল কারণই হচ্ছে, আমাদের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি, সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নীতি-নৈতিকতা থেকে সরে যাওয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।