Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আতঙ্কে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

আসছে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ-শাটডাউন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০২১, ১২:০৩ এএম

করোনার সংক্রমণ এড়াতে আগামী সপ্তাহে কঠোর বিধি নিষেধের ঘোষণা আসছে। ইতোমধ্যে টেকনিক্যাল কমিটি টানা ১৪দিন শাটডাউনের সুপারিশ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেকোনো সময় কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণা আসছে। এতে করে আতঙ্কে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। একই সাথে আশপাশের জেলা থেকে রাজধানীতে মানুষের প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে চলাচল করতে হচ্ছে। তাতে ভোগান্তি ও খরচ দুটোই বেড়ছে।
সরেজমিনে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ছোট ছোট পরিবহনে যাতায়াত করছেন। সবার দাবি, জরুরি প্রয়োজনেই যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।
খিলগাঁও থেকে আসলাম নামে একজন যাত্রী এসেছেন, যাবেন চাঁদপুর। তিনি বলেন, জরুরি কাজে বাড়ি যেতে হবে। কিন্তু টার্মিনালে এসে যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে মনে হচ্ছে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। উপায় নেই, যেতেই হবে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাসের চালকরা কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করছেন। মাইক্রোবাসচালক জিলানী কুমিল্লার যাত্রী ডাকছেন। তিনি বলেন, জনপ্রতি ৮০০ টাকা ভাড়ায় কুমিল্লার যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। অনেকেই বিপদে পড়ে যাচ্ছেন। তাদের কথা চিন্তা করেই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উত্তরার আব্দুল্লাহপুর বাস টার্মিনালে দেখা যায়, রংপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রীদের মাইক্রোবাসের হেলপার, চালকরা ডাকছেন। ভাড়ায় দেনদরবার হওয়ার পর তারা গাড়িতে উঠছেন। অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন বলে জানান। এসব যাত্রীর অনেকে ঢাকার গণপরিবহনে আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ পর্যন্ত যাচ্ছেন। তারপর সেখান থেকে মাইক্রোবাসে উঠে গন্তব্যে যাচ্ছেন। বাসের টিকিট কাউন্টারেই চলছে মাইক্রোবাসের যাত্রী বুকিং ও ডাকাডাকিসহ সব ধরনের কার্যক্রম। কয়েকজন যাত্রী জানান, ঢাকার আশেপাশের জেলায় সরকারের দেওয়া লকাডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে এভাবে মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াত করছে মানুষ। গতকাল যারা রওনা করেছেন তাদের অনেকেই সামনের ১৪দিদন কঠোর বিধিনিষেধের আতঙ্কে ঢাকা ছাড়ছেন। সৈকত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি টিউশনি করে চলতাম। কঠোর বিধিনিষেধ দিলে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। সে কারণে আগেভাগেই গ্রামে চলে যাচ্ছি। সৈকতের সহযোগী শরীফ বলেন, এতদিন কোচিং সেন্টার খোলা ছিল। সে কারণে টাকা রোজগার করতে পেরেছি। কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ হলে কোচিং আর চলবে না। ঈদের আগে আর কোচিং নাও খুলতে পারে। সে কারণে বাড়ি যাচ্ছি। রিকশাচালক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি জামালপুর যাবেন। শাশুড়ি অসুস্থ থাকায় তাকে নিয়ে বাড়ি যেতে হবে। কিন্তু মাইক্রোবাসচালক অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছে। এত টাকা তার কাছে নেই। অসহায় হয়ে পাম্পের নিচে বসে আছেন তিনি।
যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে মাইক্রোবাসে যাত্রী তোলা হচ্ছে। কেউ যাচ্ছেন সপরিবারে, কেউবা একা। মোবারক নামে একজন জানান, তিনি পরিবারকে আগের দিন নোয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজ নিজে যাচ্ছেন। ভাড়া অনেক বেশি অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার শাটডাউন দিচ্ছে, তার আগে অন্তত দূরপাল্লার বাস খুলে দিতে পারতো। কারণ যারা যাওয়ার তারা কিন্তু যাবেই, সেটা যে কোনো উপায়ে হোক। ঢাকার চারপাশের ৭ জেলার লকডাউনের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে কঠিন শাটডাউনে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে যাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যারা ফুটপাতে ব্যবসা করে তারা তো আর ১৪দিন বসে খেতে পারবে না।
অন্যদিকে, ঢাকার বাইরে থেকেও দলে দলে মানুষ ঢাকা আসছে। ঢাকার আশপাশের ৭টি জেলায় লকডাউন ঘোষণার পর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দূরপাল্লার বাস। এতে করে ঢাকায় আসতে গিয়ে মানুষ বিপাকে পড়েছে। বিভিন্ন যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে আসতে হচ্ছে। পিরোজপুর থেকে গতকাল ঢাকায় এসেছেন জুয়েল নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ৫ দিনের ছুটি নিয়ে জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি গিয়ে লকডাউনে আটকা পড়েছিলাম। ভোরে রওনা করে বিকালে ঢাকায় এসেছি। ঢাকা পর্যন্ত আসতে জুয়েলের ১২শ’ টাকা খরচ হয়েছে। পথিমধ্যে ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং ফেরি ব্যবহার করতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, খরচ বেশি আবার কষ্টও বেশি। কি করবো চাকরি বাঁচাতে হলে না এসে উপায় ছিল না। জুয়েলের মতো হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘ ভোগান্তির পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দি সেতুর কাছে পুলিশ আটকে দিচ্ছে যানবাহন। সেখান থেকে কেউ হেঁটে, কেউ অটোরিকশা বা প্রাইভেট কারে করে ঢাকায় আসছেন। রিফাত নামে একজন বলেন, মহাসড়কে যানবাহন পাওয়া মুশকিল। এ কারণে বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওনা করেন অনেকেই। এতে কয়েক গুণ কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
এদিকে, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও শিমুলিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই শিমুলিয়ায় যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। ফেরিতে চড়ে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে যাত্রীরা এপারে আসছেন। তবে শিমুলিয়া ঘাট থেকেও কিছু যাত্রী ওপারে বাংলাবাজার ঘাটে যাচ্ছেন। সরকার ঘোষিত লকডাউনে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের ফেরিতে যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন। শাটডাউন ঘোষণার আশঙ্কায় যাত্রীদের ভিড় বেড়ে গেছে। সড়কে চেকপোস্ট বসিয়েও আটকানো যাচ্ছে না যাত্রীদের।
বিআইডবিøউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে বর্তমানে ১৫টি ফেরি সচল রয়েছে। ঘাটে গাড়ির চাপ নেই। স্বাভাবিকভাবেই পণ্যবাহী ও সেবামূলক কাজে নিয়োজিত গাড়ি পারাপার হচ্ছে। লকডাউনের নিয়ম অনুযায়ী, শুধু পণ্যবাহী ও জরুরি যান পারাপারের কথা থাকলেও যাত্রীরা ঘাটে আসছেন। ফেরিতে গাড়ি ওঠানোর সময় তারা ফেরিতে উঠে পড়ছেন।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ফেরি ভরে যাত্রীরা এপারে আসছেন। সকালে যাত্রী চাপ কম থাকলেও বিকেলে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশমুখে চেকপোস্ট রয়েছে। তবে এপার থেকে খুব কম সংখ্যাক যাত্রীই ওপারে যাচ্ছেন। মূলত শাটডাউন ঘোষণার আশঙ্কায় ঘাট এলাকায় মানুষের ভিড় বেড়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুন করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকার আশপাশের চারটিসহ সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। জেলাগুলোয় আগামী ৯ দিন জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশে দূরপাল্লার বাস ও সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন, শপিংমল খোলা রয়েছে।

 

 



 

Show all comments
  • Shahin Hossain ২৬ জুন, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    গরীব মানুষ মারার লকডাউন
    Total Reply(0) Reply
  • Sk Islam ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৩ এএম says : 0
    লকডাউন বলতে আভিধানিকভাষায় বোজায় জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত সব বন্ধ আর বাংলার জনগন ইতিপূর্বেই বাংলাদেশে নানা ধরনের লকডাউন দেখেছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:1.কঠোর লকডাউন।2.এলাকাভিত্তিক লকডাউন।3.স্বাভাবিক লকডাউন।4.শিথীল লকডাউন।5.রাস্তায় বাশের বেড়া দিয়ে লকডাউন।6.রাস্তায় পুলিশের দৌড়ানি খাওয়া লকডাউন ইত্যাদি।এবার আমরা দেখতে চলেছি শাটডাউন!কে জানে কত প্রকার চমক অপেক্ষা করছে এই শাটডাউনের।
    Total Reply(0) Reply
  • Helal Masud ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৩ এএম says : 0
    কোথাকার ছবি কোথায় লাগিয়ে দিছেন ভাই?
    Total Reply(0) Reply
  • Mri Rafiqul Islam ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
    · একটি দেশের সরকারের দেশ শাটডাউন করার আগে অবশ্যই তার জনগনের ভালমন্দ চিন্তা করেই শাটডাউন করা উচিত। শুধু ধনী আর গরীবের চিন্তা সরকারের করা উচিত নয়। প্রত্যেক শ্রেণী পেশার মানুষের কথা সরকারের মাথায় রাখা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Zubaer Ahmed ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
    লকডাউন সফল করতে হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কে সাত দিনের খাবার এর যোগান দিতে হবে তাহলে ই লকডাউন সফল হতে পারে। এতে খুব বেশি খরচ হবে না এ কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করা উচিত হবে বলে মনে করি
    Total Reply(0) Reply
  • Naib Al Emran ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
    দিনমজুরদের সাত দিনের তিন বেলার খাবার নিশ্চিত করে লক ডাউন দিন। নইলে তারা অনাহারে মরবে। হুট করে কোনো কিছু তো আর বললেই হবেনা। এসির মধ্যে থেকে কঠোর বাস্তবতা উপলব্ধি করতে চাইলে হবেনা। লক ডাউন দিন সমস্যা নেই কিন্তু যারা দিন আনে দিন খায় আশা করি তাদের খাবারের দিকটি বিশেষভাবে ভেবে দেখবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Rana Taqi ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
    সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বন্ধ করে দেন। তারপর আজীবন লকডাউন দিলেও জনগণ তাহা মেনে নেবে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শাটডাউন

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ